1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
মৌলভীবাজারের ইতিকথা - মুক্তকথা
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারের ইতিকথা

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
  • ৫৮৭ পড়া হয়েছে
হারুনূর রশীদ

[সন তারিখ পুরো মনে রাখতে পারিনি। খুব সম্ভবতঃ উনিশ শ’সত্তুর বা একাত্তর বাহাত্তর হবে। ইত্তেফাকের ‘শহর-বন্দর-গ্রাম’ নামের পাতায় সর্বপ্রথম মৌলভীবাজারকে নিয়ে ইতিহাস ভিত্তিক একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। ইত্তেফাক তিন সংখ্যায় সেটি প্রকাশ করেছিল। আমার জানামতে এটি ছিল মৌলভীবাজারকে নিয়ে সর্ব প্রথম কোন লেখা। এর আগে আমি কোথায়ও কেউ লিখেছেন বলে পাইনি। কেবল আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন লিখেছিলেন। তখনও আমি তার সেই লেখা বা বই পড়ার সুযোগ পাইনি। সেই লেখা লিখতে গিয়ে আমাকে অনেক কিছু ঘাটাতে হয়। কিন্তু কোথায়ও মৌলভীবাজারের কোন তথ্য লিপিবদ্ধ পাইনি। মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরীতে মৌলভীবাজারের উপর ইংরেজীতে লিখা ছোট্ট একখানা বই রয়েছে, আমাকে বলেছিলেন সে সময়কার পাঠাগারিক প্রয়াত বোরহান উদ্দীন খান। কিন্তু বেশ পরে লাইব্রেরীতে সেই বইখানা খুঁজে পাইনি। বোরহান উদ্দীন খানই বলেছিলেন যে এডভোকেট এবাদুর রহমান সেই বইখানা দেখার জন্য নিয়েছিলেন। তিনি বইখানা আর ফেরৎ দেন নি। এবাদুর রহমান সাহেবের সাথে আমি যোগাযোগ করেছিলাম তিনি বলেছিলেন অনেক আগে তিনি বই আকারের ওই নিবন্ধটি ফেরৎ দিয়ে দিয়েছেন। যতদূর মনে আছে কোন এক সময়ের মৌলভীবাজারের ইংরেজ একজন এসডিও মৌলভীবাজারের উপর এটি লিখেছিলেন। সেই থেকে মৌলভীবাজার নিয়ে কিছু লিখার প্রয়োজনীয়তা অনুভবে আসে। তারই পথ ধরে অবশেষে ১৯৭৭ইং সনে মৌলভীবাজারের উপর “দক্ষিন সিলেটের পাঁচালী” বলে একখানা পুস্তক দাড় করাই। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের উপরও ছোট্ট একখানা বই লিখি। শুরু করেছিলাম আমার সাংবাদিকতার উপর অপর একখানা বই লিখার। আমার মুক্তকথা আর বই কয়েকখানা ছাপানোর তাগিদ থেকে নিজের বাসায় প্রতিষ্ঠা করি ছাপাখানা। মুক্তকথা প্রকাশ করতে থাকি। সে সাথে বই কয়েকখানার ছাপার কাজ শুরু করবো বলে সময় নিতে থাকি। কারণ প্রেসের কম্পোজের কাজের লোক বললেন বইয়ের কাজে হাত দিতে গেলে নতুন হলেও একজন কম্পোজিটর রাখতে হবে। ফলে নতুন কম্পোজিটর খুঁজতে থাকি পাশাপাশি সাংবাদিকতার উপর বইখানা শেষ করায় খুব মনোযোগী হই। কিন্তু সময় আমাকে এভাবে বিড়ম্বনায় ফেলবে ভাবতেই পারিনি। দূর্দিনের সে সমূহ ঘটনাপ্রবাহ  নিয়ে পুরাদস্তুর একখানা বিশাল আকারের কিতাব রচনা করা যাবে। সে এতোই দূর্ভাগ্যজনক ছিল যে বই ছাপানোর কাজে এই হাত দেবো দেবো করে সময় যাচ্ছে, এনমুনার গড়িমসির মাঝে ১৯৮৪সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় আমার সারা বাসা প্রায় ৮ফুট পানির নিচে ৪দিন ডুবেছিল। আর আমি ছিলাম ঢাকায়। ঘরে বউ ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। নিদারুণ বন্যায় আমার জীবনের সঞ্চিত সমূহ কাগজাদি, পাণ্ডুলিপি, বই-পুস্তক ও ছবি সমূহ একেবারে জীবনের জন্য ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ বন্যা আমার জীবনকে একেবারে তচনচ করে দেয়। এরপর আবারো নবোদ্যোমে শুরু করি খুঁজাখুঁজি সংগ্রহ। কিন্তু যে মানুষ চলে গেছে তাকেতো আর পাওয়া যায় না। যে ঘটনা অতীত হয়ে গেছে সে ঘটনাকেতো আর সামনে আনা যাবে না। যে ছবি ভেসে গিয়ে কোন অতল তলে ডুবেছে তাকেতো আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এসব জেনে বুঝেও শুধু নিজের মনের জোর আর কিছু করার তাগিদ থেকে বহু অর্থ, শ্রম ও সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে, নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুটা নিজের স্মরণ থেকে উদ্ধার এবং আরো কিছু বইপত্র ঘেটে আজকের এ উপস্থাপনা।]

হারুনূর রশীদ।।

মেট্রিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হয়ে সাংবাদিকতার প্রতি এক দূর্দমনীয় টান অনুভব করলাম। কেন এই টান তা আজ আর ব্যাখ্যা করে বলার সুযোগ নেই। স্কুল জীবন থেকেই লিখা-পড়ার চেয়ে নাটক, যাত্রা, গান-বাজনা, খেলা-ধূলা অর্থাৎ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম বেশী। ‘কাব স্কাউট’ থেকে শুরু করে ‘বয়েজ স্কাউট’এ অংশ নিয়েছি নিরন্তর। তারই সূত্র ধরে অনেক পরে ‘উডব্যাজ প্রাপ্ত হয়েছিলাম। স্কুলের ভেতরের পাঠ্যসূচীর চেয়ে বাইরের এসব কাজে আমি বেশী আনন্দ পেতাম।
আমার মনে আছে তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের অংকের শিক্ষক, অনেক আগেই প্রয়াত, শ্রদ্ধেয় সমরেন্দ্র চৌধুরী দুধে-পানি মিশানোর ঐকিক নিয়মের অংক শিখাতেন। সমরেন্দ্র স্যার খুবই গরম মেজাজের মানুষ ছিলেন। ছাত্রদের যেভাবে আদর করতেন ঠিক একইভাবে শাসনও করতেন। রোজ ভোরে তিনি প্রভাতে পায়ে হাটায় বের হতেন। আমি আমার ছোটভাই পিরুন, আমরাও প্রতিভোরে হাটতে বের হতাম। স্যারকে পেয়ে যেতাম। প্রতিদিনই স্যার বলতেন- দেরী করো না, কিছুটা হেটেই ঘরে গিয়ে পড়তে বসো।
একদিন তার দুধে-পানির অংকের ক্লাসে একটু দুষ্টুমি আর প্রবল জানার ইচ্ছায় বলেছিলাম-‘স্যার, দুধে পানি মিশালে দুধতো নষ্ট হয়ে যাবে!’ স্যার আমাকে দাড় করালেন। বললেন, তোর কথা ঠিক। কিন্তু তুই বাঁদরামো করার উদ্দেশ্যে এ প্রশ্ন করেছিস। সে জন্য তোকে হাটুভেঙ্গে(নিলডাউন) কিছুক্ষন দাড়াতে হবে। ‘নিলডাউন’ হো। সমর স্যারের শাস্তি মেনেতো নিতেই হবে। ভয় থাকতো, স্যারের কাছে কোন প্রশ্ন যদি বেশী দুষ্টুমি মনে হয় তা’হলে জালি বেতের তিন ঘা খেতে হবে। সেভয়ে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতে সাহসী হতো না। আমারও ভয় ছিল স্যার যদি মনে করেন ইচ্ছে করে তাকে চটানোর উদ্দেশ্যে আমার এই প্রশ্ন, তা’হলেতো বেতের ৩ ঘা হাতে নিতেই হবে। ‘নিলডাউন’ বলায় মনে মনে আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে স্যার প্রশ্নটিকে খুব খারাপভাবে নেননি। কিছুক্ষন পর আমাকে বসতে বললেন। তার পর বুঝালেন, দুধে কিছু পানি মেশাতে হয়। নির্দিষ্ট পরিমানের পানির মিশেল দিলে দুধে থাকা ঘি জাতীয় তৈলপদার্থের অনিষ্টকারীতা কমে আসে। সমর স্যারের সেই আদরের শাস্তির কথা আজও বিভিন্ন গল্পে-আড্ডায় আমার মনে পড়ে।
স্কুলের বার্ষিক খেলায় কিংবা বাৎসরিক নাটকে আমার অংশ থাকতোই। তখন প্রায় প্রতি বছর আমাদের শহরে যাত্রা হতো। প্রতিটি স্কুলে এবং কলেজে বাৎসরিক খেলা-ধূলা ও নাটক মঞ্চায়ন হতো। তখনকার দিনে শহরে বেশ কয়েকটি সংঘ সমিতি ছিল যারা প্রতিবছর নাট্যানুষ্ঠান করতো। ওগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতাম। বিশেষ করে দূর্গাপূজার সময় মৌলভীবাজারের সবক’টি চা-বাগানে চিরাচরিত প্রথানুসারে যাত্রাপালা মহাধুমধামে চলতো। আর প্রাক্তন সিলেট জেলার বর্তমানে বিভাগ, অধিকাংশ চা-বাগান মৌলভীবাজারে অবস্থিত তাই খুব কম যাত্রাপালাই আমার জীবনে দেখা থেকে বাদ পড়েছে। এতো যাত্রা দেখেছি যে আজ হিসেব দেয়া মুষ্কিল। যাত্রা, নাটক কিংবা সিনেমার মধ্যে ঐতিহাসিক বই আমার কাছে খুবই প্রিয়। ওখান থেকেই ইতিহাস পাঠের প্রতি ঝোঁকের জন্ম। সম্ভবতঃ ওই ঝোঁক থেকেই জ্ঞান পিপাসা নিবৃত্তির মাধ্যম হিসেবে সাংবাদিকতার প্রতি আকৃষ্ট হই। যাত্রা দেখতে গিয়ে একদিকে যেমন পরিচিত হয়ে উঠি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে তেমনি চা-শ্রমিকদের সাথেও গড়ে উঠে এক দূর্লভ সখ্যতা। যে ঘনিষ্টতা পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে শ্রমিক সংগঠনে কাজ করতে আমাকে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করেছিল।
স্কুল জীবন থেকেই কচি-কাঁচার সাথে জড়িত হয়ে পড়ি। পরিচিত হই দাদা ভাইয়ের সাথে। কুমিল্লার মোস্তাফা ভাইয়ের সাথে। সেই পরিচয়ই ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার সুযোগ করে দেয়। ইত্তেফাকের বদৌলতে সিরাজউদ্দীন হোসেনের সাহচর্য্য কিছুটা পেয়েছিলাম। আসফউদ্দৌলা রেজাভাইকে পেয়েছি ঘনিষ্ট শিক্ষকের মত। রমেনবাবু বলে সদা হাস্যমুখের এক ভদ্রলোক মফঃস্বল ডেস্কে কাজ করতেন। তারও সাহচর্য্য পেয়েছি। পরে তিনি গণকন্ঠে যোগ দিয়েছিলেন। আইএ পাশ করার পর ইত্তেফাকের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র পাই। এরপর একটানা তেইশ বছর ইত্তেফাকের সাথে কাজ করেছি। একই সাথে আমি দি নিউ নেশন, পূর্বাণী ও রোববার-এর মৌলভীবাজারস্ত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। ইত্তেফাক সংবাদদাতা সমিতির আমি সহসম্পাদক ছিলাম দীর্ঘদিন। বাংলাদেশ সংবাদদাতা সমিতিরও সহসাধারণ সম্পাদক ছিলাম বহু বছর। এই সুবাদে বাংলাদেশের বরেণ্য সাংবাদিকদের সাথে পরিচিত ছিলাম। ফটো সাংবাদিক রশিদ তালুকদার ভাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির আমি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সভাপতি ছিলাম। (চলবে)

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT