আব্দুল ওয়াদুদ
মৌলভীবাজার: মঙ্গলবার, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।।
দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে মৌলভীবাজার পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার ভূমি জবরদখলে পরে আছে। জানা যায়, পৌরসভার অধিনে আছে মৌজাস্থিত পশ্চিমবাজারে অবস্থিত ১৩৬৫ নং দাগে ২৩টি প্লট এবং ১২৭০ দাগে বেরী লেইকে অবস্থিত প্রায় ১৫ একর ভুমি। বেরিলেইকের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা। পশ্চিমবাজারে ১৩৬৫ নং দাগের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
এখানকার বেদখলী ভূমি উদ্ধারের জন্য পৌরসভার তেমন কোন উদ্যোগ নেই। এই ভুমি কবে কারা কখন দখল করেছে এ ব্যাপারে পৌরসভা ওয়াকিবহাল নয়। বর্তমানে লেইকটির স্নানঘাট বাদে সিংহভাগ জমি বেদখলে। দীর্ঘদিন যাবৎ বেরীর উত্তরপাড় দখল করে পাঁকা স্থাপনা নির্মান করে লোকজন বসবাস করছে। পূর্ব পাড়েও একই অবস্থা বিদ্যমান এবং দক্ষিণ পাড়ের স্নানঘাট ও কিছু ভূমি বাদে অবশিষ্ট ভুমি জবরদখলে। এসব দখলি ভূমিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
সর্বশেষ ২০০০ সালে বেরীলেইকের দাগস্থিত শহীদ মিনার বাদে পুরোটাই জনৈক ব্যক্তি দখল করে নেয়। একইভাবে পৌরসভার মৌজাস্থিত পশ্চিমবাজারে ১৩৬৫ দাগের ২৩টি প্লটের মধ্যে ১টি বাদে অবশিষ্ট প্লটগুলি পৌরসভার দখলে আছে। অবশিষ্ট ১টি প্লট কোন অবস্থায় আছে খুদ পৌরসভারও জানা নাই। লেইকের পশ্চিমপাড় বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাবলে বিক্রি করে দেয়। মৌলভীবাজার শহরের প্রান কেন্দ্র শাহমোস্তফা সড়কে অবস্থিত ১২৭০ দাগে এই বেরীলেইক। ৫০ লক্ষ জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত এই শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। বেরীলেইক এর পাশ দিয়ে ঢাকাগামী দূরপাল্লার সকল যানবাহন যাতায়াত করায় দৃষ্টিনন্দন হিসেবে বেরীলেইক সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে। লেইকটি জবরদখলের পাশাপাশি সীমাতিরিক্ত পানি দূষিত হওয়ায় স্থানীয়রা এর পানি ব্যবহার করে নানাধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে লেইকটিকে সংস্কার করে এখানে একটি শিশুপার্ক স্থাপন করতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন লক্ষণই নেই। এব্যাপারে পৌরসভার সচিব আমিনুল ইসলামের সাথে আলাপে তিনি জানান, পশ্চিমবাজারের ভূমি দখলের ব্যাপার তার জানা নেই আর বেরিলেইকের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা যখন পরিকল্পনা মাফিক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো তখন ওই অবৈধ স্থাপনা থাকবেনা।
পৌরসভার নির্বাহি প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, বেরিলেইকের মুল মালিক জেলা প্রশাসক। ২০ একরের চেয়ে কম ডিসির খতিয়ানভুক্ত খাস ভূমি এটি। জলমহাল হিসেবে পৌরসভা, ডিসির কাছ থেকে এনে মাছ চাষ করার জন্য ভোগ করে আসছে। জবরদখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, কতটুকু জবরদখল হয়েছে সার্ভেয়ার ছাড়া কেউ বলতে পারবেনা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার খাঁন বলেন, বেরিলেইকে একটি শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ শহিদদের সমাধিস্থ করা হয়েছে এখানে। ওই শহিদদের তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রিকফিল্ডে (বর্তমান সৈয়ারপুর স্মশানঘাটে) সরাসির গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। ওই ব্রিক ফিল্ডটি ও বর্তমানে প্রভাবশালী কিছু মহলের ছত্রছায়ায় স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। লেইকের ডানে-বামে এক প্রভাবশালী মহল দখল করে পবিত্র স্থানকে অপবিত্র করছে। লেইকের চতুর্পাড়ের ওই সব জবরদখলকৃত অবৈধ স্থাপনা ও পবিত্র স্থানটি যাতে রক্ষা করা যায় এজন্য উক্ত কমান্ডার প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
নবনির্বাচিত মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ বেরীলেইক ও কোদালী ছড়া বেদখলে আছে। উক্ত ভূমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। পশ্চিমবাজার মার্কেটে ভুমি বেদখলের বিষয়টি আমার জানা নাই।