মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। শ্বাশত কাল ধরে মনু বাহিত জলধারায় আমরা যারা উজ্জীবিত, যে পলিল মাটির পড়তে পড়তে রয়েছে লক্ষ বছরের ইতিহাস, যেখান থেকে শুরু হয়েছে আমাদের জীবনের পথচলা, যে মাটিতে গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজার তথা মলইবাজার; আমরা আমাদের এ জন্ম মাটিকে গড়ে তুলতে চাই আমাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে মনুষ্যবসবাসের এক অভয় নিকেতনে। আর এই মানসেই আমাদের পথ চলা।
আমরা সকলেই অবগত আছি যে ২৭৯৯বর্গকিলোমিটারের মৌলভীবাজার জেলাকে চায়ের রাজধানী বলে অবিহিত করা হয়। তিনদিকে পাহাড় ও একদিকে উদার খোলা হাওরের সৌরভে মোহিত হয়ে এ এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। প্রকৃতির অফুরান সম্পদে ভরপুর অযুত-লক্ষ মানুষের বিভিন্নমুখী কর্মপ্রচেষ্টায় গড়ে উঠা আমাদের এ পবিত্র মাটির পরতে পরতে রয়েছে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনচেতা বহু মানুষের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রায় ২৫লাখ মানুষের আবাসভূমি আমাদের মৌলভীবাজার তার ন্যায্য দাবীদাওয়ার খাতে খুবই অবহেলিত এক সংকটময় সময় কাটাচ্ছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী সময় চলে গেছে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি স্বাধীনতা লাভ করেছে। দীর্ঘ এ সময়ে মৌলভীবাজার শুধু জেলার গৌরব অর্জন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়নের স্বাদ পায়নি। উন্নয়নের কিছুই হয়নি এমন কথা আমরা বলছি না। তবে স্বাধীনতার পর যেসব উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তার বহু কিছুই যে এখনও হয়নি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
অতীতের পাকিস্তানী আমল থেকেই মৌলভীবাজারে রেল সংযোগের দাবী উঠেছে বার বার কিন্তু আজো তার কোন লক্ষনই দেখা যায়নি।
পর্যটননগরী হিসেবে ডাকা হলেও আজও মাধবকুণ্ড বা হাম হাম জলপ্রপাতে নির্বিবাদে ভ্রমণকারীদের যোগাযোগের কোন নিরাপদ ব্যবস্থাই হয়নি। থাকার সুব্যবস্থা সুদূর পরাহত!
আমরা জানি, আমাদের পাকারাস্তার পরিমান মাত্র ৬১.৯৩ কিলোমিটার, যেখানে কাঁচা রাস্তার পরিমান ২,৬৭৫ কিলোমিটার(২০১১সালের হিসাব)। আজো মিরপুর থেকে সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল হয়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে সিলেট রাস্তা পূর্ণমানের ‘হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মিত হয়নি।
আমাদের খাস জমির পরিমান ৩৫,১০০.৪৯ একর। এরপরও স্থানের অভাবে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর অন্যত্র চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মৌলভীবাজারে একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা স্থানীয়গন ও প্রবাসীরা অনেক দিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আজ অবদি তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে এই দুটি প্রতিষ্ঠান আমাদের জেলার উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়টি সকলেরই জানা যে, মনু, ধলাই, সোনাই, ফানাই, কন্ঠিনালা, জুড়ি ও বিলাস নদী নামে আমাদের ৭টি নদী রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের এ নদীগুলোর বিগত হাজার বছরেও কোন খননকাজ হয়নি। ফলে প্রকৃতির দান আমাদের সৌভাগ্য বলে খ্যাত এ নদীগুলি ভরাট হয়ে গিয়ে এখন দুঃখে পরিণত হয়েছে। মাত্র ১৭০ মাইল জলপথের এ নদীগুলোর আশু খনন অতীব প্রয়োজন।
হাকালুকি, কাউয়া দিঘী ও হাইল হাওর আমাদের এ তিনটি হাওর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ভূমি লুটেরাদের খপ্পরে পড়ে। বন্দোবস্তের নামে হাইল হাওর বর্তমানে বিলীন হবার পথে।
আজো আমাদের সমশের নগর বিমান বন্দর চালু হয়নি। পূর্ণ সরকারী উদ্যোগে এ বিমানবন্দর চালু হলে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি বহু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হতো।
আমাদের ৯২টি চা-বাগান, বছরে ৩কোটি ২০লাখ ৫১হাজার ৫০০কেজি চা উৎপাদন করেও এখানে স্থায়ীভাবে চা-নিলামের কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। পাশাপাশি চা-শ্রমিকগন উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না। তারা এখনও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ভাটেরা গ্যাসফিল্ড ও কালাপুরের ইউনিকল চালিত গ্যাস ফিল্ড, দু দু’টি গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন অবস্থা কিংবা কোন অবস্থায় আছে, আমরাই কি পাচ্ছি আর জাতীই বা কি পাচ্ছে তার বিষয়ে কেউ জানে না।
তাই সরকার সমীপে সবিনয় আবেদন আমাদের বাস্তবসম্মত প্রাণের এই দাবীগুলো পুরণ করতে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবেন।