লন্ডন: মঙ্গলবার, ২৫শে পৌষ ১৪২৩।। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে শর্ষীনা পীরের আস্তানা। একাত্তরে সেখানে গডিনসিন পীর ছিলেন সৈয়দ আবু জাফর সালেহ। একাত্তরে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করেননি, পাক সেনাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে ফতোয়া দিয়ে হিন্দু নারীদের ‘মালে গনিমত’ আখ্যা দিয়েছিলেন এবং পাকসেনা ও রাজাকারদের হিন্দু নারী ভোগ করবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা বিরোধী সেই শর্ষীনা পীরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক’ দিয়েছিলেন স্বৈরশাসক জে. জিয়া।
এমনি এক কঠিন অভিযোগ এনে অনলাইন “একাত্তর”-এ লিখেছেন প্রবীর সিকদার। নামের কারণে বিষয়টি একজন হিন্দুর ধর্ম বিদ্বেষ থেকে লেখা হয়েছে এমন না ভেবে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি ঘটনার সত্যতা কতটুকু। প্রবীর সিকদারের ছোট্ট এ নিবন্ধটি পড়ে আমরা ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছি ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের কোন অবকাশ এখানে নেই। এটি সত্য ঘটনা। প্রবীর সিকদারের মত আমাদেরও প্রশ্ন এই পীর মাওলানারা যারা ভয়ে হোক আর ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা জেনে হোক এরা মানবতা বিরোধী জঘণ্য অপরাধ সংগঠিত করেছিলেন। অতএব দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আর সুস্থ জ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকারে এদের যথোপযুক্ত বিচারের আওতায় আনতেই হবে। সভ্য সুশীল সমাজ এ বিধানই দেয়। প্রবীর সিকদারের নিবন্ধটি তাই হুবহু এখানে উপস্থাপন করলাম।
একাত্তরে শুধু যে সৈয়দ আবু জাফর সালেহর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিল তা নয়, তার ছেলে বর্তমানে শর্ষীনার গদিনসিন পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধেও রয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ। হিন্দু বাড়িতে লুটপাট করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কাজী মতিয়ার রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ। শরীরের চামড়া ও মাংস আলাদা করে বীভৎস কায়দায় খুন করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ারকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর দাবি উঠেছিল, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শর্ষীনার বর্তমান গদিনসিন পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহর বিচার করতে হবে। ওই বিচারের দাবি ওঠার পর পরই পিরোজপুরের এক এমপির বিশেষ আগ্রহে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি শর্ষীনা পীরের আস্তানায় আতিথ্য গ্রহণ করেন। তারপর থেকেই রহস্যজনকভাবেই উধাও হয়ে যায় পীরের বিরুদ্ধে ওঠা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের গুরুতর অভিযোগ।
এইভাবেই কি পার পেয়ে যাবেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগবিদ্ধ শর্ষীনার বর্তমান গদিনসিন পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ? অবশ্যই নয়। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে , দেশের একজন যুদ্ধাপরাধীও রেহাই পাবে না। তাদের বিচার ও শাস্তি হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। শুধু বিচার নয়, দেশের বাঘা বাঘা যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায়ও কার্যকর করেছেন। সেই বিচার চলছেই। আমি গভীরভাবেই বিশ্বাস করি, শর্ষীনার বর্তমান গদিনসিন পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত হবে এবং অপরাধী হলে রেহাই পাবেন না তিনিও। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধী তার বাবা পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রত্যাহার করা হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের একজন রাজাকার তথা একাত্তরের একজন যুদ্ধাপরাধীকেও ক্ষমা করবেন না, তিনি সেটা করতে পারেনও না।