রাস্তার আরসিসি ঢালাই কাজে ধীরগতি ও অনিয়মের কারণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বাজারে যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সর্বসাধারণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অতিষ্ঠ। পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি স্থানীয় নাগরিকরা। ২০২১ সালে পহেলা নভেম্বর শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কে ৩ কি.মি. আরসিসি ঢালাই, একটি পিসি গার্ডার সেতু ও ১৩টি কালভার্ট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। তবে ধীরগতিতে চলা রাস্তার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। পাশাপাশি যানবাহনের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সর্বসাধারণ।
সওজ সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প(সিলেট জুন) এর আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজারের বাস্তবায়নে ২০২১ সালের পহেলা নভেম্বর রাস্তায় আরসিসি ঢালাই ও ১৩টি কালভার্ট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। উদ্বোধনের পর সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার গড়িমসি করে এক বছর পর শুরু করে কাজ। রাস্তার নিচের মাটি না খুড়েই উপরে প্রায় এক ফুট পরিমাণ উচুঁ করা হচ্ছে। এতে বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমুহের চেয়ে রাস্তা এক ফুট উপরে উঠেছে। তাতে বর্ষার সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে। ঢালাই ও কালভার্ট পুণ:নির্মাণ কাজের কারণে জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কাজের সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না এবং ড্রেন নির্মাণেও স্বজনপ্রীতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। কাজ কিছু করার পর আবার বেশ কিছুদিন ফেলে রাখা হয়। একারণে শমশেরনগর বাজারের ভেতরে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের।
শমশেরনগর বাজারের ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার মুর্শেদুর রহমান, ব্যবসায়ী কামরুল হাসানসহ স্থানীয় সচেতন মহল জানান, রাতের আঁধারে কাজ করার কারণে ঢালাই কাজে পরিমাণ মতো রড, সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে না। ইচ্ছেমতো কাজ করা করা হচ্ছে। শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে ভানুগাছ সড়কের কোন অংশে ড্রেন নেই। চৌমুহনা থেকে বিমান বন্দর সড়কের একপাশে ড্রেন নির্মাণেও কিছু কিছু দোকানের সম্মুখে ছাড় দেয়া হয়েছে। সিডিউল, ইস্টিমিটসহ কাজের কোন তালিকাও নেই। দেখভালের জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। অভিযোগ বা কোন সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আসেন। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষুব্দ।
শিক্ষক জমশেদ আলী, এডভোকেট মো: সানোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান, শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাসিফসহ স্থানীয়রা বলেন, বাজারের ভেতরে কিছু কাজ করে ফেলে রাখা মোটেও বোধগম্য নয়। সড়ক দিয়ে হেঁটে চলারও ব্যবস্থা নেই। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি নিয়ে আটকে থাকতে হচ্ছে। বাস-ট্রাক, সিএনজি-অটো ও ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হাজার হাজার মানুষ। হাজীপুর, শরিফপুর, কামারচাকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ শমশেরনগরে আসার সময় এই সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
শমশেরনগর রহিম ম্যানশন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও পথচারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ‘সকালে বিভিন্ন যানবাহন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে বের হয়েই বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড় করিয়ে রাখে। যাত্রীর আশায় চালক গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বসে থাকে। সিএনজি অটোরিকশাগুলোরও একই অবস্থা। যাত্রীর জন্য রাস্তা দখল করে বসে থাকে। তারা আরও বলেন, বাজারের ভেতরে রাস্তার জায়গা দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এগুলোও দেখার কেউ নেই।
সুজা কলেজের প্রভাষক শাহাজন মানিক বলেন, যতদিন যত্রতত্র অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড ও ভবনগুলোর সামনে গাড়ি পার্কিং আর রাস্তায় বসে ব্যবসা থাকবে ততদিনই যানজটের কারণে অবর্ণনীয় কষ্টে ভুগতে হবে আমাদের।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শামীম আকনজী জানান, ‘যানজট নিরসনে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। বিশেষ করে বর্তমানে রাস্তায় কাজ হওয়াতে এসব যানজটের পরিমান বাড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা সড়ক ও জনপথ অফিস, সড়ক বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারি প্রকৌশলী(অ:দা:) আরিফ হোসাইন বলেন, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোন সুযোগ নেই। কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে। তবে সড়কে কাজের কারণে যানচলাচল ও জনসাধারণের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তাছাড়া শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে ভানুগাছ সড়কের পার্শ্বে কোন জায়গা না থাকায় ড্রেন নির্মাণ করা যায়নি। সড়কের পাশের জায়গাগুলো চা বাগানের বলে তিনি জানান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, মৌলভীবাজারের এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন বলেন, রাস্তার মাটির লেভেল থেকেই ঢালাই করে উপরে উঠার কথা। সব স্থানে ড্রেন হওয়ার কথা নয়। যে যে স্থানে ড্রেনের কথা রয়েছে সেসব স্থানে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈদ থাকার কারণে শ্রমিকরা ছুটিতে যাওয়ায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।