মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। এমনও হতে পারে? এটি বিশ্বাস করতে মন চায় না। এরকম বিবেকবুদ্ধী বর্জিত দায়ীত্বহীন কাজ কি করে সম্ভব! প্রকাশ্যে এমন দায়ীত্বহীন ও দূর্ণীতিপরায়নতার খবর সারা বাংলাদেশে এটিই মনে হয় প্রথম। দেশের আর কোথায়ও এমন অপরাধমূলক কাজ বিগত আটচল্লিশ বছরে সংঘটিত হয়েছে বলে জানা নেই। অথচ বাস্তবে সেরকমই একটা কিছু ঘটে চলেছে মৌলভীবাজারে মনুনদী খনন নিয়ে। কাজ শেষ হওয়ার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে কাজই এখনও শুরু হয়নি। কাজটি ছিল মনুনদী খননের কাজ। অযোগ্যতার এমন প্রমাণ দেখানোর পর সারা দেশের আর কোথায়ও পাড় পেয়ে যাবে এমন সাহস কেউ করবেই না। আর এ নিয়ে আদ্যোপান্ত ঘটনার মর্ম উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করেছে ‘জাগোনিজউ২৪.কম’।
জানা যায়, ফি বছর বন্যাকবলিত এলাকা মৌলভীবাজারে মনুনদীর ২৩ কিলোমিটার নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়াধীন বিআইডব্লিউটিএ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা শুরুই হয়নি! এলাকার অভিজ্ঞ মানুষজন মনে করছেন, কাজ না করিয়েই টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে মেয়াদ শেষ হবার সময় এসে গেলেও এখনও কাজ শুরু করেনি ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য, বর্ষা মৌসুমে পানি চলে আসলে প্রমাণ করা যাবে না যে কাজ হয়েছে নাকি হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএ-এর স্থানীয় অফিস না থাকায় দীর্ঘদিন মনু খননের এমন তথ্য লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বিআইডব্লিউটিএ-এর পক্ষ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান মণ্ডল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি তাদের কাছে আসে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় বিআইডব্লিউটিএ-এর একটি প্রকল্পের আওতায় ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মনু নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে এবং শেষ হবে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ওই কাজে বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। সেই চিঠির পর প্রায় ১বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
মৌলভীবাজার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, সহযোগিতা চেয়ে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে চিঠি দিলেও এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেনি বিআইডব্লিউটিএ। তিনি আরও বলেন, আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। প্রকল্পটি বর্তমানে কোন অবস্থায় আছে কিংবা কি করা হচ্ছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুই জানেন না।
মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেছেন, এ অঞ্চল প্রতি বছরই বন্যাকবলিত হয়ে থাকে। গতবারের বন্যার এক বছর হয়ে গেল এখনও কোনো কাজই বিআইডব্লিউটিএ শুরু করেনি। যাদের গাফিলতির জন্য এই টাকাগুলো ফেরত যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
বালু মহাল ইজারাদারদের কারনে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি এমন একটি খুঁড়া যুক্তি দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর সহকারী প্রকৌশলী জনৈক সমিরন পাল জানান গত বছর মে মাসে কাজ শুরু করতে গিয়েও করা যায়নি বালু মহল ইজারাদারদের কারণে এর পর পরই আসে বন্যা। নানাভাবে কাজটি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
‘জাগোনিউজ২৪.কম’ লিখেছে- এদিকে সরেজমিনে মনু নদীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও ড্রেজিংয়ের কাজ দেখা যায়নি। তবে দু’টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে জানিয়ে গতকাল থানায় জিডি করেছে পাউবো মৌলভীবাজার অফিস।
বলতে গেলে কাজের সময় শেষ হয়েই গেছে, কিন্তু এখনও শুরুই হয়নি মৌলভীবাজারে মনু নদী খননের কাজ। এমন দূর্ণীতি মৌলভীবাজারে এই প্রথম, দেখছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ। তারা মনে করেন নির্ধারিত সময়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর দ্বারা কাজ শুরু না করার পেছনে গাফিলতিতো আছেই বরং তার চেয়ে বড় হয়ে ধরা পড়েছে তাদের ক্ষমাহীন দুর্নীতি।