লন্ডন: রোববার, ১৬ই পৌষ ১৪২৩।। অবস্থায় মনে হচ্ছে এবার পশ্চিমী বিশ্ব সোদিদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টায় বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর খুঁজছেন। আর এর মূল কারণ অতি পুরাতন সেই তেল আর সোনার ব্যবসা। এর সাথে আধুনিক সময়ে এসে যোগ হয়েছে হজ্জ্ব ব্যবসা।
সাম্প্রতিক নিউইয়র্ক টাইমস এর গত ২৮ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন পড়ে আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর মক্কায় হজ্জ্বের সময় যে দূর্ঘটনা ঘটে তাতে ২৪০০জন হাজী মারা যান বলে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ দাবী করে। তাদের এ হিসাব অশব্য জাল-জালিয়াতী কিছু নয়। এ হিসেব তারা পেয়েছেন এপি সংবাদ সংস্থা থেকে। এপি এই হিসেবের সূত্র দিয়েছে ওই সময়ের ঘটনার পর পরই মৃতদের স্ব স্ব দেশের সংবাদপত্র তাদের মানুষের মৃতের যে পরিমান দেখিয়েছিল সে’টি ও ওইসব দেশের সরকারগন মৃতের যে সংখ্যা দাবী করেছিলেন সেই সংখ্যা থেকে। সৌদি সরকার কিন্তু ৭৬৯ জন মারা যাবার কথা বলে আসছে তখন থেকেই। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ঘটনার সময়তো খবর দিয়েছিলই এর পর গত ডিসেম্বরে বর্ষপূর্তির মত খবরটি আরো গবেষণা আরো খুঁজখবর নিয়ে খুবই তথ্য সমৃদ্ধ করে পত্রস্ত করেছিল। তাদের ওই নিবন্ধে তারা খুব যৌক্তিকভাবে আলাপ করেছেন।
তাদের ওই যৌক্তিক বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকেই ব্যবসার হিসেব তুলে ধরেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। ওই নিবন্ধে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ হিসেব দিয়ে বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হজ্জ্ব পরিচালনার দায়ীত্ব সৌদি রাজপরিবারের হাতে যাবার পর এখন পর্যন্ত হজ্জ্ব ব্রত পালনার্থীদের সংখ্যা আগের তুলনায় ১০গুন বেড়েছে। প্রায় কমবেশী ২-৩ মিলিয়ন মানুষ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে হ্জ্জ্ব পালনে এসে থাকে। খুব সাবধানের সাথে তারা আয়োজনের ত্রুটী তুলে ধরেছেন সেখানে। আমেরিকার হাজী সিদ্দিকী বলছেন তিনি অগোছালো এবরো-থেবরোভাবে টাঙ্গিয়ে দেয়া তাবুমালার মধ্যদিয়ে হাটছিলেন। তারপর ২০০৬ সালে জমরত সেতুর কাছে এক দূর্ঘটনায় ৩৬০জন হাজী মারা গিয়েছিলেন ইত্যাদি। শুধু ইরাণ নয় যেকোন দেশ ও মানুষই এধরনের নারকীয় হত্যাকান্ডের নিন্দা করবে। এটাই স্বাভাবিক। সেখানে খুব মোলায়েমভাবে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ইরাণকে শিয়া প্রতিদ্বন্ধী দাড় করিয়ে বলেছেন যুক্তি দেখিয়েছেন যে এতো বিশাল একটি আয়োজন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত একটি আন্তর্জাতিক পরিষদের কাছে থাকাই বাঞ্চনীয়। এর পরেই অনেকটা অনুযোগের সুরে লিখেছেন- কিন্তু সৌদি রাজপরিবার তাদের পরিবারের হজ্জ্ব পরিচালনার দাবী থেকে সরে আসতে রাজী নয়।
এর আগে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কৌশলী ভুমিকায় হিসেব দেখিয়ে তারা লিখেছেন- সৌদি রাজপরিবার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছেন কিন্তু তা সাধারণ হাজীদের জন্য নয় বরং ধনীক শ্রেণীর জন্য। যারা রাত পিছু ২,৭০০ ডলার খরচ করে হজ্জ্ব আনন্দ উপভোগ করার অভিপ্রায় রাখে তাদের নির্মল আনন্দোপভোগের লক্ষে না-কি সৌদিরা অর্থ খরচ করে যাচ্ছেন।
এখানেই শেষ নয়, গত ১৯শে ডিসেম্বর ‘দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ একটি মানবাধিকার সংস্থার গবেষণার বরাত দিয়ে খবর দিয়েছে যে সৌদি সরকার এ বছরের শেষে বিদেশীসহ ১৫০ জনের শিরোচ্ছেদাদেশ কার্যকর করবে। এদের অনেকেই রাজনৈতিক বিরুধীতার শিকার।
সৌদিদেরও বলিহারি তাদের সাহস! খোলা যায়গায় এই শিরোচ্ছেদ বন্ধ করে দিয়ে পরিবর্তে ফাঁসী রাখলেও তো পারেন। আর এতোবড় একটি দূর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানী হয়েগেল। অথচ কেনো তারা যে, একটি মামুলি তদন্ত কমিটি গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করলেন না তা আমাদের অবোধগম্য। তদন্ত হলে কি হতো? দায় ও দায়ীত্ব সোদিদের উপর পড়তো। এইতো? কিন্তু নিরপেক্ষ তদন্তে না গিয়ে সৌদিরা কি সে দায়ীত্ব থেকে রেহাই পেয়েছেন না-কি পাবেন। কখনও এ হয় না। এ কোন ধরনের রাজনীতি আমরা বুঝিনা। আমাদের কাছে এগুলো কূটকৌশল নয় বরং বে-আক্কেলের অট্টহাসি বলেই মনে হয়। যা হজ্জ্ব ব্যবস্থাপনার নামে আগাগোড়াই পবিত্র হজ্জ্বকে একটি ব্যবসায় মিলিয়ে নেয়ার পায়তারা। সৌদিরাও সেই পায়তারাই করছেন না তো?