মৌলভীবাজার অফিস।। মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের ৫দিন পর মৌলভীবাজার শহরের বেরীরচর এলাকা থেকে বুধবার দুপুরে সেলিনা বেগম(৫০) নামের কাপড় ব্যবসায়ী ফেরিওয়ালা মহিলার অবশিষ্ট মস্তক উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সাথে ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায় গত শুক্রবার রাতে (১৯ জানুয়ারী) সেলিনাকে হত্যা করে মস্তক বিহীন অবস্থায় একটি বস্তায় ভরে বেরী লেইকের পাশে চরে ফেলে রাখে। শনিবার দূপুরে এলাকাবাসি মুখ বাঁধা বস্তা দেখে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আফসার হোসেন জুনাক নামের এক জনকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে। জুনাকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বেরীলেইক থেকে পলিথিন দিয়ে মুড়ানো অবস্থায় সেলিনার মস্তক উদ্ধার করা হয়। জুনাকের বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম সাইফুল ইসলাম। সে লাশ উদ্ধার হওয়া ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের ৩ তলায় তার মা জোৎস্না বেগমসহ পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকত। জানা যায় নিহত সেলিনা ফেরি করে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য বাসা থেকে বের হন। এরপর তাকে খোঁজে পাচ্ছিলনা পরিবার। বেরীরচর এলাকায় পাওনা ৪৫হাজার টাকা আদায় করতে গেলে তাকে হত্যা করে পৃথক ভাবে মস্তক ও দেহ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে লেইকের ভেতর ফেলে দেয়া হয়।
এই ঘটনার পর সেলিনার পরিবার জানায় বেরিরচর এলাকার জোৎস্না বেগম দুই বছর আগে জোনাকী স্টোর নামে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করতে সেলিনা বেগমের কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা ধার নেন। এবং কাপড়ের লেনদেন বাবত জোৎযা বেগমের কাছে ৪৫ হাজার টাকাও পাওনা ছিল। পাওনা টাকার বিষয় নিয়ে জোৎযার সাথে সেলিনার একাধিকবার ঝগড়া হয়েছে। ঘটনার আগের দিন শুক্রবার বিকালে পাওনা টাকা আনতে জোৎযা বেগমের বাসায় গেলে আবারও ঝগড়া হয়। সেলিনা বেগমের পরিবার প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল এই হত্যা কান্ডের সাথে জোৎযা বেগমের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জোৎযা বেগমের ছেলে জুনাকের স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দিতে এই ধারনা মিলে যায়।
জানা যায় মৃত মো: খালিক মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম ২৬ বছর ধরে মৌলভী বাজার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফেরী করে কাপড় বিক্রি করতেন। শুক্রবার দুপুরে বাকীর টাকা তুলতে খাতা নিয়ে বাসা থেকে বের হলে আর ফিরে আসেননি। পরে অনেক খোঁজাখুজির পর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর শহরের বেরিরচর এলাকা থেকে সেলিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় নিহত সেলিনা বেগমের ছেলে আলম বাদীয় হয়ে মৌলভী বাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি(তদন্ত) নজরুল ইসলাম বুধবার রাতে জানান, গত শনিবার সকালে শহরের বেরির চর এলাকায় বস্তার ভেতর পলিথিন দিয়ে মুড়ানো মস্তক বিহীন এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। আটককৃত আফসার হোসেন জুনাকের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি ও তথ্যমতে তার মস্তক উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকাল থেকে জুনাকের দেখানো স্থানে মস্তক উদ্ধার অভিযানে ঘটনাস্থলে নামে পুলিশ। পরে বেরীলেইকে জাল ফেলে খোঁজাখুজি করে মিলে সেলিনার মস্তক। টাকার জন্য হত্যা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি সঠিক নয়। এখন সে পুলিশকে যা বলছে তা আমাদের কাছে অন্যরকম মনে হচ্ছে।