হিমেল শীতের সন্ধ্যায় কেমডেনে জমে উঠেছিল
বাঙ্গালীর পিঠা উৎসব
হেমন্তের শেষ আর শীতের শুরু। অগ্রহায়নের শেষে শীতের শুরুতেই কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠে। এটি বৃহৎ বাংলায় আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে। ঠিক এ সময়ই নতুন ধানের নতুন চালে ধুম পড়ে যায় পিঠা তৈরীর। নতুন চাল দিয়ে বানানো হয় হরেক রকমের পিঠা। তারই সূত্র ধরে লণ্ডনের কেমডেন শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশের বাঙ্গালীগন ছোট্ট এক আয়োজন করেন, নাম দেন “পিঠা উৎসব”।
একটু দেরীতে হলেও শীতের শুরুতে গেলো রোববার ২পৌষ ১৪৩২বাংলা অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে ” কেমডেন বাঙ্গালী রেসিডেন্টস এসোসিয়েশন”(কেমডেন বাঙ্গালী আবাসিক সমিতি) তাদের ভাষাশিক্ষা ও গবেষণা প্রকল্প “মুক্তকলি”র মাধ্যমে আয়োজন করেন এ পিঠা উৎসবের। হরেক রকম পিঠার ডালি সাজিয়ে রাখেন আগত অতিথিদের আপ্যায়ণের উদ্দেশ্যে। মাত্র ১পাউণ্ড অনুদানের বিনিময়ে ৫পর্বের আয়োজন উপভোগের সুযোগ করে দেন আয়োজকগন। দেড়শত আসনের প্রমোদকক্ষ কানায় কানায় ভরে উঠে দর্শকের ভীড়ে।
![]() ছবিতে মুক্তকলির কর্মসহযোগীদের দলবেঁধে ছবি তুলতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: মুক্তকথা |
কেমডেন শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সময়ের সাক্ষী ‘দি থেনেট ইয়োথ এণ্ড কম্যুনিটি সেন্টার’-এ আয়োজিত উক্ত পিঠা উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লণ্ডনে বসবাসকারী বাংলাদেশের প্রাক্তন হাই কমিশনার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিক গিয়াস উদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. আবু তাহের মিয়া, প্রাক্তন কাউন্সিলার আব্দুল আজিজ তকি, কাউন্সিলার পারভেজ আহমদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দিন হিসেবে দেখেন এবং ওই চোখেই পালন করেন। লন্ডন মহানগরের কেমডেন শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশীগন উদযাপন করলেন, নতুন ফসল কেটে শষ্য ঘরে তোলে আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে নতুন ফসলের খাবার তৈরী করে ভোগ যা’কে জাতীয়ভাবে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী “পিঠা উৎসব” বা “পিঠা মেলা” আখ্যানে উৎসব পালন করেন।
![]() ছবিতে শিল্পী সানজিদা কামাল শেফালি, মোহাম্মদ সোহেল ও নওশের খানকে সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: মুক্তকথা |
সবকিছুর পরও তাদের আয়োজন ছিল প্রানোবন্ত। ‘কেমডেন রেসিডেন্টস এসোসিয়েশন’ নামের স্থানীয় ভিত্তিক এ সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ এ এলাকায় বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্ন না হয়ে শেকড়কে ধরে রাখার লক্ষ্যে পরিচালিত তাদের অনুষ্ঠানাদি সত্যই চমৎকার আর মোহনীয়।
“মুক্তকলি” শিক্ষা প্রকল্পের এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার এডভোকেট সাংবাদিক হারুনূর রশীদ। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন হাইকমিশনার বীরমুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দীন মনির, ডঃ অধ্যাপক আবু তাহির মিয়া, প্রাক্তন কাউন্সিলাম আব্দুল আজিজ তকি, কাউন্সিলার পারভেজ আহমদ, শেখ জাহেদ, মাহমুদুর রহমান, সৈয়দ সুরুক, মোহাম্মদ মুকিদ, মৃণাল সেনগুপ্ত, ফারুখবক্স, আব্দুল ওয়াহিদ, আবিজা আক্তার, রাশিদা ও রাজনীতিক শরিফুজ্জামান তপন।
![]() উৎসবের আগের দিন রাত ১২টা। হল সাজানো হচ্ছে। ছবি: মুক্তকথা |
পিঠা উৎসবে ‘মুক্তকলি’ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগন অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে অংশ নেয়। তার মধ্যে আবৃতিতে অংশ নেয় তাওফিক হাসান, আরিয়ান রায়হান, জারা আক্তার ও ইমাদ হোসেন।
শিশু শিল্পী তাওফিক, আদিল, জারা ও সাফুরা চিত্রঙ্কনে অংশ নেয় এবং তারা সকলেই পুরস্কারে ভুষিত হন। অনুষ্ঠানের শেষে সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেয় স্থানীয় বাঙ্গালী শিল্পী সানজিদা কামাল শেফালী ও মোহাম্মদ সোহেল।
শিক্ষিকা সুলতানা বেগম ও রেবেকা সুলতানার সঞ্চালনা অনুষ্ঠানের মান-মাধুর্য্য ও বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, যে আয়োজনে সামিল ছিল একটি ছোট্ট কাপড়ের দোকান ও হাতে মেহেদী মাখিয়ে দেয়ার একজন আঁকিয়ে শিল্পী। সবশেষে হয় রাফেল ড্র। সেখানেও দুটো পুরস্কার দেয়া হয়।