1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
হৃদয়ের সবচেয়ে নরম কোনে আমৃত্যু যন্ত্রনার দীপ জ্বালাবে দিলীপ - মুক্তকথা
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন

হৃদয়ের সবচেয়ে নরম কোনে আমৃত্যু যন্ত্রনার দীপ জ্বালাবে দিলীপ

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮
  • ৩৫৩ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।। মাঝে মধ্যে টেলিফোন করে খবর নিতাম। প্রায়ই মুক্তিযুদ্ধে তার ভুমিকার উপর কিছু লিখার কথা বলতাম। ফোনের মধ্যেই বুঝতে পারতাম সে মৃদু হাসছে। কারণ সে কখনও লেখা-লেখিতে ছিলনা, তা জেনেও আমি যে তাকে লেখার অনুরোধ করছি ওখান থেকেই তার হাসি আসতো বলেই আমি বুঝতে পারতাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার পুস্তকে তার নিজের হাতে লেখা, তার মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকবে। এতে আমার পুস্তকখানা একটু হলেও সমৃদ্ধ হবে।
সে কখনও না বলেনি। কিন্তু সে যে লিখতে পারবে না তা আমি বুঝে নিয়েছিলাম। এ না লেখার পেছনে কিছু কারণও ছিল। সে তা বুঝতো আমিও অনেকটা অনুভব করতাম। একদিন টেলিফোনে তার মু্ক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক আলাপ হলো। অনেক ঘটনাই সে বললো। কথা হয়েছিল আরো কয়েকদিন আলাপ করতে হবে। কিন্তু সে আর হলো না। এমন হঠাৎ করে অনেকটা নীরবে নিভৃতে চলে যাবে, সে বুঝার ক্ষমতা আমার ছিল না। চিরদিনের জন্য মৌলভীবাজারের মুক্তিযুদ্ধের নির্দিষ্ট একটি সময়ের কিছু ঘটনার আর কোনদিন সুরাহা হবে না। অত্যন্ত ছোট খণ্ডচিত্র হলেও তা জানার খুবই প্রয়োজন ছিল আমাদেরই স্বার্থে, যথেষ্ট প্রয়োজন ছিল মৌলভীবাজারেরও।
এতোক্ষন যার কথা বলছিলাম, সে আর কেউ নয়, দিলীপ দেব। সময়ের এক সাহসী সন্তান। গত ১লা নভেম্বর ২০১৮ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার একটি শহরে সুন্দর এ ভুবন থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে। দিলীপের প্রয়াণে হাউ-মাউ করে কাঁদিনি ঠিকই কিন্তু মনের ব্যথা যে কোথায় কিভাবে পুঞ্জিভুত হচ্ছে এবং কিভাবে যে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে তা বলতে পারছিনা।

মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজারে দিলীপদের ‘চন্দ্রনাথ লাইব্রেরী’ নামে একটি পুস্তকের দোকান ছিল। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে শহরে যে দু’টি পুস্তকের দোকান ছিল। সে দু’টির একটি ছিল চন্দ্রনাথ লাইব্রেরী। দিলীপের বাবা দ্বারিকা বাবু সে পুস্তকের দোকান চালাতেন। কালো ছিপছিপে গড়নের দ্বারিকা বাবু খুবই প্রাণোচ্ছল কেতাদুরস্ত মানুষ ছিলেন। মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো। পিনপিনে ধুতি পড়ে সারাদিন দোকানে বসে বই কিংবা পত্রিকা পড়তেন। এরই ফাঁকে দোকানের বেচা-কেনার দিকেও নজর রাখতেন। ছেলে দিলীপের রাজনীতির প্রতি বাবার সুদৃষ্টি ছিলনা বলেই দেখেছি। বাবা চাইতেন ছেলে অবসর সময়ে লাইব্রেরীর ব্যবসা দেখাশুনা করুক। কিন্তু ছেলে বিপরীত! তার ইচ্ছে সে জাতীয় রাজনীতিতে স্থানীয়ভাবে সক্রিয় ভূমিকায় থাকবে। সে ইচ্ছে থেকেই দিলীপ ছাত্রলীগ রাজনীতির পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ছাত্রলীগের আন্তরিক কর্মি হিসেবে দিলীপ দলের মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠে খুব কম সময়ের মধ্যে।
এপ্রিল কিংবা মে মাসের দিকে ভারতের কয়লাশহরের ভদ্রপল্লীগ্রামের একটি বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিলীপের সাথে আমার দেখা হয়। তারপর আমি বিএলএফ-র হয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষনে চলে যাই। দিলীপও বিএলএফ-এর হয়ে যুদ্ধপ্রশিক্ষনে যায়। আর দেখার কোন সুযোগ হয়নি। মৌলভীবাজার বিএলএফ-র প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচ আমরা ১৩জন চোরাগোপ্তা যুদ্ধা হিসেবে ভারতের আশারামবাড়ী দিয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করি। দিলীপরা ২য় ব্যাচ একই পথ ধরে দেশে প্রবেশ করেছিল। স্বাধীনতার পর দিলীপের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম কিন্তু কিছু কিছু অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় জানার সুযোগ হয়নি দেশের রাজনৈতিক সীমাহীন অস্তিরতার কারণে। মনে মনে ভাবতাম সঠিক সময়ে জেনে নেবো। আমাকে এমনি ভাবনায় রেখেই দিলীপ একসময় আমেরিকায় চলে আসে। সেই যে গিয়েছিল আর দেশে ফিরে আসেনি। দিলীপ আর কোনদিন দেশে ফিরবে না। এতোক্ষনে হয়তো তার চিতা ভষ্মে পরিণত হয়ে গেছে। দিলীপ যেখানে থাকবে হাসিমুখে শান্তিতেই থাকবে, এ আমার বিশ্বাস। দিলীপ মরতে পারেনা। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার অন্তরে দিলীপ জ্বলবে দীপশিখা হয়ে। দিলীপ নামটি বেদনার যন্ত্রনা নিয়ে আমৃত্যু আমার মনের কোনে হৃদয়ের কাছেই থাকবে সূর্যের উজ্জ্বলতা নিয়ে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT