সংবাদদাতা, ঢাকা, ২ অক্টোবর ২০২০।। গত ২ অক্টোবর, ২০২০ মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী ও গান্ধীবাদী নেতারা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার বিষয় ছিল- ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর অবদান।’
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনলাইন আলোচনায় প্রধান আলোকে ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর অধ্যাপক আতিউর রহমান ও ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস। অন্যান্য আলোচকদের ভেতর ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, গান্ধী আশ্রমের চেয়ারম্যান সাংবাদিক স্বদেশ রায়, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল; ভারত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহী মণ্ডলীর সভাপতি চন্দন পাল, কর্ণাটকের গভর্মেন্ট ফার্স্ট গ্রেড কলেজ ফর উইমেন-এর ফিজিক্যাল এডুকেশন ডিরেক্টর ড. আবিদা বেগম, গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন, পশ্চিম বাংলার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র নাথ মন্ডল; ইন্দো-বাংলদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম, পশ্চিম বাংলার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী বিদ্যুৎ দেবনাথ।
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয়, দেশী এবং বিদেশী শাখা থেকে অংশগ্রহণ করেছেন ডাঃ নূজহাত চৌধুরী শম্পা, আসিফ মুনীর তন্ময়, যুক্তরাজ্য থেকে সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্যাহ, অস্ট্রেলিয়া থেকে সমাজকর্মী হাসনাত ফারুক শিমুল রবীন; সুইডেন থেকে সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, ম্যাসাচুসেটস যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমাজকর্মী মাহফুজুর রহমান, রংপুর থেকে ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু, নোয়াখালী থেকে অ্যাডভোকেট কাজী মানসুরুল হক খসরু প্রমুখ।
সভাপতির প্রারম্ভিক ভাষণে শাহরিয়ার কবির বিশ্বশান্তির পক্ষে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উক্তি ও ভাষণ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ছায়াযুদ্ধ, সন্ত্রাস ও ঘৃণা-বিদ্বেষে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করতে হলে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে আলোকিত করতে হবে। শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার শত্রুরা ভারত ও বাংলাদেশের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতা, শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনা ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে আরম্ভ করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে।’
|
ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘মহাত্মা গন্ধী ও বঙ্গবন্ধু দুজনেই শান্তির ধারণাকে অহিংসা, মানবাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, সম্প্রীতি, পরিবেশ ও উন্নয়নের বৃহত্তর পরিসরে স্থাপন করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও প্রকৃতির ভারসাম্য থেকে শান্তিকে আলাদা করে দেখেননি।’
বৃটিশ গান্ধীবাদী সমাজকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘এ প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি অবলোকন করলে গান্ধীর প্রতিক্রিয়া কী হত। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক অশান্তি, ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধোন্মদনা প্রভৃতি গান্ধীকে অত্যন্ত বিচলিত করত।’
গান্ধী গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী দীর্ঘ সময় যুক্ত বাংলায় তার অহিংসা ও অসহযোগের নীতি প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিপর্যস্ত নোয়াখালীতে শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ সৃষ্টিতে তিনি অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছেন। আমাদের বহু সমস্যা আমরা অহিংসা ও অসহযোগের গান্ধীবাদী পথ অনুসরণ করে সমাধান করতে পারি।’
গান্ধী আশ্রমের সভাপতি সাংবাদিক স্বদেশ রায় বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে মহাত্মা গান্ধী প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি শিল্পায়ন ও প্রকৃতির ভারসাম্যর রক্ষা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের কথা বার বার বলেছেন। অপরিকল্পিত শিল্পায়নে উদ্বেগ প্রকাশ করে গান্ধী গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।’
ভারতের গান্ধী পীস ফাউন্ডেশনের সভাপতি মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেছেন, ‘মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু দুজনেই শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের দেশের জনগণকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন- শাসকশ্রেণী যা গ্রহণ করতে সম্মত হয়নি। তাঁরা দুজনই শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য জীবন দিয়েছেন।’
সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহী মণ্ডলীর সভাপতি চন্দন পাল বলেন, ‘নোয়াখালী, কলকাতা ও বিহারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মহাত্মা গান্ধীকে অত্যন্ত বিচলিত করেছিল, যা ছিল তার অহিংস আন্দোলনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দাঙ্গাকবলিত এলাকায় শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’
ভারতের কর্ণাটকের বিশিষ্ট গান্ধীবাদী শিক্ষাবিদ ড. আবিদা বেগম বলেন, ‘শান্তি ও অহিংসা একে অপরের পরিপূরক¾ একই মুদ্রার দুই পিঠ। মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভারত ও বাংলাদেশের দুই মহান রাষ্ট্রনায়ক শান্তি, অহিংসা ও সম্প্রীতিকে নিজেদের জবিনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং এরই জন্য জীবন দিয়েছেন। এঁরা দুজন সমগ্র বিশ্বের জন্য শান্তি ও মানবতার বাতিঘর।’
|