ক্লিন্টন ও ট্রাম্প
একই মুদ্রার এপিট ওপিট" />
হারুনূর রশীদ: সোমবার ৮ই আগষ্ট ২০১৬।।
চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে এখনও আমেরিকার নির্বাচন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমেরিকার নির্বাচনের সময় উপস্থিত হলেই দেখা যাবে দুনিয়ার কোন না কোন দেশে মারামারি, হানাহানি শুরু হয়েছে আর আমেরিকা কখনও প্রত্যক্ষ আবার কখনও পরোক্ষভাবে নাক গলাচ্ছে। ওই মারামারি, কাটাকাটি মার্কিনী নির্বাচনে খুবই নির্নায়ক ভূমিকা পালন করে। আলোচক মহলের অনেকেই মনে করেন নিজের দেশের ভেতরের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে আমেরিকা নিজ থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা সাজিয়ে রাখে। কথাটি কতটুকু সত্যি তা জানিনা তবে এটি বুঝি এবং ক্ষেত্র বিশেষে দেখি যে আমেরিকা উপযাচক হয়ে নাক গলাচ্ছে ঠিকই। কথায় আছে না, ঘটনা সত্য কিন্তু সাক্ষী দূর্বল! সব কিছুই সত্য কিন্তু করার কিছুই নেই।
“অনলাইন রুটস” আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে খুব মজাদার এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। যদিও নিবন্ধটি খুবই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখা। এরপরও বলতে হয় নিবন্ধের বর্ণনা সত্য। নিষ্ঠুর সত্য! রুটস লিখেছে, “হিলারি ক্লিন্টনকে ভোট না দেয়ার অর্থই হল ট্রাম্পকে ভোট দেয়া”, এ হল দুনিয়ার দেশে দেশে রাজনীতির এক অতীব সাধারণ রূপ। রাজনীতির অতিপরিচিত এই ধুয়া তুলে লিবারেলরা এ দফায় আমেরিকার নির্বাচনে ভোট আদায়ে এ পর্যন্ত বিজয়ীর শিরোপা নিজেদের বগলদাবা করে রেখেছে। তাদের এই ধুয়ার বিকৃত মুখমন্ডল প্রায়শঃই এ নমুনার মাথা তুলে যখন বামপন্থি বা কালো- প্রগতিবাদীরা দ্বিদল প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলে। এই বিরুদ্ধ কথা বলায় উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ সৃষ্টি হয় হিলারি ক্লিন্টনের নব্য উদারবাদী কৌশলের পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষিপ্ত প্রতিযোগীতার।
একই নমুনার বিকৃত মুখমন্ডল আরও দেখা যায় যখন দলবদ্ধ মানুষ জানার গভীর থেকে প্রশ্ন তোলে বলে- “গনতন্ত্র বলতে কি বুঝায় যে ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে কালো আর বাদামীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শারিরীক মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসা”? ওই ধুয়া, আরো বুঝা যায় যখন ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকারীরা দেখে যে মরে পঁচে যাওয়া ওই রাজনৈতিক বৃক্ষটির আছে মাত্র দু’টি শাখা- গণতন্ত্রী দল আর রিপাব্লিকান দল।
কিন্তু হিলারী ক্লিন্টনকে ভোট দেয়ার অর্থ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট নয়। যদিও ক্লিন্টনকে ভোট দেয়া আর ট্রাম্পকে ভোট দেয়া উভয়ই সাদাদের আধিপত্যের পক্ষে। প্রশ্ন হল, সাদাদের আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগন কিভাবে চায়। এ প্রসঙ্গেই ‘কিরস্টেন ওয়েস্ট সাভালি’ “দি রুটস” এ তার যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। তিনি লিখেছেন-“গনতন্ত্রী দল”, একজন সাদা উদ্ধারকারীর প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে বর্ণবাদ আর পিতৃত্ববাদের ছাইকে অনেক ঝাড়াঝাড়ি করেছে। ভয়ে ভীত মানুষ ক্লিন্টনের পক্ষে ভোট দেবে কারণ তারা চায় না কালো মানুষের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে ট্রাম্প অস্থির করে তুলুন। জনৈক এডি গ্লোড তার অনুমান থেকে বলছেন যে এবারের আমেরিকার নির্বাচন যুদ্ধ তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে এ ভোট যুদ্ধ হবে “সাদাদের আধিপত্য বিহীন বিশ্ব” সৃষ্টির ভোট। আবার আরো কিছু মানুষ আছেন যারা ভাবেন দুই দল নয় বহুদলীয় পদ্ধতির আমেরিকা তারা দেখতে চান। আরেক পক্ষ মানুষ আছেন যারা ভাবছেন স্বাধীনতার নতুন সংজ্ঞায়নে।
আমেরিকান স্বাধীনতার পর থেকেই এই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে ট্রাম্পেরা চষে বেরিয়েছেন। স্বদেশীদের গণহত্যা এবং রক্তপাত, আফ্রিকার মানুষদের ধরে এনে দাসত্ববৃত্তি করানো, বর্ণবাদী নামাকরণ, লিংগ ও শ্রেণী আইন এ সবই ছিল ট্রাম্পদের চৌর্যবৃত্তিমূলক কর্মের ইতিহাস।
এই প্রজন্মের ট্রাম্পরা যখন আমেরিকার অন্ধকার অতীত নিয়ে গৌরবের কথা বলেন, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের অতীত পাপের কথা- ধর্ষণ, গণহত্যা, ক্রীতদাসত্ব করানো সহ অন্যান্য পাপ-পঙ্কিলময় ঘটনাকে সৌর্য্য-বীর্যের বলে তুলে ধরেন তখন ‘টমাস জেফারসন’ জীবিত হয়ে উঠেন এবং সালি হেমিংস এর সাথে তার অন্যায় যৌনকর্মের অসীম ভয়ঙ্কর চিত্র জনসমক্ষে ভেসে উঠে। তাদের যৌন অপরাধের বিচার হয়নি। এই ট্রাম্পরা নতুন নয়। মানুষ তাদের আগেও দেখেছে। মানুষ জানে কেনো এই ট্রাম্পরা বার বার আসে!
অবশ্য মানুষের কাছে একটি বিষয় খুবই পরিস্কার যে ট্রাম্প আর ক্লিন্টন একই মুদ্রার এপিট-ওপিট মাত্র। কেউ একটু কম বদমায়েশ আর কেউ একটু বেশী। বড় কথা, দুষ্ট শয়তান, শয়তানই; বুদ্ধীমান শয়তানও শয়তানই।
ক্লিন্টন কোন ত্রাতা নয়। আবার একজন কালো মানুষই আমাদের ত্রাতা হয়ে যাবে এমন ভাবাও ঠিক নয়।
(দি রুটস থেকে অনুদিত ও সংক্ষেপিত)