এদিকে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোঃ গোলাম রাব্বি জানান, কুলাউড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০/৮০টি গ্রাম এখন পানি বন্দি। তার উপজেলা পরিষদেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ সব ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা রাস্থা পানির নিচে। এর ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ। তিনি জানান, কয়েক দফা ত্রান দেয়া হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত আছে। চলমান বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানি হাকালুকিতে পড়ে হাকালুকি ক্রমশ ফুঁসে উটতে শুরু করেছে। নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উঁচু অংশেও এখন দেখা দিয়েছে বন্যা।
কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ভুকশিমইল ইউনিয়ন, জয়চন্ডী, হাজীপুর, কাদিপুর, কুলাউড়া সদর, ব্রাহ্মণবাজার, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আ.ফ.ম কামরুল ইসলাম জানান, মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া আগাম বন্যায় এ উপজেলায় ধান, মাছ ও সবজির ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এই এলাকা গুলোকে দূর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষনার দাবী জানান। কুলাউড়ায় ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু চৌধুরী জানান, বিগত ১৫/২০ দিন ধরে এ উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে এখন শহরে পানি উঠেছে। বর্তমানে উপজেলা প্রাঙ্গনে প্রায় ৩ ফুট পানি। তিনি জানান, জুড়ি উপজেলার জায়ফর নগর, পশ্চিম জুড়ি ইউনিয়নসহ সহ ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ টি গ্রামের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন। তিনি জানান, মাইকিং করে ও চেয়ারম্যান মেম্বারের মাধ্যমে খবর দিয়ে যাদের বাড়িতে পানি উঠেছে তাদের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে।
এদিকে গাড়ি চলাচলের রাস্থাদিয়ে নৌকা নিয়ে অফিস করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারী কর্মকর্তারা। জুড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান গুলসানারা মিলি জানান, এতো পানির অভিজ্ঞতা তার প্রথম। কয়েকদিন ধরে গাড়ি রেখে নৌকায় এসে তাকে অফিস করতে হচ্ছে।
বড়লেখা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে অব্যাহত বন্যায় বর্নি, দক্ষিনবাগ, তালিমপুর ও সুজানগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এ উপজেলার প্রায় ৬০ টি গ্রামের ৯০ হাজার মানুষ। প্রতিদিনের বৃষ্টির কারণে হাওরে পানি বাড়ছে আর নতুন বসতি এলাকা নিমজ্জিত হচ্ছে। ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হয়ে রান্ন্াবান্না করার মতো শুকনো কোন জায়গা না থাকায় লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, তার ইউনিয়নের সবক’টি গ্রামের ঘরবাড়ি বন্যায় তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। রান্না করে খাওয়ারও কোন জায়গা শুকনো নেই। এখনও আশানুরূপ সরকারী সাহায্য সহযোগিতা মিলেনি। বড়লেখা উপজেলার ইউএনও এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘প্রতিদিনের বৃষ্টির কারণে হাওরে পানি বাড়ছে আর বসতি এলাকা নিমজ্জিত করছে। ৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত মোট ১১৫টি দুর্গত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রেগুলো পরির্দশন করেছি। বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩৯ মেট্রিক টন জিআর চাল ও জিআর ক্যাশ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, বড়লেখা, কুলাউড়া ও জুড়ি উপজেলার সানাই, কন্টিনালা, জুড়ী নদী ও শতাধিক পাহাড়ি ছড়াদিয়ে হাকালুকিতে বৃষ্টির পানি নামে। এ সব ছড়া দিয়ে ভারতের পানিও নামে। আর হাকালুকি হাওরের পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে বের হয়। বর্তমানে কুশিয়ারা নদীর যে স্থান দিয়ে পানি নামে সেখানে বিপদ সীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তাই পানি বের হতে না পেরে ফুলে গিয়ে গ্রামগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কুশিয়ার পানি নেমে গেলে তখন অন্তত শহর ও শহরতলীর পানি নেমে যাবে।