হারুনূর রশীদ।।
এক সময় গেছে ইসরায়েল রাষ্ট্র শুধু মুসলিম দেশগুলির কাছেই নয় বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের কাছে গমনাগমন নিষিদ্ধ একটি দেশ ছিল। বেশির ভাগ মুসলমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত দুনিয়ার প্রায় ৫৩টি ছোট বড় রাষ্ট্র ইসরায়েলে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করে রেখেছিল তাদের নাগরীকদের। ইদানিং সেই ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী করতে বেশ কিছু মুসলমান অধ্যুষিত দেশের কুটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মৃদু আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সময় বদলায়। কত বদলে গেছে দুনিয়া। আরো বদলাবে।
কেউ কি বিশ্বাস করেছিল কোনদিন, যে সমলিংগের বিবাহ আইনসিদ্ধ হবে দুনিয়ায়! তাও হয়েছে। ইসরায়েলের সাথে মুসলিম কোন দেশের বন্ধুত্ব হবে এটিতো বিশ্বাসই শুধু নয় চিন্তারও বাইরে ছিল কোটি কোটি মানুষের। কিন্তু খোদ সৌদি আরব এখন ইসরায়েলের ঘনিষ্টতম বন্ধু রাষ্ট্র! হয়তো একসময় দেখা যাবে ইসরায়েল নিয়ে মুসলমানদের আর কোন সংশয় নেই। একে একে সকলেই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলবেন। খেয়াল রাখার মত বিষয় যে, গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সফরে যান। সৌদি বাদশাহ্ তাঁকে লাল কার্পেট সম্ভর্ধনা জানান। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন মুসলিম দেশগুলির বিরুদ্ধে। সৌদি বাদশাহ এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের মন্তব্য করেননি। তার অর্থ দাড়ায় মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের লড়াইয়ে সৌদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। দুনিয়া কত বদলে যাচ্ছে। আরো বদলাবে।
একই সূত্র ধরে বলবো, গত মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন। মোদীও ইসরায়েলের সাথে একই সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন ৭দফা চুক্তিও করেছেন। সুর ওই একই, বিশ্বসন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার ভারত ও ইজরায়েলের। চুক্তির দিক থেকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় মহাকাশ প্রযুক্তি, কৃষি ও জল সংরক্ষণ সহ সাতটি চুক্তিতে উভয় দেশ স্বাক্ষরও করেছে। এটি সুস্পষ্ট যে সৌদি ও আমেরিকার পাশে রয়েছে ইসরায়েল ও ভারত। অথচ এই কিছু বছর আগেও আরবদের জাতশত্রু ছিল ইসরায়েল। কেমন বদলে গেছে দুনিয়া। আরো বদলাবে।
নরেন্দ্র মোদীর এই ইসরায়েল সফর, কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ছিল প্রথম ইসরায়েল সফর। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বছর পূর্তি লগ্নে হল মোদীর এই সফর। শুধু শুধু্ই ভ্রমণ নয়, উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। ভারতের সাথে বন্ধুত্ব খুব প্রাচীন না হলেও একেবারে নতুন নয়। আবার ভারতের সাথে ইসরায়েলের বৈরীতাও ছিল। বিগত ৭০ বছরের মাঝে এই প্রথম ভারতীয় কোন উচ্চ মার্গীয় সরকারী নেতা ইসরায়েল সফরে গেলেন। বৈরীতার খোল নলচে একেবারে পাল্টে গিয়ে বন্ধুত্বের আন্তরিকতায় গলাগলি করেছেন দু’দেশের দুই নেতা। কথার সুরেই অনুমান করা যায় গলাগলির মাত্রা কোন পর্যায়ে আছে। ইসরায়েলের নেতনিয়াহু মোদীকে খাঁটী হিন্দিতে ‘দোস্ত’ বলে সম্ভোধন করেছেন। মোদীও কম যান না। তিনি খাঁটী হিব্রুতে উত্তর দিয়েছেন ‘শ্যালোম’ বলে। বন্ধুত্বের ব্যারোমিটারের কাটা আরো কয়েক ডিগ্রী উপরে তুলে নেতনিয়াহু বলেছেন ভারত-ইসরায়েলের বিবাহ না-কি স্বর্গেই ঠিক হয়েছিল আর বিয়েটা ওই দিন হয়েছে। এই বুধবার এসব ঘটে গেল। বিশ্ব বদলাচ্ছে কত। আরো বদলাবে। কারো বন্ধুত্বে আমাদের কোন আপত্তি আসার প্রশ্নই উঠেনা। বরং বন্ধুত্বে আমরা খুশী যদি সে বন্ধুত্ব শুধুমাত্র কতিপয় ব্যবসায়ীর মুনাফার স্বার্থে না হয়ে সত্যিকার অর্থে ব্যাপক মানুষের স্বার্থে হয়। হয় গোটা বিশ্বের শান্তির লক্ষ্যে। দুনিয়া বদলাচ্ছে। সবকিছুই বদলাবে। শত্রু অন্তরদিয়ে বন্ধু হলে সে তো আনন্দের। কিন্তু বন্ধু চরম শত্রুতে পাল্টে গেলে মেনে নেয়া যায় না। মানুষ দুনিয়ায় মানুষের বন্ধু হয়ে থাকবে এতো সকলেরই কাম্য। অমলিন সেই চিরবন্ধুত্বের বন্ধন সকলের মাঝে অম্লান থাকুন, শত্রুর বৈরীতা দুরীভূত হোক গোটা বিশ্ব নিয়ে সুন্দর একটি মনুষ্য সমাজ গড়ে উঠুক এ আমরা তো চাই ই, কে না চাইবে।