আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার থেকে।। মৌলভীবাজারের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল এন্ড কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আইয়ুব আলীর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। আলোচনা, বিচার বিশ্লেষন করে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। ‘স্কুল এন্ড কলেজ’এর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্বাক্ষরিত গত ২০-৮-২০১৭ইং তারিখে তাকে বরখাস্তের নোটিশ দেয়া হয়। এর আগে কমিটি তাকে কলেজ থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিল।
স্কুল সূত্র জানায়, স্কুলের পাঁচজন ছাত্রের যৌন নির্যাতনমূলক অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় এই স্থায়ী বরখাস্তের আদেশ দেয় ‘স্কুল এন্ড কলেজে’র পরিচালনা পর্ষদ। ‘স্কুল এন্ড কলেজে’র ভাই প্রিন্সিপাল মাওঃ এমএ মান্নান বলেন, গভর্নিং বডি স্থায়ীভাবে বরখাস্তের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়েছে। শিক্ষা বোর্ড অনুমোদন দিলেই এই বরখাস্ত কার্যকর হবে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে স্কুলের শিক্ষার্থী ফারুক মিয়া, মিজানুর রহমান, রাজিব দাশ, আফিকুল ইসলাম ও জয় চক্রবর্তী লিখিত অভিযোগে জানায় যে, অধ্যক্ষ কর্তৃক তারা যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। অধ্যক্ষ তাদেরকে নানা ধরণের শাস্তি বা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় কিংবা পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দেওয়া, মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড বা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে যৌন কার্যক্রম চালান।
অধ্যক্ষের এ হেন কু-কর্মে অতিষ্ঠ হয়ে তারা শ্রেণী শিক্ষক ও অভিভাবককে জানায়। তারা স্কুলের শিক্ষককে বিষয়টি অবহিত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সভাপতি বরাবর দরখাস্ত পাঠায়। সেই সময়ে পাঁচজন ছাত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ০৬-১২-২০১৬ইং তারিখে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন হইতে বিরত রাখা হয় আইয়ুব আলীকে। এবং কেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য ৭(সাত) দিনের মধ্যে বলা হয়। তিনি গত ০৪-১২-২০১৬ইং তারিখ অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন হইতে বিরত থাকা ও সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রধান করেন। কারন দর্শানোর নোটিশের জবাবে অধ্যক্ষ ব্যক্তিগত শুনানীর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে গত ১৭-১২-২০১৬ইং তারিখ তাকে গভর্নিংবডির সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০-১২-২০১৬ইং তারিখে শুনানীর দিন ধার্য করা হয়।
ওইদিন শুনানীর পর গভর্নিংবডি তাকে লিখিত কারন দর্শানোর নোটিশের জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানীতে দেওয়া বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। তদন্তে ঐ অধ্যক্ষ দোষী প্রমানিত হন।
পরিচালনা পর্ষদ তদন্ত কমিটির বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করে। যা অধ্যক্ষকে ০৪-০৬-২০১৭ তারিখে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি দিয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি ১১-০৬-২০১৭ তারিখে একটি জবাব দেন। যার প্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদ অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মত কোন কারণ খুজে পায়নি।
কলেজ অধ্যক্ষ হয়ে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর মত নোংরা অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক। যাহা স্কুলের প্রত্যেক ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক এবং জেলার সুশীল সমাজকে মর্মাহত করেছে বলে পর্ষদ উল্লেখ করে। এর পাশাপাশি বলা হয় স্কুল একটি পবিত্র স্থান। আর তিনি স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে স্কুল চলাকলীন সময়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন তো দূরে থাক, ছাত্রদের সাথে অনৈতিক কাজে জড়িত হন। যার ফলে গত ২০-০৮-২০১৭ইং তারিখে গভর্নিংবডির সভায় ঐ অধ্যক্ষকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আইয়ুব আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা। শুনেছি স্থায়ীভাবে বরখাস্তের জন্য সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদনের জন্য কপি পাঠানো হয়েছে কলেজের তরফ থেকে। বোর্ডের “আপিল এন্ড আরবিট্রেশন“ কমিটি বিচার-বিশ্লেষন করে যদি প্রমানিত হয় তাহলে আমাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করবে এটি বোর্ডের এখতিয়ার। কিন্তু স্কুল এন্ড কলেজের তদন্ত প্রতিবেদনে আমাকে পরিষ্কার করে দোষি সাব্যস্থ করা হয়নি। অনুমান করে, প্রতিয়মান করে দোষী করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ৮ মাসের সরকার প্রদত্ত ৫০ শতাংশ বেতন পেয়েছি কিন্তু স্কুল প্রদত্ত বেতনের ১৬/১৭ হাজার টাকা পড়ে আছে।