-হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জম আলী
লন্ডন: ঢাকা কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দিতে পারবে না। রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ করে তাদের ফেরৎ নেয়ার সহায়ক অবস্থা সৃষ্টির জন্য ভারতের সুনাম, যশঃখ্যাতি কাজে লাগিয়ে, মায়ানমারকে বুঝাতে ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছে।
“মায়ানমারের সাথে ভারতের পুরানো ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আমরা উভয়ই “বিমস্টেক”এর সদস্যরাষ্ট্র। ভারত জোর দিয়ে গুরুত্বসহকারে মায়ানমারকে সেই কথা বুঝিয়ে দিতে হবে যে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের দেশে ফেরৎ যাবার অবস্থা অবশ্যই তাদের সৃষ্টি করতে হবে। কফি আনান রিপোর্ট অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য ভারত, মায়ানমারকে বলতেই পারে।” বলেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে।
যেহেতু বিশাল সংখ্যার রোহিঙ্গা শ্মরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। এমন সময় এই রোহিঙ্গা শ্মরণার্থী সমস্যার মোকাবেল করতে হচ্ছে যখন এযাবৎকালের ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশকে তচনচ করে দিয়ে গেছে। আর শ্মরণার্থীদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি পরিকল্পনার প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তার সে প্রস্তাবনা হলো, রাখাইন প্রদেশে মারামারি বন্ধ করতে হবে এবং “ধর্ম ও জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে” সকল নাগরীকের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিরাপদ এলাকার সৃষ্টি করতে মায়ানমারকে বলা।
হাইকমিশনার আরও বলেন, “মায়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরীক রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নিতে আন্তর্জাতিক যৌথ যাচাই-বাচাই এর কাজে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে হবে, যা কফি আনান কমিশনেও বলা আছে।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মায়ানমার সফরের সময় অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে তার ‘অসহযোগীতামূলক’ ভূমিকার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথাও জনাব মোয়াজ্জেম আলী জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি পররাষ্ট্র সচিবকে বুঝিয়ে বলেছি যে মায়ানমারের নিরাপত্ত্বা বাহিনীর উপর সন্ত্রাসী আক্রমনের নিন্দা করা আমাদের জন্য ইতস্ততঃ করার কোন বিষয় নয়। আমরা তীব্র ভাষায় এই সহিংষতার নিন্দা করি। আমার প্রধান মন্ত্রী সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়ে বাংলাদেশ কোন নমুনায় সহনশীলতা দেখাতে পারবে না এবং বাংলাদেশের মাটিকে কেউ কোন রূপ সন্ত্রাসী কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া হবেনা।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান জেইদ রাআদ আল হোসেইন মায়ানমারের এ ঘটনাকে স্পষ্টাস্পষ্টি “সংখ্যালঘু নিধনের এক লিখিত ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করে এর কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। যা বাংলাদেশের বক্তব্যের সাথে কাকতালীয়ভাবে মিলে যায়।
“মায়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী আরেকটি বড় আকারের বর্বর অভিযান রাখাইন রাজ্যে চালিয়েছে” বলে উল্লেখ করে জেইদ আল হোসেইন আরো বলেন, এআরএসএ সশস্ত্রদল রাখাইন রাজ্যে অসহায় মানুষের কাছে সহায়তা নিয়ে সাহায্য সংস্থাদের পৌঁছার জন্য মাস ব্যাপী অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে। রোহিঙ্গারা নিজেরা নিজেদের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে এমন ধরনের মনোভাব মায়ানমার সরকারের উচিৎ পরিত্যাগ করা।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ, উভয় দেশের সীমান্তে প্রয়োজনে যৌথ প্রহড়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু মায়ানমার থেকে আজও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। ২৫শে আগষ্টের সন্ত্রাসী আক্রমনের সপ্তাহখানেক আগে আসন্ন একটি আক্রমনের বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ মায়ানমারকে সতর্ক করে দিয়ে আগাম জানান দিয়েছিল, কারণ ওই সকল এলাকায় কিছু সন্দেহজনক চলেফেরা লক্ষ্য করে কতিপয় ‘টেলিফোন কল’ অনুসরণ করা হয়েছিল।
ভারত অং সান সু কি’র পাশে দাড়িয়েছে আর মায়ানমার নেতৃত্ব ২৫শে আগষ্ট ঘটনাকে সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে তখনই সমালোচনা করছেন যখন বিশ্বব্যাপী নিন্দার তোপের মুখে পড়েছেন সুকি। এমনকি তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে দেবার দাবী উঠেছে।
এ অবস্থা যেমনি বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে তেমনি ব্যাপকহারে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগী হবার অবস্থার জন্ম দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশের অবস্থা অনুধাবন করে গত শনিবারেই তাদের অবস্থান বদলে নিয়েছে।
মোয়াজ্জেম আলী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা অতীতেও দেখেছি এই বিষয়ের নিরাপত্তার কথাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” “মায়ানমারকে অবশ্যই সন্দেহজনক সন্ত্রাসী আর সাধারণ নাগরীকের পার্থক্যের বিষয়টিকে অনুধাবন করে দেখতে হবে। এই অবস্থা ২,৭০,০০০ মানুষকে গৃহত্যাগী করেছে যারা আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে এবং এরা অন্যান্য দেশে গিয়েও আশ্রয় নেবে এটি আমি নিশ্চিত। এখানকার উচ্চ পদস্ত কিছু কর্মকর্তা আমাকে এই আভাসই দিয়েছেন যে বিশাল সংখ্যার রোহিঙ্গা আপনার দেশ ভারতেও আসবে।”
এই অঞ্চলে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে রোহিঙ্গা বিষয়ে ভারতের অবস্থান সরাসরি বিরোধীতার সন্মুখীন হবে। জম্মু-কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন অংশে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। কতিপয় মন্ত্রী এদের বহিষ্কারের কথা বলেছেন কিন্তু মায়ানমার তাদের নিতে চায় না অন্যরাও চায় না। ভারতীয় কর্মকর্তাগনই বলেন যারা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেছে তাদের নিয়ে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অবস্থার অতিরঞ্জন না করেও তথ্যে বলা হয়েছে যে রোহিঙ্গারা ভেতরে প্রবেশ করে মিশে গেছে এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা মৌলমতবাদীতে পরিণত হচ্ছে।
জনাব মোয়াজ্জেম আলী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক প্রস্থ প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তবে “রোহিঙ্গা সমস্যার মূল রয়েছে মায়ানমারে। ফলে, শেষ সমাধান মায়ানমারেই খুঁজতে হবে। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কফি আনানের নেতৃত্বে পরিচালিত কমিশনের সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নের জন্য মায়ানমারের উপর চাপ দিতে হবে।” -টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে অনুদিত। ভিডিও ছবি সংগৃহীত।