আজ ১১ই মার্চ। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১১সালের এই দিনে ঘটেছিল মানবেতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূপ্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ। প্রাণ হারিয়েছিল ১৯হাজার আদম সন্তান। ১লক্ষ ৬০হাজার মানুষ তেজষ্ক্রিয়তার ভয়ে ঘরবাড়ী ছেড়ে পালিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ হয়েছিল ঘরবাড়ী হারা। এখনও ১লাখ ৭৪হাজার সর্বস্বহারা মানুষ তাদের বাড়ীঘরে ফিরতে সক্ষম হয়নি তন্মধ্যে একলক্ষই শিকার হয়েছেন পারমানবিক তেজষ্ক্রিয়তার।
আমাদের সকলেরই জানা আছে ঐদিন প্রকৃতিমাতা তার সন্তানদের প্রতি চরমভা্বে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। দুনিয়ার অদেখা ভয়াবহতম ঐ ধ্বংসযজ্ঞের পট রচিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১১ই মার্চ সময় বিকাল ২.৪৬মি: জাপানের ফুকুশিমা শহর ও পারমানবিক কেন্দ্রকে ঘিরে। প্রথমে ভয়াবহ ভূমিকম্প তার পরে সুনামি। কঠিন কঠোর নিষ্ঠুরের মত প্রকৃতিমাতা আঘাত হানেন শহরটিতে। যার ফলে ফুকুশিমা পারমানবিক কেন্দ্র গলে যায় এবং ভয়াবহরূপে বিধ্বস্ত হয়ে তেজোষ্ক্রিয়তা ছড়াতে থাকে।
বিধ্বস্ত আর গলে যাওয়া ফুকুশিমা পারমানবিক কেন্দ্র থেকে ১৬মাইল উত্তরের ছোট্ট শহর ‘মিনামিশোমা’। ৭১ হাজার জনবসতির কৃষিখামার সমৃদ্ধ ছোট্ট শহরটি লন্ডভন্ড হয়ে যায় মূহুর্ত্যে সুনামী আর তেজোষ্ক্রিয়তার আঘাতে। পরিণত হয় প্রায় জনমানবশূণ্য অন্ধকার এক পরিত্যক্ত ভুতুরে শহরে। যেতে পারেননি শুধু হাসপাতালের রোগী, বয়স্ক বৃদ্ধরা, প্রসূতিমাতা কিংবা ঐজাতীয় অসহায় মানুষগুলো। আলোবাতি নেই, নেই কোন ধরনের সেবা কার্য্যক্রম।
‘কাটসুনবু সাকুরাই’। সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐ শহরের মেয়র হিসেবে। ৯হাজার মানুষ তাকে ভোট দেয়। সারা শহরের যখন এই অবস্থা, সবকিছু লন্ডভন্ড, মানুষ প্রাণ নিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বুকে সাহস নিয়ে পারমানবিক তেজোষ্ক্রিয়তাকে উপেক্ষা করে হাল ধরলেন তিনি। সবাইকে জানিয়ে দিলেন তিনি শহর ছাড়বেন না। তিনি ইউটিউবে সারা দুনিয়ার কাছে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানালেন। সেই যে সাহস বুকে বেঁধে দাড়ালেন অসহায় তার শহরের মানুষের পাশে আজো তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। গত বছর সুনামি’র মতই প্রলয় সৃষ্টিকারী ভোটে তিনি পূণ:নির্বাচিত হয়েছেন। তার শেষ কথা- “সকলে চলিয়া গেলেও আমি থাকিব, আমার পূ্র্বপুরুষ সামুরাই’দের কাছ থেকে এ দৃঢ়তা আমি পেয়েছি।
সাকুরাই ইদানিং তিনি তার অফিস কক্ষের জানলা দিয়ে বাহিরে দেখতে চান না। কারণ, ঐ জানলা দিয়েই পাঁচ বছর আগে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন প্রকৃতির নারকীয় তান্ডবনৃত্য!
ফুকুশিমা এখন ধীরে ধীরে সুস্থ্যতায় ফিরে আসছে। মহাযুদ্ধের ধ্বংসের মত ঘটনার পরও মাত্র ৬জন সাহসী ও দৃড়চেতা মানুষের জন্য জাপান পারছে এতোবড় একটি প্রলয়ঙ্করী বিনাশ থেকে পুণর্গঠনের দিকে এগিয়ে আসতে।
লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা খুব সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরেছে ঐ ৬জন মানুষের ভয়াল সেই দিনের স্মৃতিগুলো।