হারুনূর রশীদ।।
গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃটেন সফরে এসেছেন। এটি তার ৩দিনের রাষ্ট্রীয় সফর। একটি বিষয় খুবই হাস্যকর হলেও বলতে হয় তিনি বৃটেনের মাটিতে পা দেয়ার ঠিক আগের মূহুর্তে টুইট করেন। সম্ভবতঃ বিমানে থাকা অবস্থায়ই তিনি এ টুইট বার্তা লিখেন। বৃটেনের এতোসব কিছু রেখে প্রেসিডেন্ট তার টুইটে লন্ডনের মেয়র সাদেক খানকে এক হাত দেখে নিতে প্রয়াসী হন। সাদেক খানকে তিনি টুইটে বলেন খান একজন পাথরের মতো হিমশীতল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। অবশ্য এর আগে সাদেক খান প্রেসিডেন্টকে বিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাদেক খানের উপর রাগ হওয়ার অবশ্য আরো কারণ ছিল। বৃটেনে তার রাষ্ট্রীয় সফরে আসার খবরে বহু সংগঠন প্রতিবাদী মিছিল সমাবেশ করার জন্য নিয়মানুযায়ী মেয়রের অনুমতি চায়। মেয়র সেসব অনুমতিতে স্বাক্ষর করেন। সময়মত এরা প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে। এ ছাড়াও শ্রমিক দল মিঃ ট্রাম্পের সাথে কোন বৈঠকে যাবে না জানিয়ে দিয়েছে। তারা বলেছে এমন উচ্চমার্গীয় মর্যাদা পাওয়ার মানুষ মিঃ ট্রাম্প নন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও কম যান না। তিনিও বলেছেন শ্রমিক দলের সাথে বিশেষ করে মিঃ করবিনের সাথে তার বৈঠকের তেমন কোন প্রয়োজন নেই। ফলে সাদেক খানের উপর মিঃ ট্রাম্পের রেগে থাকার কথাই। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারতেন। হয়তো অনেকেই বলবেন, কেনো? এড়িয়ে যাবেন কেনো। যা বলার সরাসরি বলাই তো সাহসের কাজ। ভিরু কাপুরুষ হতে যাবেন কেনো আমেরিকার মতো দেশের প্রেসিডেন্ট। ফকিরের ধামকিতে তিনি কি ভয় পাওয়ার মানুষ?
কথা এখানে নয়, কোথায় একটি দেশের প্রেসিডেন্ট, তাও আবার আমেরিকা! সেই প্রেসিডেন্ট কি-না রাগ দেখাবেন একটি দেশের নগর পালের উপর। তাও যখন সে দেশেই গিয়েছেন অতিথি হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে। ট্রাম্প কি এটি জানেন না যে একজন নগরপাল আর একজন রাষ্ট্রপ্রধান এক কাতারের নয়! সাদেক খানকে গালি দিয়ে ট্রাম্প নিজেই নিজের ওজনের খবর একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন নতুনকরে। মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এজন্যই তিনি মিঃ ট্রাম্প। তিনি জগৎ বিখ্যাত ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃটেন যখন ব্রেক্সিট নিয়ে জর্জড়িত। সরকার এমনকি বিরোধীরাও দেশের স্বার্থ রক্ষা করে এমন, সঠিক কোন পথ আজও বের করতে পারেননি। পদত্যাগ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সামনে আর কোন রাস্তাই নেই। এবং তিনি পদত্যাগের দিন তারিখ স্পষ্ট করেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এ নিয়ে দলে বহুজন, বহুমত হয়ে কামড়া-কামড়ি চলছে। বিরুধী পক্ষ শ্রমিক দলের অবস্থা যে খুব একটা ভাল চলছে তা-ও নয়। দেশের নির্মাণ শিল্প বলতে গেলে স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনি এক সময়ে তিনি বৃটেন সফরে এসেছেন। এটিকে সময় না বলে দুঃসময় বললে সম্ভবতঃ সঠিক শব্দ ব্যবহার হবে।
এ নমুনার এক নাজুক সময় বিষয়ে কোন কিছুই না জেনে না বুঝে তিনি যে সফরে এসেছেন এমনটা কোন বোকাও ভাববে না। নিশ্চয়ই তার এ সফরে বিশেষ কোন সূচি রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষকের ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ কেউ বলছেন মিঃ ট্রাম্প চাচ্ছেন শ্রমিক দলের অমর সৃষ্টি “এনএইচএস”কে ব্যবসায়িকভাবে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে নিতে। এতে করে ব্যবসাও হয় একই সাথে শ্রমিকদলকেও ঘোল খাওয়ানো যায়। এটাই তার অন্তরের এজেন্ডা। এমন কাজ হাসিল হলে বৃটেনের এনএইচএস হয়ে পড়বে আমেরিকার মত খুবই ব্যয়বহুল এক চিকিৎসা যা সাধারণ মানুষের পাওয়ার আওতার বাহিরে চলে যাবে। ব্যবসা আমেরিকার হবে। ক্ষতি হবে বৃটেন ও বৃহত্তর বৃটেনবাসীর। আর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কিছু আতেল দুনিয়াকে ওলট-পালট করেন মিঃ ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের মতামতের কোন তোয়াক্কাই করেন না।
সাদেক খানকে গালি দিয়ে এ শহরে পা রেখেই তিনি বলেছেন ব্রেক্সিট পরবর্তী বৃটেনের সাথে নতুন ব্যবসার বিষয়ে আলাপ হবে। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে স্টেনষ্টেড বিমান বন্দরে গিয়েছিলেন দেশের পররাষ্ট্র সচিব জেরেমি হান্ট। হান্টকে তিনি এসব কথা বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতি হলো বৃটেন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসুক। তারা যেমন ২০১৭সালে প্যারিস পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন থেকে বেরিয়ে এসেছেন। অথচ বৃটেন বেরুতে চায় না। ট্রাম্প বলেছেন পরিবেশের বিষয় একটি পেঁচানো রাজনীতি। পরিবেশের কিছুই হয়নি। এটি বুদ্ধিবাদীদের বানানো কাহিনী ছাড়া কিছু নয়। পরিবেশ ঠিকই আছে। প্রধানমন্ত্রী মে বলেছেন তিনি পরিবেশের বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরবেন। এতোসব ঘটনা বিবেচনায় নিলে একটি চিত্রই সামনে ভেসে উঠে, আর তা হলো- বুদ্ধীবৃত্তিক রাজনীতির সাথে ব্যবসাবৃত্তিক রাজনীতির এক ভীষন টানাপোড়ন চলছে আমেরিকায়। বলাযায় কিছুটা বৃটেনেও। তারই এক পক্ষে দাড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যপক্ষে বুদ্ধীবৃত্তিক রাজনীতির সিনেট ও সংসদ। গণতন্ত্র বহু পুরোনো প্রশ্নের সন্মুখীন নতুনকরে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়!