হারুনূর রশীদ।। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি সরকারী অফিস। এদের নামের ছিরি দেখলে মাথা ঘুরে যাবার মত অবস্থা হবে। আমার খুবই পরিচিত এক কন্যা তার ফেইচবুকে এর একটি ছবি দিয়ে সেও লিখেছে-‘পাগল হয়ে যাবার মত অবস্থা’। আর ঠিকই এমন বাহারের নাম মনকে আনন্দ না দিয়ে উল্টো মাথাটাকে ঘুরিয়ে মুখ পেছনে নিয়ে যাবার অবস্থা হওয়ার মত।
হবেই বা-না কেনো? বাংলাদেশের কোন একটি বিশেষ জেলার লোকজন, মানুষের পায়ূপথকে বলেন ‘হুগা’। আবার অন্য একটি জেলার লোকজন একটি বিশেষ জাতের মাছকে ডাকেন ‘হুগা’ বলে। এমন অবস্থায় সামলাবেন কি দিয়ে? রীতিমত খুনোখুনী হবার ঘটনা নয় কি? কোন এলাকার বিশেষ কোন কথ্য ভাষা নিয়ে ভেঙ্গচি কাটার উদ্দেশ্যে আমার এ লিখা নয়। যেকোন শব্দেরই জন্মের ইতিহাস থাকতেই পারে। সে ছোট হোক বা বড় হোক কিংবা অখ্যাত হোক বা বিখ্যাত হোক।
বিশ্ব মানব সমাজে বহু মাহাত্ম্যে পূর্ণ কোটি কোটি শব্দরাশি ব্যবহার হয়ে আসছে অনাদি অজ্ঞাত কাল থেকে। দুনিয়ায় বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষ বিশেষ ভৌগলিক পরিবেশ। পারিপার্শিক সেই পরিবেশ ও মানুষের জীবন ধারণের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে মানুষই শব্দ সৃষ্টি করেছে। শব্দের স্রষ্টা মানুষই। সেই পরিবেশ ও জীবনের চাহিদা মানুষের শব্দচয়নকে ভিন্ন ভিন্ন রূপ দিয়েছে। শব্দের জন্মেতিহাস খুঁজে বের করা আমার কোন উদ্দেশ্য নয়। সে ধ্বনিবিজ্ঞানীগন দেখবেন। শব্দের অর্থ বা ধ্বনিতথ্য যে মানুষকে ভাবায়, উথলা করে, হাসায়-কাঁদায় এমনকি লড়াই বাঁধায় সে কথাটি বলাই আমার মূল উদ্দেশ্য এবং এখানেও একটা রুচিবোধের বিষয় থাকা উচিৎ।
এক ভাষার মানুষ ভিন্ন ভাষার অনেক কিছুই বুঝে না। ফলে ভিন্ন ভাষার ধ্বনিতথ্য জানা না থাকলে বিভ্রাট হতে বাধ্য। ভ্রম-বিভ্রাট থেকে প্রানহানিকর অবস্থার জন্ম নিতে পারে। এতোকিছু বলার মূল উদ্দেশ্য হলো উপরের ছবিটির নামের শব্দগুলোর চয়ন। যে বা যারা এ শব্দগুলো নাম হিসেবে পছন্দ করেছিলেন তার যদি কোন ব্যাখ্যা থাকতো তা’হলে হয়তো এতো মাথা ঘামাতে হতো না। কিন্তু এমন সামগ্রীর এমন বেঢক নাম কেউই মেনে নিতে পারবেন বলে আস্তা হয় না। তাই এতো কথার আয়োজন।
হয়তো অনেকেই বলতে পারেন যে ওই ছবিটাইতো যথেষ্ট। এতো কিছু বলার কি প্রয়োজন ছিল? খুব একটা প্রয়োজন ছিল না ঠিকই যদি এগুলো আজ-কালের ঘটনা হতো। কিন্তু না, আজ-কালের নয়। হিসেব মত ৪৮ থেকে ৫৩বছর আগের কাহিনী। এতো বছরে কেউ কেনো মনে করলেন না যে এ নমুনার নামাকরণ থাকা খুব একটা সুস্থতা নয়। পুরোপুরি একটা উদাসীনতা।
আমরা নিজেদের বিষয়ে কতটা উদাসীন এটি কি তার বড় একটি প্রমান নয়? প্রশ্ন হচ্ছে কেনো এবং কোন কারণে আমরা এতোটা উদাসীন। আমাদের শিক্ষাহীনতা মানে জ্ঞানের অভাব না-কি আমাদের চিন্তা-চেতনার জায়গা এ দেশ নয়, নয় এ মাটি ও মানুষ বরং অন্য কোথায়ও?
আমরা আমাদের অনেক কিছু বদলাতে পারি। আমরা দেশের শাসনতন্ত্র বদলিয়েছি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জেনে-শুনে বদলে দিয়েছি। কত রাজাকারকে মু্ক্তিযোদ্ধা বানিয়েছি আর কত মুক্তিযোদ্ধাকে বানিয়েছি আলবদর তার হিসেব দিতে গেলে কিতাব রচনা করতে হবে। অনেকে রচনা করেছেনও। আমরা মূর্তি বানাতেও পারি আবার ভেঙ্গে দিলে তা নীরবে সহ্য করতেও পারি শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে। কি পারি না আমরা? সবকিছুই পারি। শুধু পারি না নিজেদের দিকে তাকাতে! হারুনূর রশীদ, লণ্ডন, সোমবার ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯সাল