মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ ‘শান্ত দুশ্চিন্তামুক্ত মন, কচ্ছপের মত বসা, কবুতরের ন্যায় হাটা এবং কুকুরের মত ঘুম।’ দীর্ঘ জীবনলাভের মহৌষধ। বলেছিলেন চীনা বনজ ঔষধি লতাগুল্ম সংগ্রাহক লি চিং উয়েন। যিনি জীবন ধারণ করেছিলেন ২৫৬ বছর। গোটা বিশ্বের দীর্ঘায়ূপ্রাপ্ত একমাত্র ব্যক্তিত্ব এই লি চিং উয়েন। এটি কোন কিংবদন্তী বা বানানো কাহিনী নয় বাস্তব সত্য ঘটনা। লি চিং উয়েন তার সুদীর্ঘ জীবন লাভের কাহিনী নিজেই বলেছিলেন চীনা জেনারেল উ পেই ফু-কে। |
উনবিংশ শতকের(১৯১৫) চীনা জেনারেল উ পেই ফু, এই লি চিং উয়েনকে দাওয়াত করে তার বাড়ীতে নিয়েছিলেন দীর্ঘায়ূ পাওয়ার মন্ত্র জানার জন্য। ১৯৩০ সালের নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, চীনের চেং দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উ চুং চিয়ে ১৮২৭ সালের চীনা রাজকীয় নথি খোঁজতে গিয়ে লি চিং উয়েন’এর এ তথ্য আবিষ্কার করেন। ওই নথিতে লি চিং এর ১৫০তম জন্ম বার্ষিকীতে তাকে অভিনন্দন জানানোর কিছু কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। একইভাবে ১৮৭৭ সালের নথিতে পাওয়া যায় লি চিং ওয়েন’এর ২শত বছর পূর্তির অভিনন্দনের কাগজাত। এসকল কাগজাত থেকে আরো জানা যায়, লি চিং ওয়েন তার ভেষজলতা সংগ্রাহকের জীবন শুরু করেন সেই দশ বছর বয়স থেকে। লোকমুখ থেকে জানা যায় উল্লেখ করে ১৯২৮সালে নিউইয়র্ক টাইমস এর একজন সংবাদদাতা সে সময় লিখেছিলেন- ‘লি চিং-এর পাড়ার বুড়ো লোকজন বলতেন যে তাদের দাদারা যখন ছোট ছিলেন সে সময় এ লোককে তারা যুবক দেখেছেন। সে সময় ওই সাংবাদিক আরো লিখেছিলেন, লি চিং উয়েন তার ভেষজলতা সংগ্রাহকের জীবন শুরু করেন সেই দশ বছর বয়স থেকে। ওই বয়সেই তিনি পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে ভেষজলতা সংগ্রহ করতেন এবং এসব লতা-পাতার দীর্ঘজীবন লাভে গুণাগুণ সম্পর্কেও জ্ঞানলাভ করতেন। |
১৭৪৯সালে লি চিং উয়েন ৭১ বছর বয়সে চীনা সামরিক বাহিনীতে মার্শাল আর্টের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। লি তার সম্প্রদায়ে সকল মানুষের খুব প্রিয় এবং খুব সুদর্শন চেহারার মানুষ ছিলেন বলে নথিপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি জীবনে মোট ২৩টি বিবাহ করেন এবং ২০০সন্তানের জনক হতে পেরেছিলেন। লি চিং যে প্রদেশের মানুষ সেখানে তার বিষয়ে মানুষের মুখে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। গ্রহনযোগ্য সে কাহিনীগুলো পড়ে দেখা যায় তিনি লিখতে পড়তে পারতেন এবং তার সেই দশ বছর বয়সেই তিনি কানসু, সানশি, তিব্বত, আন্নাম, সিয়াম এবং মাঞ্চুরিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন; সাথে সাথে ভেষজ লতাগুল্ম সংগ্রহ করেছেন। জীবনের প্রথম শতবর্ষ তিনি এভাবেই লতাগুল্ম সংগ্রাহকের পেশায় কাটিয়েছেন। এর পর শুরু করেন লতাগুল্ম বিক্রির ব্যবসা। অন্যদের সংগ্রহ তিনি বিক্রি করতেন। ব্যবসা করতে গিয়ে অন্যান্য লতাগুল্মের সাথে তিনি বিক্রি করেছেন- লিংঝি, গজিবেরি, বন্যগিনসেং, হি শউ উ এবং গতু কলা নামের আয়ূবর্ধক এসব ভেষজ লতাগুল্ম। ভাতের তৈরী মদের সাথে এসব খেয়েই তিনি জীবন ধারণ করে গেছেন। |
লি চিং সবসময় শান্তভাব ও মনে চলাফেরা করতেন। জীবনের সকল কাজেই আয়ূবর্ধক শ্বাস-নিঃশ্বাস ব্যায়াম চর্চ্চা করতেন। কিন্তু সবচেয়ে মুগ্ধ হওয়ার বিষয় হলো তিনি তার দীর্ঘায়ূর বিষয়ে নিজের মনের অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন বলে লিপিবদ্ধ নথিতে পাওয়া যায়। |
কাহিনী পড়ে অনেকেই সন্দেহ করবেন নিশ্চয়। কিন্তু কেনো এমন সন্দেহ? যেহেতু উন্নত পশ্চিমা জগতে জীবনায়ূর হার ৭০ থেকে ৮৫ বছর এজন্য? এ চিন্তা নিয়ে দেখলে শত বছরের আয়ূ তা’হলে অবশ্যম্ভাবীরূপেই কল্পনা হয়ে যায়। তার উপর আবার ২শত বছর। পুরোপুরি সন্দেহজনক বিষয়। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন যে মানুষ এমন বয়স পর্যন্ত বাঁচতেই পারে। কিছু মানুষ এ বিশ্বে বেঁচে আছে যারা কঠোর শাস্তিমূলক জীবন যাপন করে না। তারা কোন সময়ই ঋণের চাপে পড়তে যায় না; তারা কখনই নগর সভ্যতার বায়ূদূষণ পরিবেশে বাস করে না এবং তারা নিয়মিত কোন না কোন ধরনের ব্যায়ামে নিয়োজিত থাকে। তারা কোন সময়ই দূষণমুক্ত নামের চিনি বা আটা খায় না; এ ছাড়াও এমন খাদ্য খায়না যে খাদ্যে কীটনাশক ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। তারা কোন সময়ই তৈলাক্ত মাংস খায় না, চিনিযুক্ত অধিক মিষ্টি খাবার কিংবা অধিক ফলনের উদ্ভাবিত খাদ্য গ্রহন করেনা। এসকল মানুষ মদ্যপান করেনা, কোন জীবাণূ প্রতিরোধী দ্রব্য খায় না, তামাক খায় না। ভেজালযুক্ত কোন খাদ্য এরা কখনই গ্রহন করেনা যা আমরা নিয়মিত খেয়ে থাকি। বিপরীতে তারা এমনসব খাদ্যপ্রান মিলিত ভেষজলতাগুল্ম গ্রহন করে যা মানব অঙ্গ ও ইন্দ্রিয় শক্তিকে সচল রাখতে সহায়ক। |