মুক্তকথা সংবাদকক্ষ॥ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মানব কন্ঠের সম্পাদক প্রকাশক বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিক জাকারিয়া খান চৌধুরী গত ২৫মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন(ইন্না…রাজেউন)।
গত ৯মার্চ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ১১মার্চ তাকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের আইসিইউ-তে বদল করা হয়।
জাকারিয়া খান চৌধুরীর গ্রামের বাড়ী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর ইউনিয়নের সত্মুখা চৌধিরী বাড়ী। তার বাবা ইয়াহইয়া চৌধুরী ১৯৫৭ সালে কুষ্টিয়া ও ঢাকার প্রথম বাঙ্গালী জেলা হাকিম(ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) ও এমএনএ(মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেমব্লি) ছিলেন। জাকারিয়া চৌধুরীর জন্ম ভারতের আসামের শিবসাগরে ১৯৩৩ সালের ১৮ নভেম্বর। তার শিক্ষা জীবনের শুরু শিলং, করিমগঞ্জ ও পরে সিলেট।
করিমগঞ্জে স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৫৫সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মান সনদ(ডিগ্রী) অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ১৯৫২সালে ভাষা আন্দোলনে মিছিল করতে গিয়ে জেলবন্ধী হন। ১৯৫৭ সালে লিঙ্কন্স ইন-এ বার-এট-ল পড়ার জন্য ভর্তি হন। এসময় ১৯৫৮সালে লণ্ডনে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এরই পথ ধরে পরে ১৯৬০সালে সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ববাংলা স্বাধীন করার পরিকল্পনায় ‘পূর্বসূরী’ নামে গোপন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।
১৯৬৩ সনে বঙ্গবন্ধু লণ্ডন গেলে তার সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ করেন এবং পূর্ববাংলার স্বাধীনতা যে তার সংগঠনের লক্ষ্য এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধকে অবগত করেন। বঙ্গবন্ধু তার সাথে একমত পোষণ করেছিলেন। সে থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ১৯৬৮সালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র প্রতিবাদে লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন জবরদখলের নেতৃত্ব দেন ও প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যারিষ্টার স্যার থমাস উইলিয়ামস কিউ. সি.-কে মামলা পরিচালনা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে পাঠান। আয়ূবের পতনের পর ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবারও লন্ডনে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ সংগঠক হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১সালের ৭ মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ওনাকে ব্যক্তিগত দুত হিসেবে লন্ডনে অবস্থান নিতে বলেন। তখন এয়ারপোর্টের কর্তৃত্ব পাকসামরিক বাহিনী নিয়ে নিলে দেশে আসা অসম্ভব হয়ে উঠে। পরে এক সুযোগে দেশে আসেন এবং ২৫মার্চের পাকসামরিক জান্তার পৈচাশিক হত্যাযজ্ঞের পর তিনি আত্মগোপনে থেকে ৩ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও শরিক হতে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে চলে যান। প্রয়াত মেজর(পরে মেজর জেনারেল) খালেদ মোশাররফ তখন তার বাহিনী নিয়ে তেলিয়াপাড়ায় অবস্থান করছিলেন। তাকে তারা লন্ডনে গিয়ে অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের অনুরোধ করেন এবং এক পর্যায়ে দায়ীত্ব অর্পণ করেন। পরে আবারও লন্ডনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত দূত পরিচয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭২সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৭সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা পদে যোগ দেন। তিনি শ্রম, জনশক্তি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার সুচিন্তিত পরামর্শেই জিয়াউর রহমান ১৯৭৭সালের ২২ ফেব্রুয়ারী এক ঘোষণার(অর্ডিনেন্স) মাধ্যমে হাওর উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন যা ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’।
মি: চৌধুরী ১৯৯৬সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬সালের ১২ জুন নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। সূত্র: মানবকণ্ঠ
|