মৌলভীবাজার, ৩০ জুলাই ২০২১রজত গোস্বামীআমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে দেখেছি, দেশের কোন হাটে বা বাজারে কিংবা শহরের কোন প্রান্তে যদি একটা ককটেল বা পটকা বিস্ফোরিত হয়, দেখা যায় মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। এমনকি, কোন কিছুই হয়নি, কেউ একজন বললো- বাজারের ওই প্রান্তে বোমা ফেটেছে, তা শুনেই মানুষ পালাতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞগণ শুরু থেকেই বলে আসছেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রধান উপায় দুইটি। প্রথম হচ্ছে- টিকা গ্রহন। দ্বিতীয়, দ্রুত টিকা পাওয়া কঠিন, তাই কঠোর ভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বিশেষ করে আবশ্যিক ভাবে মাক্স বা মুখোশ পরিধান ও নিজের দুইহাত কিছুক্ষণ পরপর জীবানুমুক্ত করা। কিন্তু আমার দেশের অধিকাংশ সোনার মানুষরা দুইহাত জীবানুমুক্ত করা তো দূরের কথা, মুখোশই পড়বেন না। এই লকডাউনের সময়ও দেখা যাচ্ছে মুখোশ না পড়াটা যেন তাদের একটি জেদ। প্রায় ১২৫/১৩০ বছর আগে শিশু কাব্যগ্রন্থে লেখা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত “আমি আজ কানাই মাষ্টার” খ্যাত ‘মাষ্টারবাবু’ শিশুতোষ কবিতাটি যেনো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কবিতার একটি লাইন- “…আমি বলি চ ছ জ ঝ ঞ / ও কেবল বলে মিয়োঁ মিয়োঁ”। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারনার পরও দেশের সিংহভাগ মানুষ মুখোশ পরিধান করার কথা বললে ‘কানাই মাষ্টারের সেই ছাত্রের(বিড়াল) মতো কেনো “মিয়োঁ মিয়োঁ” করে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এবিষয়ে একটা গবেষনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। আমি না হয় অবুঝ মানুষ, কিন্তু, মুখোশ না পড়া এতসব মানুষের সবাইতো আমার মতো অবুঝ নন। তবে কেনো মুখোশ না পড়ার এতো জেদ? যেখানে সামান্য পটকা/ককটেল ফাটলে দেন ভো-দৌড়, ভূমিকম্প হলে প্রাণ ভয়ে দৌড়ে ঘরের বাহিরে চলে আসেন, সেখানে মরণঘাতি কোভিড-১৯ সংক্রমনের এই ক্রান্তিকালে কেনো স্বাস্থবিধি মানছেন না। কি এর জবাব? যদি স্বাস্থ্যবিধি না ই মানবেন, মুখোশ না ই পড়বেন, তাহলে লকডাউনে কেনো বাহিরে গিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলবেন? নব-উদঘাটিত বাক্য- ‘জীবন ও জীবিকার’ কথা বলছেন? তাহলে, মুখোশ সঠিকভাবে পরিধান করলে ‘জীবন ও জীবিকায়’ কি ক্ষতি হয়, বলতে পারেন? (লেখক রজত গোস্বামীঃ প্রাক্তন সাংবাদিক- ডেইলি ষ্টার, সরকারি কলেজের শিক্ষক) |