আপনজনকে ভালোবাসা জানাতে বিশেষ দিন নির্ধারণ করে আমরা আমাদের পবিত্র, খাঁটি আবেগ-অনুভূতির বিশালতাকে, কৃত্রিম পন্থার জন্ম দিয়ে সংকুচিত করছি। ‘কমার্শিয়াল’ সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে উপহার দিচ্ছি দামি জিনিস। ভালোবাসা আর অনুভূতির গভীরতা নির্ণয় করছি পণ্যে। টাকায় কি সম্পর্ক পরিমাপ করা সম্ভব! কাক হয়ে ময়ূরের নৃত্য অনুসরণ করতে গিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে আমরা এখন অনেকটা দূরে। পারিবারিক ও সামাজিক চিরচেনা মহিমা, ভাবগাম্ভীর্যতা আগের মতো নেই। ধ্যান-ধারণায় আধুনিকতাকে সভ্যতা মনে করে অশ্লীলতাই এখন জীবনের স্বাভাবিক রীতি হতে চলেছে। তখনকার দিনে মানুষ যখন তথাকথিত আধুনিক ছিলেন না তখন মা-বাবা কোন সন্তানের কাছে থাকবেন সেটা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে মমতা ঘেরা মধুর কাড়াকাড়ি শুরু হতো। আর এখন বিত্তশালী শিক্ষিত সন্তানদের নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনে সালিশ মিটিং হয় মা-বাবাকে কোন বৃদ্বাশ্রমে রাখা যায়! আগে সন্তান ছিল মা-বাবার শেষ বয়সে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা। এখন বিশেষ বিশেষ দিবস আর আধুনিকতার যাতাকলে মূল্যবোধ ও মানবতাকে গলা টিপে হত্যা করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নিষ্ঠুর উপহার স্বরূপ সরকারি/বেসরকারি বৃদ্বাশ্রমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যুগের সাথে আধুনিক হওয়াটাই জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সুস্থ ধারার আধুনিক হওয়াটা দোষের কিছু নয়। তবে কর্জ করা সংস্কৃতি মারফত ‘হাই-স্ট্যান্ডার্ডে’র আধুনিক হয়ে নিজের পরিচয়, অস্তিত্ব ভুলে যাওয়াটা দোষের। আধুনিকতার সাথে পরিচিত হয়েই আমাদেরকে টিকে থাকতে হয়ে। তবে তথাকথিত আধুনিকতার নামে বিবেক ও রুচিবোধ বিসর্জন দিয়ে পঁচে গিয়ে টিকে থাকাটা আত্মঘাতীর শামিল। আমরা আধুনিক হই; তবে ভোগবাদ, বস্তুবাদ, দিবসবাদে বিশ্বাসীদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসার বিশ্ব কমার্শিয়াল সংস্কৃতিতে মগ্ন হয়ে নিজ সত্তাকে, নিজস্বতাকে কবর দিয়ে তথাকথিত আধুনিক যেন না হই। |