1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
প্রসঙ্গ মনুনদীর বালুঘাট ॥ গ্রামবাসীর গলার কাটা বালু বোঝাই ট্রাক - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

প্রসঙ্গ মনুনদীর বালুঘাট ॥ গ্রামবাসীর গলার কাটা বালু বোঝাই ট্রাক

উন্নয়ন প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ১৮ মে, ২০২২
  • ৬৫৫ পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কটারকোনা গ্রামের লুৎফুন বেগম। ১১ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মারজানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। বাড়ির পাশে নদীতে বন্ধুদের সাথে খেলা করতে গিয়েছিলো ছেলে মারজান। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি মারজানের। বালুমহালের ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন করা গর্তে পরে মারা যায় মারজান। এদিকে স্বামীর বাড়ির লোকজন মারজানের মৃত্যুর জন্য দায়ি করেন মারজানের মা লুৎফুন বেগমকে। এ নিয়ে স্বামীর বাড়ির সাথে লুৎফুন ও তার পরিবারের মলিমালিন্য হয়। এরপর আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে পারেননি লুৎফুন বেগম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময়ের খড়স্রোতা মনু নদীর তীরবর্তী গ্রাম কটারকোনা। এই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের আতঙ্ক এখন বালু মহাল। দীর্ঘ এক যুগ ধরে নদীগর্ভ থেকে উচ্চ শব্দযুক্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক, সেতু, নদীবাঁধ, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমি। এক সময়ের আশির্বাদ নদী এখন মানুষের জীবনে হয়ে উঠেছে দুর্ভোগের কারণ। এই বালু সিন্ডিকেটে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার কারণে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে কোন সুফল পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। বিশেষ করে বালু ঘাটের পার্শ্ববর্তী নয়াবাজার কৃঞ্চ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সহ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগে রয়েছে। এবিষয়ে সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে জেলার কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের সড়কে যাতে ট্রাক প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়েছেন স্থানীয়রা। এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বালু বুঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে নদী বাঁধের উপর নির্মিত সড়ক ভেঙে গেছে। যা এখন মানুষের চলাচলে অনুপযোগী। নদীর বাঁধে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় গর্ত। দিনরাত অনবরত চলা নদীর ড্রেজার মেশিনের কম্পন আর বায়ূ দুষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। কারো ঘরে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। আবার কারো কৃষি জমি ভেঙে চলে গেছে নদীতে। পাশেই অবস্থিত নয়াবাজার কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। সেখানেও শিক্ষার্থীরা শব্দদূষণের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেন না। গ্রামীন ছোট রাস্তা দিয়ে বালু বুঝাই ট্রাক চলাচল করায় শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতে পারেনা।

সুমন আহমদ বলেন, গ্রামবাসীর দাবী এই বালু উত্তোলন বন্ধ হোক। ব্রীজের খুব কাছ থেকেই বালু তুলা হচ্ছে। যার কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

আব্দুল গফফার বলেন, আমাদের এলাকা থেকে তারা জোরপূর্বক বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে বলে চাঁদাবাজীর মামলা দিবে। ধুলা বালুতে অতিষ্ঠ আমরা। আমার ঘরের সাথেই মেশিন। দিনরাত মেশিনের শব্দের কারণে ঘরে বসা যায় না।

জুলেখা বেগম বলেন, শিশুরা চলাচল করতে পারেন না। সবদিকেই আমরা সমস্যাগ্রস্থ। মেশিন রাতেও চলে দিনেও চলে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চব্বিশ ঘন্টাই যায়। বালু মহালদের আত্মকে দিনরাত কাটাতে হয়।

মোঃ সুফিয়ান মিয়া বলেন, আমরা রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। মেয়েরা স্কুলে-মাদ্রাসায় যেতে পারেন না। বালুমহালের শ্রমিকরা ইভটিজিং করে। গাড়ির ড্রাইভাররা মেয়েদের তাচ্ছিল্ল করে। গাড়ি ধাক্কা দিয়ে মানুষদের ফেলে দেয়। বাড়ি ঘরে বসবাসের অবস্থা এখন আর নেই।

সুলতান মিয়া বলেন, গত ত্রিশ বছর আমাদের গ্রামের রাস্তায় কোন সংস্কার কাজ হয়নি। বালু উত্তোলণের কারণে এলাকার শিশু মারা গেছে। তারা যা মনে চায় তাই করছে। কেউ অসুস্থ হলে যে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবো সেই সুযোগটাও নেই।

তালেব আলী বলেন, মেশিনের শব্দে ও কম্পনে আমার বসতঘর ফেঁটে গেছে। আমার ঘরে পিছনে বালু স্তুপ করে রাখায় সব গাছ মরে গেছে। তারা কোন নিষেধ মানতে চায় না বরং আমাকে আরো হুমকি দেয় মেরে নদীতে ফেলে দিবে।

ময়মুন বেগম বলেন, আমার ভাতিজি তার ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলো। বাচ্চাটা নদীতে খেলা করতে গেলে বালুর স্তুপের গর্তে পরে মারা যায়।

বালু মহালের অংশীদার রোমান আহমেদ বলেন, এ রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল নতুন কিছু নয়। ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয়দের কোনো অসুবিধা হয় বলে আমি মনে করি না। বরং আমরা প্রতি বছর রাস্তা মেরামত করি।

হাজিপুরের কটারকোনা গ্রামের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রুমেল বলেন, শিক্ষার্থীদের ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দূর্ভোগ পুহাতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে রোগী নিয়েও চলাচল করা কঠিন হয়ে যায়। সরকার কিভাবে এটা লিজ দিয়েছে সেটা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।

ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বলেন, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের অন্যতম কারণ বালু বুঝাইকৃত ট্রাক গাড়ি। বিষয়টি লিখিত ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। স্থানীয়দের স্বার্থে ওই ছোট রাস্তায় ট্রাক চলাচল না হওয়াটাই ভালো।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত আছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করবো। জনগণের যাতে দুর্ভোগ লাগব হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT