বিশ্ব মানবতা সেদিন বধির হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বগণতন্ত্রের পাহাড়াদারদের সেদিন মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। মুখথুবরে পড়েছিল বিশ্বমানবতার বাণী! বিশ্ব চলেগিয়েছিল হায়না পশুশক্তির দখলে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবা বৃদ্ধ সকলেই ভয়কাতর হৃদয়ে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিল। ভয়াবহ সেদিনটি খুবই নীরবে চলে গেলো। কয়েকটি পরিবারের কাছে কারবালার মাতমের মত ছিল সেই ১৩ই মে ১৯৭১সাল।
এ দিনটি জেলা মৌলভীবাজারের স্থানীয় ইতিহাসে ভয়াল এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন। দিনে-দুপুরে ধর্মের ধ্বজাধারী পশুশক্তি হায়না পাকি বাহিনীর সহযোগীতায় তাদেরই এদেশীয় দালাল রাজাকার আলবদর শক্তি চক্রের পাষণ্ডরা নিরীহ মানুষ ধরে এনে প্রকাশ্যে গুলিকরে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের এই দিনে মৌলভীবাজার শহরে সকাল থেকে মাইক যোগে মনুসেতুর উপর প্রদর্শনীর মাধ্যমে নরহত্যার প্রচার করেছিল হায়না সরকারের তাবেদার তৎকালীন ওসি তফজুল হুসেন।
সেনাবাহিনীর নামধারী পাকি পশুবাহিনী মানুষ হত্যার ঘোষণা দিয়ে দর্শক হবার জন্য বলপ্রয়োগে হাজারো মানুষকে নদীর পাড়ে জামায়েত করে এবং সকাল ৯-০০টা থেকে ৯-৩০মিনিট সময়ের মধ্যে প্রদর্শনীর মাধ্যমে মৌলভীবাজার মহকুমার তৎকালিন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মশাহিদ আহমদের প্রবাসী বাবা হাজী মোঃ উস্তারকে পাকি হানাদারবাহিনী গুলি করে হত্যা করে লাশ মনু নদীতে ফেলে দেয়।একই সাথে তার ভাই সিরাজুল ইসলাম(কলমদর)কেও গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। বিকেলে সিরাজুল ইসলামের বাবাকেও হত্যা করা হয়েছিল। সেদিনের সে ভয়াল চিত্র যারা দেখেছিল তাদের যারাই বেঁচে আছেন তাদেরকে দুঃস্বপ্নের সেদিনগুলো এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। এখনও শুধুই ভাবায়না, তাদের কাঁদায়ও!
শহীদ হাজী উস্তারের প্রবাসী সন্তান মশাহিদ স্বখেদে তার ফেইচবুকে লিখেছেন- “স্বাধীনতার ৫১বৎসরে মনু নদী দিয়ে অনেক পানি গড়াল অনেক কিছু হল আমরা অসহায় পরিবারগুলো উপযুক্ত বিচার তো পেলামই না এখন পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে ঘুরে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটুকুও ভাগ্যে জুটেনি। আজকের এ দিনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”
তার বাবা প্রয়াত হাজী উস্তার, তৎ ভ্রাতা কলমদর ও পিতা সিরাজুল ইসলাম সত্যিকার অর্থেই একেকজন শহীদ ও প্রশ্নাতীতভাবে খাঁটী মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আশা করবো স্থানীয় সরকারের জেলা দফতর সহ কেন্দ্রীয় সরকারের সকল স্থানীয় দফতর এ বিষয়ে যত্নবান হবেন সক্রিয় হবেন এবং নিজেদের উদ্যোগে এ ৩ শহীদের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তুলতে প্রয়াসী হবেন।