বিশ্বজিৎ রায়
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার ।।
শৈশবে পাঠকরা কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কবিতার ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’ এই চরণের কথা মনে করিয়ে দেয় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার দুইটি বাড়ি। যদিও অতীতের মতো গ্রামের বাড়িঘরের পাশে গাছের ডালে পাখির কলরব এখন আর চোখে পড়ে না। কিন্তু কমলগঞ্জের এই বাড়িটি তার ব্যাতিক্রম । এখানে গড়ে উঠেছে পাখিদের একপ্রকার অভয়ারণ্য। তবে পাখির নিরাপদ এই আবাসভূমিতে শিকারীদের তৎপরতায় পাখির প্রজননসহ নিরাপদ আবাসভূমি বিনষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সরিষকান্দি গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও তার প্রতিবেশী আতাউর রহমান খানের বাড়ির লোকজনের রাত পোহায় এখন পাখির কলকাকলি আর কিচির-মিচির শব্দে। পাখির সঙ্গে অনন্য মিতালী গড়ে উঠছে এই দুই বাড়ির লোকজনের। এই দুই বাড়ির বাঁশঝাড়ে দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর ধরে নিরাপদ আবাসভূমি গড়ে তুলেছে বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় যে কারো নজরে পড়বে ধবধবে সাদা, সোনালী বকসহ বিভিন্ন জাতের পাখি ও তাদের কিচির-মিচির শব্দ আর এদিক-সেদিক লাফালাফির দৃশ্য। সকালে আর বিকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দ গোটা বাড়ির পরিবেশকে মাতিয়ে রাখে। ইচ্ছে লে আপনিও কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় ঘুরে আসতে পারেন পাখির এই অভয়ারণ্যটি।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে ওই বাড়ির যুবক নাহিয়ান খান জানান, কয়েক বছর ধরে এসব পাখি তাদের দুইটি বাড়ির বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে অবাধে বিচরণ করছে। সকালে ও বিকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দ দূর থেকেই শোনা যায়। সকালে খাবারের উদ্দেশ্যে সব পাখিই বেরিয়ে পড়ে। আবার বিকালে ধীরে ধীরে বাসস্থানে ফিরতে থাকে। নাহিয়ান আরো জানান, তাদের বাড়ির পিছনের ফিশারিসহ আশপাশ এলাকার আবাদী জমি থেকে পাখিরা খাবার খুঁটে খায়। তবে পাখির নিরাপদ আবাসভূমি হলেও এখানে কিছুসংখ্যক শিকারীর অপতৎপরতা রয়েছে। এসব শিকারী বন্দুক নিয়ে সন্ধ্যায় গোপনে পাখি শিকারের চেষ্টা করে। তবে বাড়ির লোকজনের কারণে তারা সফল হয় না।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি বিভাগের মৌলভীবাজারস্থ বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কুমার দে বাড়ির লোকজনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাড়িতে পাখির আবাসভূমি খুবই ইতিবাচক ঘটনা। তবে সার্বক্ষণিক বন্যপ্রাণি বিভাগের পক্ষ থেকে নজরদারি করতে না পারলেও সুনির্দিষ্টভাবে পাখি শিকারীদের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।(মৃদুভাষণ থেকে)