-ড. মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামীলীগ উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলে দেশকে দুর্নীতির জোয়ারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এই দেশে জনগণের সরকার নেই। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল, বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আজকের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে, কেন বলতে হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই, দেশে ভোটাধিকার নেই।
বুধবার(৯ নভেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের রেস্ট ইন হোটেলের কনফারেন্স হলে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার বিএনপির সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সারাদেশের বিভাগীয় পর্যায়ে দশটি গণ সমাবেশ করছে। এর মধ্যে সিলেটের গণসমাবেশ সাত নম্বর। এরইমধ্যে পাঁচটি সমাবেশ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন প্রত্যেকটি সমাবেশ সফল। লক্ষ লক্ষ লোক। তারা কেন এসেছে, একটি মাত্র কারণ। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তারা কেন এসেছে, তারা এদেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পূন:প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, গনতন্ত্রের কথা ছিল এক নম্বরে। আরেকটা দুই নম্বর কথা ছিল, সেটা ছিল এ দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আজকে দেশে কি অবস্থা হয়েছে, গুটি কয়েক মানুষ ও একটি গোষ্ঠি শোষণ করছে।
ড. আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নাই। ভোটের অধিকার নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দিশেহারা মানুষ। দরিদ্র মানুষ কি চায়, তারা কি লক্ষ লক্ষ টাকা চায়? তারা পেট ভরে তিনবেলা ভাত খেতে চায়। দরিদ্র মানুষ চায় পাঁচ বছর পরে স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচিত করবে। একসময় আওয়ামীলীগ তো নিজেই বলতো, আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব। আজকে তারা এটা বলে না কেন? এখন আওয়ামীলীগ বলে, আমার ভোট আমি দিব-দিনের ভোট রাতে দিব। এখন দিনের ভোট রাতে দিলে, ভোটের অধিকার তো আর মানুষের থাকে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আজকে বিএনপি আন্দোলন করছে; দ্রব্যমূলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য। সেই আন্দোলন করতে গিয়ে আমার দলের সাত জন ভাইকে শহীদ হতে হয়েছে। সেই কারণে সারাদেশের সর্বস্তরের ক্ষুব্দ মানুষ আজ বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং আমরা যারা নেতৃত্বে আছি আমরা যেন সতর্ক হই। যারা যেখানে দায়িত্বে আছেন তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। পেছনে পরে গেলে অলঙ্কার হিসেবে যে পদ আছে, সেটা থাকবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। যতরকমের প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, সবকিছু অতিক্রম করে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগকে সরাতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, সরকারের শত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সারাদেশে বিএনপি গণসমাবেশে যেভাবে ট্রেনে, নৌপথে, পায়ে হেঁটে সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকে এই শেখ হাসিনা সরকারের গদিকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। সিলেটের সমাবেশেও মৌলভীবাজারের পক্ষ থেকে বিশাল গণ সমাবেশে দলে দলে যোগ দিয়ে মহাসমাবেশের রূপ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় রাখা যাবে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ হিটলারের প্রেতআত্মা। এই আওয়ামীলীগ ১৬৪ দিন দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে গলা চিপে ধরে চিটাগাং পোর্ট বন্ধ করে দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের জন্য জ্বালাও পোড়াও লগি বৈঠার আন্দোলন করেছিল। এই তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে, আওয়ামীলীগ দেশেকে অচল করেছিল। সেদিন দেশকে রক্ষা করার জন্য বেগম জিয়া তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ষষ্ঠ সংসদে পাশ করেন। অথচ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে এই পদ্ধতিকেই বাতিল করলো। এখন তারাই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দিনের ভোট রাতে করছে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। যত বাধাই আসুক তা পেরিয়ে দলের সকল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।