প্রাচীন কাল থেকেই নদ-নদীর কিনারায় মানুষের আবাস্থল গড়ে উঠেছে। সেই যুগে সড়ক পথ গড়ে না উঠায় মানুষ নৌপথে চলাচল করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। কালের আবর্তে সড়ক পথ তৈরি হওয়ায় নদী পথ হারিয়ে ফেলেছে তার জৌলুস। কুশিয়ারা নদীর পাড় ঘেঁষে সেই আদী কাল থেকেই স্থানীয় জমিদার থেকে শুরু করে নিম্ন শ্রেনীর মানুষ বসতি স্থাপন করে আসছেন। এখন সেই নদী বেঁচে আছে মৃত অবস্থায়। শ্রোত নেই আগের মত। সরকারি তদারকিতে নদী খনন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদী ফুলে উঠে কিনারার মানুষকে দূর্ভোগে ফেলে প্রতি বছর। এই স্থায়ী দূর্ভোগের শিকার হন মৌলভীবাজার জেলার সদর ও রাজনগর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ। ১৯৭৫-৭৬ সালে নদী কিনারা দিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড “মনূ সেচ প্রকল্প” নামে একটি বেড়ি বাঁধ প্রকল্প তৈরি করে। ২২ হাজার ৫শ ৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে কাউয়াদীঘি হাওরের কিনারা ও কুশিয়ারা নদী ঘেঁষে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই বাঁধ নির্মাণের সময় নদীর কিনারার প্রায় ২৫/৩০টি গ্রামকে ওই বাঁধের বাহিরের নদীর কুলে রাখা হয়। বাঁধ নির্মাণের পর হাওরে নদীর পানি প্রবেশ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ফুলে উঠে পাড়ের বসতিতে আঘাত হানে কুশিয়ারা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বকশিপুর, ছিক্কাগাঁও, কামালপুর, আমনপুর, সুরিখাল, যুগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, জোড়াপুর, রামপুর ফতেপুর ইউনিয়নের সাদাপুর, বিলবাড়ি, হামিদপুর, বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর, রশীদপুর, ইসলামপুর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া, খলিলপুর ও মনূমুখ ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ। বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অবহেলিত ওই নদী পাড়ের মানুষের আধা-পাঁকা, পাঁকা দালাকোঠা, ফিসারী, গবাদি পশু, সবজিবাগানসহ অনেকের শিশু সন্তানেরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। এতে প্রতি বছর ক্ষয়ক্ষতি হয় ১ কোটি টাকার উপরে। নদী দ্রুত খনন করে খননকৃত মাটি বন্যাক্রান্ত এসব নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে ভরাট করলে স্থায়ী একটি সমাধান আসবে বলে মনে করছেন নদী পাড়ের মানুষসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিগণ। বন্যা মোকাবেলায় নদী পাড়ের স্থানীয় কান্দিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হলেও জলমগ্ন মানুষেরা নিজের ভেটে মাটি ফেলে ওই কেন্দ্রে আসতে চান না। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় গেলে দেখা যায়, নদী পাড়ের গ্রামগুলো যেন নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরেজমিনে উত্তরভাগ ইউনিয়নের ভাটি এলাকার বেশ কটি গ্রামে গেলে কথা হয় বন্যাক্রান্ত মানুষের সাথে। তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে ৭ থেকে ৮ মাসের দীর্ঘ বন্যায় তাদের কাঁচা ঘরবাড়ি মাটিতে ফেলে দেয়। নিজেদের ভিটে মাটি ফেলে কোথাও তারা যেতে রাজি নন। সরকার যদি নদী খনন করে ওই মাটি তাদের বসত-বাড়ি ভরাট করে তবেই এর স্থায়ী সমাধান হতে পারে।
ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেড়কুড়ি গ্রামের মাহমদ মিয়া বলেন, নদীর পাশের খাল-বিল বন্ধ থাকায় শ্রোত কমে গিয়ে ফুলে বসত বাড়িতে উঠে। তিনি জানান, নদী খনন করে নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতভিটায় মাটি পৌছে দেয়া হলে বন্যার্ত মানুষ উপকৃত হবে। রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ামরম্যান নকুল চন্দ্র দাশ বলেন, কুশিয়ারায় ঘর-বাড়ি জলমগ্ন একটি প্রাকৃতিক বন্যা। এটা থেকে বন্যার্তদের রক্ষা পেতে হলে নদী খনন করে পানি উন্নয়নের একোয়ারের নালাগুলো যদি ভরাট করা হয়, তবে মানুষ কুশিয়ারার থাবা থেকে রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, এর ফলে পাউবো’র বাঁধ নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে মুক্তি পাবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল সোমবার দুপুরে এক প্রশ্নের জবাবে জানান,কুশিয়ারা নদীর পাশের্^র আমাদের যে মনূ সেচ প্রকল্প বাঁধ রয়েছে সেটি দেখভাল করার দ্বায়িত্ব আমাদের। বাঁধের বাহিরে(নদীর কিনারা) জলমগ্ন এলাকা নিয়ে আমরা কিছু করতে পারছি না। এই দ্বায়িত্ব আমাদের না।