মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বনাঞ্চল এলাকায় ক্রয় সুত্রে(৪৬ শতক) জমির মালিক দাবি করে বিক্রির সাইনবোর্ড টাঙানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. জাহেদুর রহমান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির নামে।
স্থানীয়রা জানান, লাউয়াছড়া বন সৃষ্টির পর থেকে এই জমি বন বিভাগের দখলে ছিল, এখন এই জমি ব্যক্তি মালিকানার বলে বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড টাঙানো। এর আগেও এভাবে বনের অনেক জায়গা দখল করা হয়েছে। সাইনবোর্ডে জমির মালিকানা দাবি করা জাহেদুর রহমান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে সাইনবোর্ডে দেয়া নম্বরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে শাহীন মিয়া নামে এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে নিজেকে জাহেদুর রহমানের গাড়ি চালক পরিচয় দিয়ে বলেন, জমির মালিক লন্ডন প্রবাসী। তার বাসা শ্রীমঙ্গল শহরে। জমিটি তিনি ক্রয়সুত্রে মালিক হয়েছেন। আমরা বন বিভাগের নির্দেশে সাইনবোর্ড অপসারণ করে আমাদের কাগজপত্র তাদের কাছে দিয়েছি। জায়গা যদি বনের হয় তাহলে আমরা জায়গা বনকে দিয়ে আসবো।
এ বিষয়ে লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সাইনবোর্ড সরানো হয়েছে। বনের জায়গার পাশে যদি উনার জায়গা থাকে তাহলে আমাদেরকে কাগজপত্র দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। আবার যদি সাইনবোর্ড টাঙানো হয় তাহলে মামলা দেওয়া হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে ৬ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য অভিযুক্তকে থানায় সোপর্দ করলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ধর্ষনের শিকার শিশুর মা বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
গত শনিবার (৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শমশেরনগর চা বাগনের ৬ নম্বর টিলায় এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার শিশু মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শমশেরগর চা বাগানের ৬ নম্বর টিলার সানমুন্না রেলীর ছেলে দিপু রেলী (১৭) তার ঘরে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ঘরের ৬ বছর বয়সের জনৈক শিশুকে ধর্ষন করে। এর কিছুক্ষণ পরে শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় ফেরত এসে হাল্লা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন পাশের ঘরের লোকজন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াকুব মিয়ার কাছে নিয়ে গেলে তিনি শিশুসহ ধর্ষক দিপু রেলীকে থানায় নিয়ে যান। পরে ধর্ষনের শিকার শিশুর মা সাঙমা রেলী বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় দিপু রেলীকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ধর্ষিত শিশুটি স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।
শমশেরনগর চা বাগানের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইয়াকুব মিয়া জানান, রাস্তায় খেলাধুলা করছিল শিশুটি। এ সময় ছেলেটি শিশুকে ঘরে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর শিশুটি বাড়িতে ফিরে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। একপর্যায়ে শিশুর পরিবারের লোকজনকে ধর্ষণের বিষয়টি জানালে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে ধর্ষক দিপুকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারগুলোতে বেড়েছে পিঁয়াজ, তেল, আলু, চিনি, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। খুচরা বাজারে কেজিতে ৩০ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। বিশেষ করে, ভোজ্যতেল, পিঁয়াজ ও আলুর পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষেরা। অনেক দোকানে আগের মূল্যের পণ্য থাকা সত্বেও নতুন দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। ফলে দাম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়তে হয় ক্রেতাদের। উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর, মুন্সীবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
খুচরা বাজারে খোঁঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে বেড়ে ২০০ টাকা, পিঁয়াজ ৪০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, আলু ২০ থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, চিনি ১২০ থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা, রসুন ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আদা ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, রাধুনি মরিচের গুড়া কেজি প্রতি ২০০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, রামাইস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতি পিছ লাউ ৫০ থেকে ৯০, মিষ্টি লাউ আকার বেধে ৫০ থেকে ১৩০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, জিঙ্গা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেরস ৫০ টাকা ও লেবুর হালি আকার বেধে ২০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ কম থাকায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। চাহিদা অনুপাতে বাজারে পণ্য আসলে দাম কমে যাবে।
দিনমজুর রুবেল মিয়া বলেন, পুরা সপ্তাহে একদিনও মাছ মাংস বা ডিম জুটছে না এর মাঝে আবার তেল, চিনি, পিঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমার মতো অনেক মানুষ আছে যারা কষ্ট করেও পরিবারের মুখে দুবেলা ভাত দিতে পারছেনা। সারাদিন কাজ করে ৪০০ টাকা রুজি করি ৫ জনের পরিবার কোন ভাবেই চলে না এ টাকা দিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেজি স্কুলের শিক্ষক বলেন, চার হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি, ৩টা টিউশনি করে আরও ৩ হাজার টাকা পাই। ৭ হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাস কোনভাবেই পরিবারের খরচ চালাতে পারছিনা। আমার অবস্থা এতটাই করুন কারো কাছে হাত পাতর শুধু বাকি আছে। এই অবস্থায় নতুন করে প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আবার বেড়েছে। ব্যবসায়ী বেলাল মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ার কারণ জানার জন্য বাজার মনিটরিং করছি। ব্যবসায়ীরা যদি অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করেন তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। পর্যটন এলাকা কমলগঞ্জে কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের দাপট নাজেহাল জনজীবন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে আরও কয়েকদিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুসারে মৌলভীবাজারসহ সারাদেশের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। মঙ্গলবার (৯ মে) শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই মৌলভীবাজার জেলার তাপমাত্রার পারদ ৩০ থেকে ৩৭ ডিগ্রিতে বিরাজ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে।
প্রচন্ড তাপদহে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। আবার কিছু মানুষ অনেকটাই কাজের চাপে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু স্বস্তি পেতে গাছ বা বড় বড় ভবনের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ও গামছা ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবনে তীব্র গরমের প্রভাব পড়েছে অত্যধিক। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের কাজের তাগিদে।
টমটম চালক মেরাজ মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে এতো রোদ ও গরম পড়ায় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে। ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারছি না। কী আর করবো। কাজ না করলে তো আর সংসার চলবে না। কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোরো ধান কাটতে আসা শ্রমিকেরা তীব্র এ গরমে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। খুব ভোরে মাঠে কাজে যেতে হয়। দুপুরের আগেই গরমের কারণে বাড়ি ফিরতে হয়। শমশেরনগর বাজারের নিবাস চন্দ বলেন, এই রোদে অবস্থা খবই খারাপ। বাড়ি থেকে বের হলেই বিপদ। কিন্তু সংসারের খরচাপাতি তো গরম বুঝেনা। যাই হোক অনেক কষ্ট করে বাজারে এলাম। বাজার করেই চলে যাব, আর দেরি করব না।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রার পারদ ৩০ থেকে ৩৭ ডিগ্রিতে বিরাজ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসও রয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চুরি ডাকাতি ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার রাত ৮টায় উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুসন আলীর সভাপতিত্বে ও শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি শাব্বির এলাহী, কমলগঞ্জ থানার এসআই কামরুল হাসান, এএসআই হিমু বড়ুয়া, সমাজসেবক হাজী জয়নাল আবেদীন, নারী ইউপি সদস্য গুলনাহার বেগম বেনী, ইউপি সদস্য আজিম মিয়া। সভায় এলাকার আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন, চুরি, ডাকাতি ও মাদক প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানানো হয়।