ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে বৃটেন থাকবে কি না এ নিয়ে আসন্ন জুন মাসের ২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গনভোট। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ এখন খুব সরগরম। সকল দল ও ক্ষুদ্রদল সবার নিজ নিজ স্বার্থ বিবেচনায় রেখে কথা বলছেন। লেবার দল ইইউ’তে থাকতে চায় আবার প্রধান মন্ত্রী ক্যামেরুনের নেতৃত্বে একটি খন্ডাংশ ছাড়া পুরো রক্ষনশীল দল বের হয়ে
আসতে চায়। ইতিমধ্যে ৩৬টি সর্ববৃহত বৃটিশ ব্যবসা কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিগনের নাম দিয়ে একটি পত্র প্রকাশ হয়েছে বিবিসি বলেছে, যেখানে তারা সাধারণ ভোটারদের ইউনিয়নে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বিপরীতে, “ভোট লিভ”, অর্থাত থাকতে নারাজীদের দল, ২৫০ জন বড় ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করেছে(গার্ডয়ানের খবর) যারা বৃটেনের ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেড়িয়ে আসাকে সমর্থন করেন। এ তালিকায় রয়েছেন HSBC ব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী মাইকেল জিওঘেগান, “Phone 4 you” এর প্রতিষ্ঠাতা জন কডওয়েল এবং হোটেল ব্যবসায়ী স্যার রক্কো ফর্থ।
বিবিসি’র ব্যবসা প্রতিনিধি জো লাইনাম এর মতে “ভোট লিভ” এমন একজনেরও নাম বলতে পারবেন না যিনি বা যারা ব্যবসায়ী হিসেবে বলবেন যে তারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে চান। যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে তাদের মত জানিয়েছেন।
“ভোট লিভ” এর প্রধান কর্মকর্তা মেথিউ এলিওট এ নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং বলেছেন ব্যবসা সমর্থনকারীদের তালিকা বেড়েই চলেছে। “ভোট লিভ” ঘোষণা দিয়েছে, বৃটিশ চেম্বার্স অব কমার্স এর ডাইরেক্টর জেনারেল জন লঙ্গওয়ার্থ, যিনি ইতিমধ্যেই এমাসের প্রথমভাগের দিকে তার পদ ত্যাগ করেছেন এবং “ভোট লিভ” এর আসন্ন ব্যবসায়ী সন্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করবেন। শুধু তাই নয়, “ভোট লিভ” এর প্রচারে এ পর্যন্ত যেসব ব্যবসায়ীনেতা সমর্থন জানিয়েছেন তারা হলেন- বৃটিশ হোভারক্রপ্ট কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমা
পোলেন, বৃটেনে ও ইউরোপের কেন্দ্রে টেস্কোর কাপড় ব্যবসার প্রধান নির্বাহী জন হোনার, “পেটিসারি ভ্যালেরি”র সভাপতি লুক জনসন, “বেটার ক্যাপিটেল এলএলপি”র প্রতিষ্ঠাতা জন মোলটন, “থিও ফেনেল পিএলসি”র পরিচালক রুপার্ট হ্যামব্র, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স সমিতি’র সভাপতি পাশা খন্দকার, “হারউইন পিএলসি”র সভাপতি ডেমন ডি লাজলো, “ইকুইটেবল লাইফ”এর প্রাক্তন সভাপতি জন স্ক্লেটার।
বিপরীতে, এই গণভোটের উপর দাপ্তরিকভাবে বিবিসি নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলবে এমন ব্যবস্থার মধ্যে বিবিসি’র প্রধান বলেছিলেন যে
ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসলে বৃটেনের দীর্ঘমেয়াদী প্রত্যাশা উজ্জ্বলতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মন্তব্যের জন্য তাকে প্রত্যাহার করা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। “Vote Leave”দের ব্যবসায়ী পর্ষদ বলতে চেষ্টা করছে যে ইইউ’র সদস্য থাকলে বৃটিশ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পেছনে পড়ে রইবে। মিঃ লঙ্গ ওয়ার্তের ভাষায়, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য নামক শেকল থেকে মুক্ত হতে পারলে আমাদের চাকরী নিরাপদ হবে, আমরা আমাদের টাকা আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খরচ করতে পারবো। ফলে আমরা আমাদের উতপাদন বাড়াতে সামনের দিকে তাকাতে পারবো ভবিষ্যত বৃহত উন্নতির জন্য। তাদের মতে ইইউ সদস্যপদ বড় বড় ব্যবসার জন্য যুক্তিযুক্ত হতে পারে কিন্তু ছোট ছোট ব্যবসার জন্য কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
ভিন্ন চিন্তার কথা বলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত ব্যবসা সচিব মিঃ সাজিদ জাভিদ। তিনি ইইউ’তে থাকার পক্ষে। বিভিন্ন জরীপের কথা উল্লখকরে তিনি বলছেন যে- দেখা গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ইইউ’তে থাকতে চায়। বৃটিশ টেলিকমের চেয়ারমেন স্যার মাইক রেক’ও ইইউ’তে থাকার পক্ষে।
ফাইনেনসিয়াল টাইমস ও লন্ডন ষ্টক এক্সচেঞ্জের ১০০টি বড় বড় কোম্পানীর তিন ভাগের একভাগ গেল মাসে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে মত প্রকাশ করার ফলে ইউরিপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসাকে সমর্থনকারীরা কঠোর সংগ্রাম করছেন তাদের পক্ষে মত আদায়ে। আর এসবের মধ্যেই রয়েছে উপরের কিছু কিছু সফল চৌকুস মেধাবী ব্যবসায়ীদের নাম। অথচ “কারফোন ওয়ার হাউস”এর যৌথ প্রতিষ্ঠাতা স্যার ষ্টুয়ার্ট হুইলার ও ডেভিড রস’দের সুসম্পর্ক রয়েছে UKIP আর রক্ষনশীলদের সাথে।
বিবিসি ও ব্যবসা প্রতিনিধি জো লাইনাম, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ থেকে সংগৃহীত।