মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে দুর্লভ প্রজাতির একটি ‘হলুদচিতি-ঘরগিন্নি’ সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের সময় ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার্থে সাপটি কুণ্ডলি পাকিয়েছিল। শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগান এলাকা থেকে সাপটি উদ্ধার করে স্থানীয় বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে দু
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ভুরভুরিয়া চা বাগানের বাংলোতে সাপটি দেখতে পান বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল চা বাগানের বাংলো থেকে সাপটিকে উদ্ধার করেন।
শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক এএইচএম সাদিকুর রহমানের বাংলোতে হলুদচিতি-ঘরগিন্নি সাপ দেখে পরিবারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে তারা বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে খবর দিলে তারা সাপটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।
স্বপন দেব বলেন, উদ্ধারের পর অনেক চেষ্টা করেছি সাপটিকে লম্বা করে একটি ছবি তোলার জন্য কিন্তু সম্ভব হয়নি। ভয় পেয়ে সাপটি কুণ্ডলি পাকিয়েছিল।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হলুদচিতি-ঘরগিন্নি’ সাপটির শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হবে।
এই সাপের নাম ‘হলুদচিতি-ঘরগিন্নি’ বলে জানা যায় এরা মূলত নিশাচর প্রজাতির সাপ। লাজুক প্রকৃতির এই সাপকো কেউ কেউ ‘হলুদছাপ-ঘরগিন্নি’ সাপও বলে থাকেন। ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে এরা নিজের শরীরের কুণ্ডলি পাকিয়ে মাথাটাকে লুকিয়ে ফেলে। সেটা সোজা হয়েও থাকতে পারে আবার উল্টোদিকেও থাকতে পারে। এই প্রজাতির অপ্রাপ্তবয়স্ক সাপগুলোর মাথার পেছেনে সাদা বা হলুদ দাগ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ওই সাদা বা হলুদ দাগগুলো চলে যায়। তখন পুরো শরীরে হলুদ ফোটা ফোটা দাগ চলে আসে।
বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনে এরা থাকে। তবে এই সাপ পাহাড়ি অঞ্চলের বাইরে ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরেও দেখা গেছে।
শ্রীমঙ্গলে মাঘের শীতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে যুবা-তরুনদের সংগঠন “অধ্যায়”। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শ্রীমঙ্গলের মননশীল শিক্ষার্থীদের যুব-সংগঠন “অধ্যায়” এর তৃতীয় বর্ষের আয়োজন ছিল এটি।
পিঠা শুধু লোকজ খাদ্য নয়, এটা বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য। বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ পিঠা। বাঙালির এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে তৃতীয়বারের মতো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করে ‘অধ্যায়’ নামের সংগঠনটি।
আয়োজন সফলভাবে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় সংগঠনের সদস্যদের কর্মতৎপরতা ও আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরো আয়োজন জুড়ে পরিবেশ ও শৃঙ্খলায় আগত অতিথি ও দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোডস্থ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত অবধি। ছিল নানা বর্ণ, সাজ ও স্বাধের পিঠাপুলি, হালকা খাবার, কুটির শিল্পসহ নানা ধরনের বিক্রয় স্টল। এছাড়াও উৎসব আনন্দে সময় কাটানোর জন্য ছিল শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। উপস্থাপনায় ছিল বৃষ্টি, সুদীপ্ত ও মাহজাবীন।
জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নবনিযুক্ত কৃষিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সরদার মোস্তফা শাহীন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব, সহকারী কমিশনার(ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ রায়, তদন্ত ওসি আমিনুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালি দত্ত, লেখক কবি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য, জেরীন চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানাজার সেলিম রেজা প্রমূখ।
আমন্ত্রিত অতিথিরা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। শীতকালীন পিঠা উৎসবে অন্তত ১০টি স্টল বসানো হয়। এ সব স্টলে রকমারি পিঠার পসরা সাজিয়ে রাখা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিটি স্টলেই ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করা এই পিঠা উৎসবে এসে তারা বিভিন্ন স্বাদের পিঠা উপভোগ করেন। পিঠার স্বাদ উপভোগের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল উপছে পড়া ভীর। এবারে নানা বর্ণ, সাজ ও স্বাদের পিঠাপুলি হালকা খাবারসহ নানা ধরনের বিক্রয় স্টল ছিল প্রায় ১০টি। এর মধ্যে সেরা হয়েছে ‘ঘরোয়া কিচেন’ নামক স্টলটি।
“অধ্যায়” এর পিঠা উৎসবের আনন্দ আয়োজনকে সফল করতে অনেক গুণীজন সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পিঠা উৎসবে আসা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়শ্রী চৌধুরী শিখা বলেন, ‘পিঠা উৎসব আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব হতো। যদিও বর্তমান সময়ে পিঠার ঐতিহ্য ম্লান হতে যাচ্ছে। পিঠা উৎসবের মতো দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় অংশ নিয়ে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে অধ্যায় এর ন্যায় নতুন প্রজন্মকে আরো এগিয়ে আসতে হবে।’
অধ্যায় সংগঠনের আহ্বায়ক ভূপেন সেন বলেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, ষড়ঋতুর শীতকালে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে পিঠা উৎসব। এই পিঠা উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা তৃতীয়বারের মতো এবারও আয়োজন করেছি পিঠা উৎসব ২০২৪। যদিও আমরা অধ্যায় পিঠা উৎসব ২০২০ সাল থেকে শুরু, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুইবছর আমরা পিঠা উৎসব আয়োজন করতে পারিনি। এসব আয়োজন অনেক কষ্টসাধ্য, তারপরও আমরা সাধ্যমতে চেষ্টা করেছি। আমরা একঝাঁক উদ্যোগী শিক্ষার্থী মিলে এবারের আয়োজনটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বীত ও আনন্দিত। প্রতিবারের ন্যায় আগামীতে সবার সহযোগিতা পেলে আরো ভালো করে বড় পরিসরে এই পিঠা উৎসব আয়োজন করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।
অধ্যায় সংগঠনের সদস্য প্রজ্ঞা পারমিতা চৌধুরী বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো অধ্যায়ের পিঠা উৎসব হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলের মতো শহরে পিঠা উৎসব হওয়া এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমরা সবাই খুবই আনন্দিত, পরিবারের সবাই এই আনন্দে অংশগ্রহণ ও উপভোগ করছেন। পিঠা উৎসবে অনেক দর্শক সমাগম ঘটেছে। শুধু পিঠা উৎসবই নয় তার পাশাপাশি দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। দর্শকরা আনন্দের সহিত উদযাপন করছেন।’