একজন বাবু সরকারের ফেইচবুকের একটি ছবি দেখে ভাবলাম, দেখি না এ সমস্যাটি শুধুই কি বাংলাদেশে না-কি দুনিয়ার আর কোথায়ও আছে। খুঁজতে গিয়ে, বিশেষ কোথায়ও যেতে হল না। বিবিসি’তে পেয়ে গেলাম আশাতীত হুবহু একই খবর। রাস্তার বে-হাল দশা।
একটু হাস্যরস দিয়েই বিবিসি লিখছে, আপনার এলাকার রাস্তাঘাট যদি ভাঙ্গাচোরা ছোট-বড় গর্তে ভরা হয় তা’হলে কি করবেন আপনি। মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি লিখবেন? সামাজিক মাধ্যমে লিখবেন? আর না হয়, রাস্তার গর্তগুলোর বড়টিতে বসে গোসল করে নেবেন?
আর ঠিক তাই, প্রতিবাদের এক শক্তিশালী প্রতিকী রূপ কল্পে রাস্তার গর্তে বসে গোসল করেছেন ‘পাম’ নামের বেংককের এক মডেল কন্যা। ঘটনাটি থাইল্যান্ডের ‘টাক’ প্রদেশের ‘মায়ে রমত’ জেলার। মডেল ‘পাম’ তার বাড়ীর সামনের রাস্তার ওই দশায় অতিষ্ট হয়ে শেষমেশ এই গোসলের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই প্রতীকি প্রতিবাদের ছবি শুধু থাইল্যান্ড নয় সুদূর চীন পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম পৌঁছে দেয়। হাসতে থাকে বিশ্ব সভ্যতা! ‘পাম’এর এই প্রতীকি প্রতিবাদ অনুসরণ করে অন্যান্যরা।
সম্ভবতঃ ‘পাম’কে অনুসরণ করেন উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের ‘চাইয়ামপুম’ প্রদেশের এক মহিলা। তিনি হলুদ রংয়ের কাপড় পড়ে গোসলের ভঙ্গিমায় পা উপরে তুলে পানিতে শু’য়ে প্রতিবাদ জানান। একইভাবে ওই উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের ‘খনকায়েক’ প্রদেশের কতিপয় দাদী-নানীর একটি ছোট দল অনুরূপ প্রতীকি প্রতিবাদ জানান। অবশেষে সরকার নড়ে-চড়ে উঠে বসেন এবং তড়িৎ কাজের নির্দেশ দেন।
অবশ্য রাস্তার এই ভাঙ্গাচোরা গর্ত সমস্যা শুধু থাইল্যান্ডেই নয় বলতে গেলে সারা বিশ্বব্যাপী এর ভয়ালরূপ দৃশ্যমান! গেল বারও ভারতের বেঙ্গালুরে শিল্পী বাদল ননজুন্দাস্বোয়ামী একটি জীবন্ত কুমীরসম ভাষ্কর্য্য নির্মাণ করে রাস্তার অনুরূপ একটি ‘মৃত্যুফাঁদ’এ বসিয়ে রাখেন। বাদলের এলাকার ওই পথগর্তটিও মেরামত হচ্ছিল না দীর্ঘদিন যাবৎ। অবশেষে তাকে এই শৈল্পিক প্রতীকি প্রতিবাদ করতে উৎসাহ জোগায়।
এখানেই শেষ নয়, অত্যাধুনিক সভ্যমানুষের দেশ, গণতন্ত্রের সূতিকাগার এই বৃটেনও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও ভাঙ্গাচোরা রাস্তা আর পথগর্ত দুর্লভ নয়। এই তো গত বছরের প্রথম দিকে উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের এক স্বঘোষিত পথশিল্পী(অংকন শিল্পী) কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার এলাকার রাস্তায় অনুরূপ কিছু গর্তের প্রতিটির পাশে পুরুষ লিংগ অংকন করে রাখেন। ‘বারি’ কাউন্সিল অবশ্য তার এই প্রচেষ্টাকে ‘অশ্লীল’, ‘মূর্খ’ ও ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তারা আরও বলেছিলেন- নোংড়া এই শিল্পকর্ম দিয়ে তড়িৎ কাজ করানো যাবে এমন ভাবনা সঠিক নয় বরং বেহুদা আমাদের মুল্যবান সময় ও সম্পদের অপচয় করা হয়েছে।
“গেরিলা গার্ডেনার” নামে খ্যাত ‘স্টিভেন হুইম’ কিন্তু ভাঙ্গাচোরা রাস্তার জন্য প্রতিবাদের এক ভিন্ন নান্দনিক প্রতীকি’র আবিষ্কারক বলতে পারি। তিনি রাস্তার যেখানেই গর্ত দেখেন সেখানেই কিছু মাটি দিয়ে ভরাট করে কয়েকটি ফুল গাছ রূপন করে ছোট-খাটো একটি বাগানের রূপ দেন। এটিই তার প্রতিবাদের প্রতীকি রূপ।
আর সূচনাতেই তো বাংলাদেশের কথা বলেছি, সেখানে তো রাস্তায় এ ধরনের ভাঙ্গাচোরা, খাদ-গর্ত বেহিসাব। এইতো গতকালের বিষয়, খবরের শুরুতে কিছুটা উল্লেখ করেছি। গতকাল বুধবার ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৬, নকলা উপজেলার বাবু সরকার তার ফেইচবুকে অনুরূপ একটি ছবি ও দুঃখময় কাহিনী বিবৃত করেছেন। সন তারিখ দিয়ে তিনি লিখেছেন যে মেরামতের দরপত্র হয়ে কার্যাদেশ দেয়ার পরও পড়ে আছে, ঠিকাদার কাজ শুরু করছে না। যে কাজ গত জুনে শেষ হবার কথা তা এই সেপ্টেম্বরে এসেও শুরুই হয়নি।
বাবু সরকারকে বলবো পাশের বড় গর্তটিতে ঘটা করে গোসল করে নেন। দরপত্র আহ্বানের পর বছর পার হয়ে গেছে কাজই শুরু হয়নি তো কি আর করবেন!
(মূল খবর বিবিসি থেকে অনুদিত, সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ)