ভারত কোন বন্ধু রাষ্ট্র নয় আমাদের বুঝতে হবে ভারত একটা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। ফলে সে তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সকল ধরনের অন্যায় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাথে করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না, ভারত সকল আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখায় বাংলাদেশের নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। তিস্তায় বাঁধ দিয়ে উত্তরবঙ্গকে মরুভূমি বানানো হচ্ছে। আবার যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন সকল গেইট খোলে দিয়ে বন্যার পানিতে বাংলাদেশ ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সকল স্বাধীনতাকামী জনগণ নির্বিচারে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী হত্যার বিচার এবং এই নির্মম হত্যা কান্ড বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী মৌলভীবাজারের আইনজীবীগণ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্ত এলাকায় বিগত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বি.এস.এফ. কর্তৃক নির্মমভাবে পশ্চিম জুড়ি ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা রানী দাসকে (১৪) গুলি করে হত্যা করা হয়। এহেন অমানবিক ও নির্মম হত্যাকান্ডে আমরা আইনজীবীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জনাই।
গোটা বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বি.এস.এফ. এর এহেন মরণঘাতি কর্মকান্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। মানুষ হত্যা সহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধ কল্পে এবং সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ব বিবেকসহ ভারতীয় এবং বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং সকল পক্ষকে অবিলম্বে এই রকমের নৃশংস হত্যাকান্ড সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হতে বিরত থাকার এবং সংশ্লিষ্ট হত্যাকারীকে শাস্তির আওতায় আনার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী মৌলভীবাজার বারের আইনজীবীগণ: পিয়ুষ কান্তি সেন, মাহবুবুল আলম রুহেল, মিজানুর রহমান, অলক কান্তি রায়, অমূল্য কুমার ঘোষ, সাইফুল ইসলাম মনির, মোঃ শামসুদ্দিন, সুফায়েল আহমদ খান, আব্দুল আহাদ, আব্দুল ওয়াহিদ, মইনুর রহমান মগনু, আশফাক আহমেদ, অমিতাভ ঘোষ, মোঃ জহুরুল ইসলাম, বাসুদেব ভট্টাচার্য, বিধান চন্দ্র ভট্টাচার্য, মাসুমা সুলতানা সুশ্রী, ইসরাত জাহান, সাইদুর রহমান, রেজাউল করিম, বিশ্বজিৎ শর্মা, মাহবুবুল আলম শামীম, বিধান চন্দ্র বৈদ্য,মোঃ শাহ আলম, মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন বুলবুল, সুকান্ত নন্দী, রিনা বেগম, তাহমিনা আক্তার জাহান, রাধারানী দেব, মহিউদ্দিন মানিক, সালমা বেগম, একে এম মুস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মোঃ এখলাছুর রহমান, মোঃ মনসুর, শেখ আহমেদ হাবিব, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রসেন দত্ত।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ, পূর্ব-পাকিস্তান চা-শ্রমিক সংঘের অন্যতম পৃষ্টপোষক এবং কোষাধ্যক্ষ, প্রখ্যাত শ্রমিক জননেতা মফিজ আলীর ঘনিষ্ট সহচর শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু প্রবীণ শ্রমিকনেতা মনোহর আলী’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। গত রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা সিদ্দিকুর রহমান, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, চা-শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা, চা-শ্রমিক নেত্রী লছমী রাজভর, চা-শ্রমিকনেতা মধু রজক, দোলন অলমিক, কাজল হাজরা প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে প্রয়াত মনোওয়ার আলীর স্মৃতির প্রতি এবং চলমান বন্যায় অকাল মৃত্যুবরণকারী জনসাধারণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে ১ মিনিট নিবরতা পালন ও শোক সন্তুপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, করোনা মহামারিকালীন সময়ে ২০২০ সালের ১৬ জুলাই কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ নিজ বাড়িতে মনোওয়ার আলী বার্ধক্যজনিত কারণে ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত মনোহর আলী তৎকালীন বামপন্থি প্রগতিশীল রাজনৈতিক অনুকুল পরিবেশের প্রভাবে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত হন। বিশেষত সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামের এদ্বতাঞ্চলের পুরোধা পুরুষ প্রয়াত মফিজ আলীর রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রভাব মনোওয়ার আলীর জীবনে ছিল সবচেয়ে বেশি।
মফিজ আলীর মাধ্যমেই তিনি পূর্ব-পাকিস্থান চা-শ্রমিক সংঘ রেজিঃ নং বি-১২৫২ এর সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হন এবং দীর্ঘদিন তিনি এই সংগঠনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ধামাই চা-বাগানের শ্রমিক ধর্মঘট, শমসেরনগর চা-বাগাসে নীরা বাউরী হত্যার প্রতিবাদ, ১৯৬৯ সালে ৯ দফা দাবিতে চা-শ্রমিক সংঘের আন্দোলন, মফিজ আলী-সীতারাম বর্মার নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে মনোওয়ার আলী অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও এতদ্বাঞ্চলে প্রগতিশীল রাজনীতি অগ্রসর করার ক্ষেত্রে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পর্যায়ের অনেক প্রগতিশীল ও বিপ্লবী রাজনীতিবিদকে তিনি সাদরে তাঁর বাড়িতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আন্তুরিকতার সাথে করে দিতেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির ২য় সম্মেলনে প্রয়াত শ্রমিকনেতা মনোওয়ার আলী সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। শেষ সময়ে শারিরিক অসুস্থ্যতাজনিত কারণে সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কাজের সাথে যুক্ত না থাকলেও সংগঠনের একজন প্রবীণনেতা হিসেবে সবসময় নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। প্রয়াত মনোওয়ার আলীর অসমাপ্ত কাজ তথা সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ মুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার লক্ষ্যে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা দৃপ্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।