শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা
উৎসবের আমেজ
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে গত রোববার(১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে চলে দুইদিনব্যাপী দেশী মাছের মেলা। মেলায় নানা জাতের বড় বড় মাছের দুই শতাধিক দোকান নিয়ে আসেন স্থানীয় এবং দূর দূরান্তের বিক্রেতারা। ঐতিহ্যবাহী এই মেলা এখন এলাকার অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। মেলায় বেচাকেনা হয় কয়েক কোটি টাকার দেশী মাছ।
কুশিয়ারা নদীর পাড় এলাকায় এবার ত্রিশ একর জায়গায় শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী মাছের মেলা। কুশিয়ারা, সুরমা, মনু নদ, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঘাইড়, রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতলসহ দেশী জাতের মাছ উঠেছে মেলায়। প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা যুগ যুগ ধরে মৌলভীবাজারসহ আশপাশের এলাকার মানুষদের অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। মেলাটি বসে পৌষ সংক্রান্তির একদিন আগে।
আড়াইমণ ওজনের বাঘাইড়। দাম বলা হয় ২লাখ টাকা। |
পৌষ সংক্রান্তির এমন শতবর্ষী মেলা দেখতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের কয়েক হাজার মানুষের ঢল মেলায়। মাছের মেলা বলেই মাছের দিকে জনতার স্রোত। বিভিন্ন দোকানে নানা আকারের বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল, বাঘাইড়(বাঘমাছ) নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। জেলার পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার আজমেরিগঞ্জ উপজেলার এক মাছ ব্যবসায়ি মেলায় সবচেয়ে বড় বাগাইড় মাছটি নিয়ে আসেন। প্রায় আড়াই মন ওজনের মাছের দাম হেঁকেছেন ২লক্ষ টাকা। ক্রেতারা দাম করেছিলেন ৭৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা বললেন দেড়লক্ষ টাকা দাম পেলে মাছ বিক্রি করবেন। আরেক বিক্রেতা মো. সামছুল ইসলাম জানান, এবার মেলায় বড় মাছ কম। আগের মতো স্থানীয় নদী, হাওর ও খাল-বিলে মাছ নেই। তবে মেলায় ক্রেতা আছেন। দামও ভালো।
মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি, কাওয়াদিঘি, হাইলহাওর, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওর, মনু, কুশিয়ারাসহ হাওর নদী থেকে মেলা উপলক্ষে এই মাছ ধরা হয়ে থাকে। এছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকেও মেলায় মাছ আসে।
শেরপুর মাছের মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীলরা বলেন, ‘দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়িরা মাছ নিয়ে মেলায় আসেন। এবার কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে আশা করছি।’
এদিকে মাছের মেলাকে ঘিরে অন্যান্য সামগ্রিও উঠেছে। বিশাল এলাকায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্যের হোটেল, তিলুয়া-বাতাসা, খৈ-মুড়ি, নানারকম মৌসুমী ফল, শিশুদের খেলনা, কিশোরী-তরুণীদের প্রসাধনী। শীতের কাপড়চোপড়। বাঁশ-বেত ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র। ঘর-সংসারের নানারকম মাটির বাসন-কোসন, কাঠের জিনিস, লোহালক্কড়ের সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি। হরেকরকম চোখ ধাঁধানো পণ্যের দোকান বসেছে। সবকিছুই কেনাবেচা হচ্ছে।
শেরপুরের পাশাপশি জেলার ছোট বড় সব কয়টি বাজারে মাছের মেলা বসেছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে এই মেলা শেষ হবে।