মুক্তকথা: লন্ডন, রোববার ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। চুরি, জালিয়াতি, যৌণনির্যাতন, প্রতারণার দায় প্রমাণ হওয়ায়, ফারহান মির্জা নামে এক ব্যক্তিকে সাড়ে ৮বছরের জেল দিয়েছে কার্ডিফের ক্রাউন আদালত।
টেক্সি ড্রাইভার ফারহান মির্জা নিজেকে প্রাক্তন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে একটি “ডেটিং ওয়েব সাইট”এ যোগ দেন। মহিলাদের সাথে ‘ডেটিং’ করতে গিয়ে গোপনে তাদের নগ্ন ছবি তোলেন এবং পরে তাদের সাথে বিভিন্ন নমুনায় প্রতারণা শুরু করেন। তাদের নগ্ন ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেয়ার হুমকিও দেন। ৩৮ বছর বয়সী, চার চার দফায় বিবাহিত মির্জা ‘ডেটিং সাইট’ এর তার মেয়ে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের সময় তাদের দেখানোর জন্য গলায় একটি “টেথিসকোপ” ঝুলিয়ে রাখতেন। “ওয়ারড্রব”এ ডাক্তারী লতাগুল্ম ও অন্যান্য জিনিষপত্র (সার্জিকেল স্ক্রাবস) রাখতেন, বুঝাতেন তিনি ঠিকই একজন ডাক্তার। মূলতঃ তিনি একজন টেক্সি ড্রাইভার আর একজন খন্ডকালীন আইটি কর্মি, সাউথ ওয়েলস এর “এবারটিলারি” এলাকায় তার মায়ের সাথে বসবাস করছিলেন।
বাদী পক্ষ ‘কার্ডিফ ক্রাউন কোর্ট’এ বলে যে, মির্জা একজন যৌণ শিকারী। সে তিনটি মুসলমান মহিলা ও তাদের পরিবারকে বেইজ্জতির হুমকি দেয়, যদি তাকে টাকা ও উপহার না দেয়া হয়। এক সন্তানের জনক এই মির্জা “সাদি.কম”, যারা নিজেদের দুনিয়ার সেরা পাত্র-পাত্রী খুঁজে দেয়ার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বলে দাবী করে, এর মাধ্যমে দু’জন মহিলার সাথে মিলিত হয়।
বাদীনির উকিল ‘তিমুথি ইভানস’ আদালতকে বলেন, “এই মহিলাদের ধর্ম, সমাজ ও সম্প্রদায়িক প্রেক্ষাপট এমনই যে যৌণ কোন কিছু জানাজানি হলে তারা বদনামির ভয় আর সমাজচ্যুৎ হবার আতংক আর ভীতিতে মুখ খোলবেন না, বুঝতে পেরে মির্জা তাদের মক্কেল বানায়।”
এ রকম ঘটনা চলাকালীন সময়, ২০১৪ সালে একজন মহিলা সাহস করে পুলিশে গিয়ে নালিশ দেয়। তিনি পুলিশকে বলেন যে, মির্জা তাকে বলেছিল সে একজন আইটি ব্যবস্থাপক, তার ভাই একটি বিমান বন্দরের নিরাপত্ত্বা বিভাগের প্রধান, তার বোন একজন ডাক্তার ছিলেন এবং তার বাবা পাকিস্তানের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক কোম্পানীর পরিচালক। কিন্তু সবকিছুই ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা! এই মহিলা মির্জার ঘরে বহু মহিলার সাথে মির্জার যৌণকর্মের বহু ভিডিও চিত্র দেখতে পায় বলে তার মনের দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশকে বলেছিল। মহিলা আরও পুলিশকে বলেছিলেন, “ঐসব যৌণ ভিডিও এক দু’টি ছিল না সংখ্যায় শতের কোঠায় ছিল। আমার সাথে যৌণকর্মের ভিডিও ছিল সেখানে। আমি কোনদিন এসব ভাবতেও পারিনি, এসব বিষয়ে আমার কোন ধারণাই ছিলনা যে সে এসব আকামের ফিল্ম করছে কিংবা কোন গোপন ক্যামেরা আছে। আমি কখনই এসব ছবি গ্রহনের সায় দেইনি।” আরেকজন মহিলা জুরিদের বলেছিলেন যে, মির্জা তাকে বলেছিল সে একজন সফল হাসপাতাল সার্জন এবং লন্ডনে তার একটি বাড়ী আছে। সে তাকে ২৫ হাজার পাউন্ডের একটি হীরার আংটী কিনে দেবে বলে কথা দিয়েছিল। তিনি আরো বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করেছিলাম সে একজন সার্জন। সে বলেছিল সে অবিবাহিত এবং একা, কখনও বিয়ে করেনি।”
ফারহান মির্জাকে কারাদন্ড দেয়ার সময় বিচারক ‘টম ক্রোদার’ তাকে “নিরেট স্ত্রীদ্বেষী(পিয়র মিসোগিনি)” বলে আখ্যায়িত করেন।
আদালতের বাহিরে ওয়েলস (গুয়েন্ট পুলিশ) পুলিশ বলেছে সে একজন শঠ ও প্রবঞ্চক। নালিশকারী মহিলাদের সাহস ও আত্মসম্মানবোধের জন্য পুলিশ তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে। (এমএসএন থেকে)