মৌলভীবাজার: বৃহস্পতিবার, ২২শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। শীতের প্রকোপ যত বাড়ছে দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরে বাড়ছে অতিথি পাখির সংখ্যা। সুদুর সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে এরা আসে দেশের বৃহত্তম এই অতিথি পাখির সমাগমস্থলে। অতিথি পাখির কলকাকলিতে পাল্টে যাচ্ছে ছোট বড় ২৩৮ টি বিল ও ১০টি নদী নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নন্দনকানন হাকালুকি হাওরের চেহারা। তাদের বিচরণ দেখে মনে হবে এই হাওর যেন তাদের বসতঘর। বহু প্রজাতির পাখি প্রজনন কাজও এখানেই সেরে নেয়। পক্ষীকুলের অতিপ্রাচীন এই অভয়সরোবরের প্রধান শত্রু সংঘবদ্ধ শিকারীচক্র। বহু বড় বড় কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব ব্যাধকুল শিকারের বিভিন্ন সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অতিথি পাখি শিকার বন্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা না হলে সংঘবদ্ধ শিকারী চক্রের হাত থেকে পাখি নিধন বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
ইতোমধ্যে বড় বড় দলে শীতপ্রধান দেশ রাশিয়া, সাইবেরিয়া, উত্তরমেরু, অস্টেলিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতসহ নানা দেশের হাজার হাজার অতিথি পাখি শীতপ্রবণ উত্তর মেরু থেকে নিজেদের বাঁচাতে দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হাকালুকিতে এসেছে। হাওরের বিলগুলোতে অতিথি পাখির জলকেলি সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিন দিন পাখিদের সংখ্যা বাড়ছে।
উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে এসব অতিথি পাখি নির্ভাবনায় মেতে উঠেছে জলকেলিতে। বিলের পাড়ে কোথাও তাদের দেখা যাবে জুটিবদ্ধভাবে বসে আছে যেনো নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আবার কখনো চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে মুক্ত আকাশজুড়ে। এসব অতিথি পাখির কলকাকলি আর কিচিরমিচির শব্দে হাওরের বিলগুলোতে মধুময় সুরের গুঞ্জরণের মত এক অব্যক্ত মায়াবী আবহ বিরাজ করছে। শীতের এই সময় হাওর তীরের মানুষের ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে।
হাকালুকি হাওরের চকিয়া, কালাপানি, নাগুয়া, চাতলা, ফুটবিল, গৌরকুরী, বিলাইয়া, ধলিয়া, তুরল পোয়ালা, চিনাউরা, পলোভাঙ্গা, ধলিয়া, চাতলা, পিংলা ও হাওরখাল বিলে অতিথি পাখির পদচারণা বেশি থাকে বলে জানান হাওর পাড়ের বাসিন্দারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, প্রতিবছর থেকে এবার শীত বিলম্বিত হওয়ায় নভেম্বর মধ্য সময় থেকে পাখি আসতে শুরু করেছে। আবার মার্চের শেষদিকে আপন ঠিকানায় ফিরে যায়। খাদ্যের সন্ধ্যানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে নানা প্রজাতির রঙ বেরঙ্গের অতিথি পাখির অবাঁধ বিচরনে অন্যরকম সৌন্দর্য ফুঠে উঠেছে হাওরের বিলগুলো।
অধিদপ্তরের পাখি বিশেষজ্ঞ বশির আহমদ জানান, প্রতিবছর প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে সাধারণত ৫০-৫৩ প্রজাতির লক্ষাধিক পাখি ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে আসে। হাকালুকি হাওরে যেসব পাখি আসে তার বেশির ভাগই বেয়ারের ভুতিহাঁস, প্রশান্ত শৈলবগা, ফুলুরি হাঁস, ধুপানি, লালমুড়ি, বামুনিয়া হাঁস, সিন্ধু ঈগল, বাড়িঘোরা, হুড হুড, সরালি, খঞ্জনা, পাতারিহাঁস, পাতিতারা, নোনাজোৎসা, গয়ার ইত্যাদি।
পাখি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হাকালুকি হাওরে এক শ্রেণীর অসাধু পাখি শিকারীর বিষটোপ আর পাতানো ফাঁদে মারা পড়ে হাজার হাজার পাখি। ফলে প্রতি বছরই অতিথি পাখির সমাগম হ্রাস পাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়ে নানা প্রজাতির দেশি বিদেশী পাখি। এসব পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকার কারণেই এমন ঘটছে।
‘ক্রেল’ প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান জানান, হাকালুকি হাওরে অতীতের তুলনায় পাখি শিকার অনেকটা কমেছে। তারপরও হাওর উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অতিথি পাখিদের অবাদ বিচরণ নিশ্চিতকরণ করতে হবে। তার জন্য প্রশাসনকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।