ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অমর একুশের চেতনা আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। বাঙালির শহিদ দিবস এখন বিশ্বজুড়ে নিজস্ব ভাষা ও স্বকীয়তা রক্ষার চেতনার অবিরাম উৎস। তিনি আরো বলেন, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্য ও বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠুক। মহান ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ‘শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে তিনি বাংলা ভাষীসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে তিনি মাতৃভাষার দাবিতে সোচ্চার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সৈনিককে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন।
তাঁদের অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্ত্বা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। অমর একুশের অবিনাশী চেতনা আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। ’
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জন করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ বিশ্বে বিরল ঘটনা। ১৯৯৯ সালে কয়েকজন মাতৃভাষাপ্রেমী বাঙালির প্রাথমিক উদ্যোগে এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিক চেষ্টায় জাতিসংঘ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ ছিল বাঙালি হিসেবে জাতির বড় অর্জন।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে জাতিসংঘ এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যতের দিকে’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। নিজস্ব মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ অর্জন করা সহজতর হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব – মহান ভাষা দিবসে এ কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।
খবর এইবেলাডটকম থেকে।