1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি পোষাতে আমাদের বড় বড় প্রকল্প স্থাপনের প্রয়োজন যা ভারতের পক্ষেই করা সম্ভব হবে - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি পোষাতে আমাদের বড় বড় প্রকল্প স্থাপনের প্রয়োজন যা ভারতের পক্ষেই করা সম্ভব হবে

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭
  • ৪০০ পড়া হয়েছে

ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী অতি সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া এম্পায়ার্স গ্রুপ’ এর সাময়িকী “ইন্ডিয়া এম্পায়ার” এর সাথে এক সাক্ষাৎকার দেন। সম্পাদক সায়ন্তন চক্রবর্তীর সাথে তার কথোপকথন খুবই সময়োপযোগী মনে করে আমরা তার হুবহু অনুবাদ করে এখানে পত্রস্ত করলাম। -সম্পাদক

 

মহামহিম সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার

“ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক
পারস্পরিক উপকার ও সমতাভিত্তিক”


‘হিজ এক্সেলেন্সি’ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর জন্ম ১৯৪৪ সালে ১৮জুলাই সিলেট শহরে। তিনি বিজ্ঞানে তার ‘এম এ সনদ’ পান ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং প্রথম বিভাগ লাভ করেন। পরে ১৯৬৮-৬৯ সালে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস আকাদেমী থেকে, ১৯৭৩-৭৪ সালে “স্কুল অব এডভান্সড ইন্টারন্যাশনেল স্টাডিজ”, ওয়াশিংটন ডিসি’র জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৮৩ সালে নিউইয়র্কের “আন্তর্জাতিক শান্তি আকাদেমী” থেকে পেশাধারী প্রশিক্ষন লাভ করেন।

হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী আগে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। তিনি ১৯৬৮সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীন বিদেশ সেবা বিভাগে যোগদেন এবং ২০০১ সালে এই অবিসংবাদিত খ্যাতিমান কূটনীতিক নন্দিত এই পেশা থেকে অবসর গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে যখন তিনি ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করছিলেন তখনই তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনি কথা বলছিলেন ইন্ডিয়া এম্পায়ার্স এর সম্পাদক সায়ান্তন চক্রবর্তীর সাথে।

আমরা এখন কি দেখছি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভাতৃত্বের অত্যোচ্চ মাত্রায় বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আর বাংলাদেশের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সাল এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দু’দুবার মিলিত হয়েছেন নিউইয়র্কে, ইউএনজিএ সভার সময়। ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীও বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন ২০১৫ সালের আগষ্টে ও ২০১৬ সালের অক্টোবরে। এ সফরগুলির বিষয়ে আপনার অভিমত কি?

২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে চেষ্টা করেছেন পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগীতা পুনরোদ্ধারের জন্য এবং তিনি আমাদের মনন জগতে ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। দু’বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ক্ষমতায় আসার পর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগীতা উন্নয়নে তার মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশে তার ঐতিহাসিক সফর আমাদের সেই সম্পর্ককে নবতর উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বৃটিশ-ভারত ভাগের ৬৮বছর পর এবং ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তির ৪১ বছর পর দু’দেশের মধ্যকার সীমান্ত ভূমি চুক্তি সম্পন্ন ও অনুমোদিত হয়েছে ২০১৫ সালে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও দেখিয়েছেন কিভাবে, দীর্ঘদিনের পুরানো দ্বিপাক্ষিক অতীব জঠিল একটি বিষয় নিরঙ্কুশভাবে সমাধান করা যায় কেবল মাত্র আলোচনা, ধৈর্য্য এবং জনমত তৈরীর মধ্য দিয়ে। এখানে খুবই সন্ত্তষ্টি ও গর্বের সাথে আমি স্মরণ করতে চাই গত ২০১৫ সালে দিল্লীতে অশ্বারোহী বাহিনীর স্মারণিক বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ১৯৭৪ সালের পর সবচেয়ে ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। 
এসব সফর ও সফর পরবর্তী উন্নয়ন, উভয় দেশের স্বার্থ জড়িত দ্বিপাক্ষিক অমীমাংসিত ও পড়ে থাকা বাকী বিষয়াদি সম্পাদনে সকলকেই নতুন করে প্রেরণা যুগায়েছে। ভারতের সাথে গঠনমূলক যোগাযোগ স্থাপনের একটি নীতির বিষয়ে আমাদের সন্মানিত প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে কোন অমীমাংসিত বিষয়ে চলমান মতভেদ সমাধান এবং নবতর বিষয়ে সহযোগীতার ক্ষেত্র সৃষ্টির সর্বোত্তম পথ হলো আলাপ-আলোচনা।
এই সম্পর্ককে শক্তিশালী করা ও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য উভয় দেশই এখন কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর উক্ত সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নির্নায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও এমওএস (ইএ) জেনারেল ভি কে সিং পূর্বেই গত ২০১৪ সালের জুনে ও আগষ্টে আপনার দেশে নিয়মী সফর করেছেন। একে বেগবান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের সভাও হয়েছে। অতএব আপনি কিছু বলবেন?

বিদেশ বিষয়ক দু’জন কর্মকর্তার মধ্যে সফর বিনিময় বিশেষতঃ মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বিনিময় সব সময়ই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার পথকে প্রশস্ত করে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যায়। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে যথেষ্ট পর্যায়ে মন্ত্রীদের সফর এবং পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সফর আমাদের সঠিক পথে কাজ করার গতি দিয়েছে এবং সহায়তা করেছে পারস্পরিক সহযোগীতার এলাকা নির্ধারণে, একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ এসব সফরের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। দেখুন, নিয়মিত যোগাযোগ ও কথোপকথন, সার্বিক সহযোগীতার রূপায়ণে একটি মৌলিক উপাদান।

মি: মোদীর সফরের সময় একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দলিলাদি সম্পাদিত হয়েছে। অনুগ্রহ করে এসবের খুবই গুরুত্বপূর্ণটির বিষয়ে আমাদের শুনাবেন কি?

বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের সময় মোট ২২টি চুক্তি/এমওইউ’স স্বাক্ষরিত হয়েছে যা বিভিন্নমূখী এলাকা নিয়ে বিরাজিত আছে। যেমন- নিরাপত্তা, ব্যবসা, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগীতা, কারিগরী বদল, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগীতা। সহযোগীতার নতুন এলাকা হলো- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, শক্তি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল বাণিজ্য চুক্তি; আভ্যন্তরীন জলপথ যোগাযোগ ও ব্যবসা, বাস যোগাযোগ, ব্লু অর্থনীতি; বঙ্গোপসাগর ও ভারত সাগরে সমুদ্র বাণিজ্য সহযোগীতা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ব্যবহার, নবতর বেতার ও টিভি কর্মসূচী ইত্যাদি। এখন উভয় এলাকার অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এবং ঐসব চুক্তিগুলি/এমওইউ’স এর বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা, বিনিয়োগ, দেশের ভেতর দিয়ে পরিবহন চুক্তি; বন্দর ব্যবহারের সুবিধা, স্বচ্ছ জল সহযোগীতা ইত্যাদি বিষয়েও আমরা নিরবদি আলোচনা করে যাচ্ছি এবং আমরা আশাবাদি যে এসবের সঠিক ও আগাম বাস্তবায়ন আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি গুণগত পরিবর্তন আনবে যা বদলে দেবে আমাদের এ অঞ্চলকে।

গত ২০১৩ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট মুখার্জীর বাংলাদেশে সফরকে অনুসরণ করে বাংলাদেশের সন্মানিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ২০১৪ সালে ভারত সফর করেন যা বিগত ৪২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধানের প্রথম ভারত সফর ছিল। অতএব, একটি দৃষ্টিকোন থেকে সম্পর্ক কখনই ভাল ছিল না। আপনার মতামত?

এ বিষয়ে কোন দ্বিধা-সন্দেহ থাকার কথা নয় যে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোচ্চ মাত্রায় আছে। এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবৃন্ধের সফরই তার প্রমাণ। আমাদের বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তি হল, “পারস্পরিক সুবিধা, সমতা এবং সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি সন্মান” এবং “অংশীদারী ভবিষ্যতের আলোকে অগ্রগতির এক উদাহরণ স্বরূপ”। আমি বিশ্বাস করি, আবেগপূর্ণ বন্ধনের এই কান্ড-পত্র পল্লবিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও মানুষের সহযোগীতার অমূল্য ঐতিহাসিক অবদানের জন্য। যা যুগ যুগ আমাদের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক কর্ম তরঙ্গে একটি প্রভাবশালী সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকবে।

মহামহিম হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী


ভারত ও বাংলাদেশ ৫৪টি নদীর জলধারা ভাগ করে নেয়। আপনি কি পেয়েছেন যে উভয় দেশই বর্তমানে এই নদী ব্যবস্থা থেকে অধিকমাত্রায় সুবিধা নিচ্ছে?

দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও যৌথ নদীব্যবস্থা থেকে সুবিধা নেয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারিনি। গঙ্গানদীর পানিবন্টন চুক্তির স্বাক্ষর ছিলো, পরস্পরের সম্মতিতে নদীর পানির অংশ প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগ-বন্টন করে নেয়ার মত একটি সমাধান বের করে আনা। এ উদাহরণ ছাড়াও তিস্তার পানি বন্টন ব্যবস্থা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাধার সন্মুখীন হয়ে আসছে যখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর বিরুধীতা করে আসতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ও ভারত ৫৪টি নদীর পানিহিস্বা তাদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। আমরা উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে, সম্প্রীতির ভেতর দিয়ে এই প্রাকৃতিক সম্পদের সংগ্রহের জন্য, অববাহিকা অনুসারে নদী ব্যবস্থাপনার একটি কাঠামো গঠন আমাদের প্রয়োজন। নদী বিষয়ক বিতর্কের সমাধানের লক্ষ্যে জেআরসি-কে সভা ও আলোচনার একটি ক্ষেত্র হিসেবে আরো শক্তিশালী করতে হবে, যাতে করে পারস্পরিক লাভ নিশ্চিত করে এই জলসম্পদ, একটি সমতাভিত্তিক ভোগের সুযোগ নিশ্চিত থাকে।
অতি শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এমন আশা আমরা করে আসছি। এই দেরীর কারণে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে নানা গুজব রটনা শুরু হয়েছে। তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সাথে সাথে সহযোগীতা উদ্যোগ ত্বরান্বিত হবে। যদিও, শুধু তিস্তা নিয়েই আমাদের এমন আশা তা নয়।

তিস্তা ছাড়াও ফেনি নদী, মনু নদী, মুহুরি নদী, খোয়াই নদী, গোমতি নদী, ধরলা নদী এবং দুধকুমার নদীর পানি বন্টন নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা চলছে। অতএব এখানে শুধু তিস্তা নয়, তিস্তাচুক্তিসহ, যৌথভাবে নদীর অববাহিকা ব্যবস্থাপনা, নদী সংযোগ প্রকল্প যা জরুরীভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়। যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা কেবল শুধু নদীর পানিরই সুব্যবস্থা করবে এমন নয়, ইহা বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথেও জলপথে যোগাযোগেরও পথ সুগম করে দেবে, যে যোগাযোগ বহু বহু পূর্বে ১৯৪৭ এরও আগে থেকেই বৃটিশ ভারতে বিদ্যমান ছিল।
 পানির ভাগ-বন্টন খুবই নাজুক একটি বিষয় যা অগ্রাধিকারের সর্বোচ্চ ভিত্তিতে আলোচনায় আসার অবশ্যই প্রয়োজন; ধৈর্য্য ও যত্নের সাথে এ আলোচনায় আসতে হবে যাতে করে উভয় পক্ষেরই জয় হয়েছে এমন এক সিদ্ধান্তে আসা যায়। সংশ্লিষ্ট সকল দেশকে যৌথ অববাহিকা ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানীর পরিমান কেমন? কোন কোন মূল সামগ্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানী হয়?

বিগত ৭ বছরে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। রপ্তানী ব্যবসায় পণ্যের উদ্বৃত্তি এখনও বিপুল পরিমানে ভারতের পক্ষেই রয়েছে। সে পরিমাণ ডলারের হিসাবে ভারতের ৬.৫ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশের প্রায় ৬৫৮ মিলিয়ন। শুধু সাফটা তালিকাভুক্ত নেতিবাচক কয়েকটি সামগ্রী ছাড়া বাংলাদেশী সকল সামগ্রীর ভারতে প্রবেশে ভারত অবশ্য করমুক্ত ও কৌটামুক্ত সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ মূলতঃ বোনা কাপড়, কুঠির শিল্প, হস্তশিল্প, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়া সামগ্রী, জুতো, কাঁচা পাট, পাটজাতদ্রব্য, সাইকেল ও অন্যান্য কিছু সামগ্রী ভারতে রপ্তানী করে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানী সামগ্রী কি এবং মূল সামগ্রী কি?

ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানীকৃত প্রধান সামগ্রী হলো- তূলা ও কৃষিপণ্য যার পরিমাণ প্রতিবছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। অন্যান্য সামগ্রী হলো- যানবাহন, খুচরা যন্ত্রাংশ, মেশিনারী এবং কারিগরী যন্ত্রপাতি, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক, চামড়া পাকা করার সামগ্রী, রং, লবন, সালফার, পাথর, প্লাষ্টার, লাইম ও সিমেন্ট, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কফি, চা, মশলা, রাবারজাত দ্রব্য প্রভৃতি।

ভারতীয় কোন কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে তার একটি ধারণা আমাদের দেন অনুগ্রহ করে? আর বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র কি কি যা ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করবে?

আপনি একমত হবেন যে বিশ্বায়নের এ যুগে, বৃহৎ অর্থনৈতিক একীভবন, বিশ্বব্যাপী সময়ের দাবী এখন। ব্যবসা ও বিনিয়োগকে একই সাথে নজরে রাখা এখন প্রয়োজন। বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্য সামগ্রীর উন্নতকরণে “বাই-বেক” ভিত্তিতে ভারতীয় বিনিয়োগ বাংলাদেশের পাওয়া দরকার, যেহেতু এ পদ্বতি আমেরিকা-কেনাডার মধ্যে বিদ্যমান। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের, বাংলাদেশের সস্তা শ্রমবাজার ও তাদের উত্তর-পূর্ব বাজারের কাছে স্বল্প সময়ে কম ব্যয়ে পৌছার সুবিধা নেয়া উচিৎ। এ দৃষ্টিকোন থেকে ইতিমধ্যেই ‘হেরো-হোন্ডা, সিইএটি টায়ার কোম্পানীজ বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প স্থাপন করেছে। এগুলো ছোট ছোট প্রকল্প। অবশ্য তারা সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি পোষাতে আমাদের বড় বড় প্রকল্প স্থাপনের প্রয়োজন যা ভারতের পক্ষেই করা সম্ভব হবে।

ভারতীয়দের মাঝে বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পের কোন উন্নয়ন আছে কি? যদি থাকে তা’হলে তার ফলাফল কি?

হ্যাঁ, আমাদের পর্যটন ক্ষেত্র খুবই বাড়ছে। মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্কের বিকল্পতো কিছুই নেই। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের আবেগময় বন্ধন আর দু’দেশের মানুষে মানুষে সংযোগ আমাদের একই সংগ্রাম ও ইতিহাস থেকে সৃষ্ট। আমাদের সম্পর্কের এটি একটি শক্তশালী সমৃদ্ধ দিক যা কোনদিনই ক্ষয় হবার নয়। বিগত কয়েক বছরে মানুষে মানুষে সম্পর্ক বহুভাবে বেড়েছে। বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশী প্রতি বছর ভারত সফর করেন- ভ্রমণ, ব্যবসা ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। মানুষে মানুষে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভ্রমণশিল্পকে আমাদের অঞ্চল থেকে বাইরের দুনিয়ায় আরো তুঙ্গে নিয়ে যাবে। বিপুল পরিমান প্রশিক্ষিত ভারতীয় বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছেন যারা বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ভারতে পাঠিয়ে থাকেন। 
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় আমরা ঢাকা-গৌহাটি, ঢাকা-কলকাতা এবং আগরতলা বাস যোগাযোগ শুরু করেছিলাম। ইতিমধ্যেই আমরা আগরতলায় আমাদের মিশনকে ‘সহকারী হাইকমিশন’-এ উন্নীত করেছি এবং শীঘ্রই আমরা গৌহাটিতে আমাদের ‘ডেপুটি হাইকমিশন’ খুলতে যাচ্ছি। ইতিপূর্বে আমরা মোম্বাই-এ আমাদের একটি ডেপুটি হাইকমিশন খুলেছি। উভয় দেশই একাত্মভাবে সীমান্ত চৌকি স্থাপন করছি যাতায়াতকারী, যানবাহন ও মালপত্র পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে। যতদূর জানি, আগরতলা, আখাউড়া, বেনাপোল, পেট্রাপোল এবং বাংলাবন্ধে অনুরূপ সীমান্ত চৌকি বসানো হয়েছে। এ সমূহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত চৌকিগুলো আমাদের দু’দেশের মধ্যে এবং এই উপাঞ্চলের মানুষের মধ্যে লক্ষ্যনীয়ভাবে যোগাযোগ বাড়াবে।

আপনার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়া সে অভিজ্ঞতা আপনার আছে। আপনি নিজে ওই সময় ওয়াশিংটন ডিসি’তে পাকিস্তানের হাইকমিশনে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আপনি খুব দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পূনর্গঠনে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ এবং আমেরিকার সাথে। আপনি কি বলবেন আপনার দেশ দীর্ঘপথ অতিক্রম করে এসেছে?

আপনার হয়তো স্মরণে আছে যে ওই সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে টিটকারী দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতিশীল দেশ। দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ পোষাক রপ্তানীকারক দেশ। ভূ-গোলের ৫ম সেরা চাউল উৎপাদনকারী দেশ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পৃথিবীর অন্যতম দেশ বলে সুপরিচিত। গত ৬ বছরের জিডিপি বেড়েছে শতকরা ৬.২ যা ১৯৭০ সালের থেকে শতকরা ১.৩ বেশী। গত বছর এই অগ্রগতি বেড়ে গিয়ে শতকরা ৭ এ পৌঁছেছে। ১৯৭০ সালে মোট বিনিয়োগের শতকরা ৭৫ ভাগ ছিল বৈদেশিক সাহায্য। আর আজ, জিডিপ’র শতকরা মাত্র ২ ভাগ হলো ওডিএ। আমাদের বিদেশী মুদ্রার ভান্ডারে সঞ্চয় আছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলের বহুদেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এখন প্রায়শঃই ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ হয়। আমরা ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য’ (এমডিজি’স) অর্জনের প্রতিযোগী ছিলাম এবং আমরা খুব ভাল অবস্থানে আছি ‘সাসটেইনেবল উন্নয়ন লক্ষ্য’ অর্জনে। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক আমাদের মধ্য নিম্ন আয়ের দেশ বলে শ্রেণীবিভাগ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই ‘সোনার বাংলা’ গড়ার আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো। অতএব হ্যাঁ, আমি বলবো, বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের যাত্রা খুবই ইতিবাচক এক কাহিনী এবং আমরা আগামী বছরগুলোতে এই অগ্রযাত্রাকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাবো, আমি এ বিষয়ে খুবই আশাবাদি।

উপসংহার:
শেষ করার আগে একটু কিছু যোগ করতে চাই এই বলে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি’র “লুক ইস্ট, এক্ট ইস্ট” নীতিতে বাংলাদেশ এক কঠিন পরীক্ষামূলক খন্ডে কাজ করছে এবং মোদী সহ-আঞ্চলিক সহযোগীতাকে আমাদের অঞ্চলে অগ্রসর করার কাজে বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত এবং নেপালের দূর্ভেদ্য রক্ষাব্যূহের ভেতরে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন এবং উপসংহারে তার ‘মটর ভেহিকুল চুক্তি’ আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের কাজ বাংলাদেশ চালিয়ে যাচ্ছে গোটা অঞ্চলের সুবিধার লক্ষ্যে। এছাড়াও আমরা অন্যান্য আঞ্চলিক কর্মযজ্ঞ যেমন ‘বিমস্টেক’, বিসিআইএম, ইএসসিএপি-র কাজেও সহযোগীতা করে যাচ্ছি।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT