কমলগঞ্জে অবরুদ্ধ স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ৬পরিবার
বাড়ি থেকে বের হওয়ার যৌথ রাস্তা জবরদখলের অভিযোগ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বনবিষ্ণুপুর গ্রামে দীর্ঘ কয়েক দশকের ব্যবহৃত যৌথ রাস্তাটি প্রতিপক্ষের লোকজন কর্তৃক জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ৬টি পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগি তোতা মিয়াসহ ৬ ব্যক্তি এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বনবিষ্ণুপুর গ্রামের গরিব, দিনমজুর তোতা মিয়া, নূর মিয়া, আলতা মিয়া, আজাদ মিয়া, বাবুল মিয়ার পূর্ব পুরুষদের সময়কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে বাড়ির রাস্তাটি জবর দখল করে নেন পার্শ্ববর্তী বাড়ির ময়না মিয়া, ফজই মিয়া, জয়নাল মিয়া, জলাল মিয়া। কয়েকটি পরিবারের ব্যবহৃত রাস্তাটি পার্শ্ববর্তী খিরনী নদীর পারের সাথে সংযুক্ত ছিল। বর্তমানে প্রতিপক্ষের লোকেরা রাস্তাটিতে গর্ত করে ও বেড়া দিয়ে জবরদখলে নিয়েছে। ফলে বাড়ির স্কুল পড়–য়া শিশু শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। ২০১৭ সনের ১১ অক্টোবর মুন্সীবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সামাজিক বৈঠকে চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক দখলদার ময়না মিয়া, ফজই মিয়া, জয়নাল মিয়া, জলাল মিয়া রাস্তাটি চলাচলের উপযোগি করে দেয়ার অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত রাস্তাটি বেদখল রয়েছে।
গ্রামের ভূক্তভোগী বাবুল মিয়া, তোতা মিয়া, নূর মিয়া বলেন, দখলদাররা কারো কথা শুনেন না। ফলে শত বছর ধরে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবহৃত নিজেদের মালিকানাকৃত রাস্তার ভূমি দখলে নিয়ে খাদ তৈরি করে পানিতে আটকে রেখেছে। বর্তমানে আবার গাছ লাগিয়ে রাস্তার অস্থিত্ব বিলীন করার পায়তারা চালাচ্ছে। এসব কারনে আমাদের পরিবারের মহিলা, রোগী ও ছাত্ররা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বলে দাবি করছেন। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারাও বাড়ির যৌথ রাস্তার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি তাদের পূর্ব পুরুষদের সময় থেকে ব্যবহৃত রাস্তা। বর্তমানে প্রতিপক্ষ জবর দখল করে নিয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে জয়নাল মিয়া, ময়না মিয়াসহ অন্যদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা যায়নি। পরে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেও কয়েক দফা (০১৭২৫৯৮৯৯৫৮, ০১৭৪৬২৭৫৪৬০) ফোন করেও কেউ রিসিভ করেননি।
মুন্সীবাজার ইউপি সদস্য সফিকুর রহমান পূর্বসূরীদের যৌথ রাস্তা বেদখল হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধা করে দেয়া হলেও দখলকাররা সেটি মানেনি। এখনও রাস্তায় তারা গাছ রোপন করছে। ফলে ছয়টি পরিবারের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরী বলেন, অভিযোগের বিষয়ে সরকারি ভূমি থাকলে ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া যেত। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমলগঞ্জে ছেলে ধারা আতংকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে ॥ পুলিশ প্রশাসনের মাইকিং
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ছেলে ধরা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে ধরা আতংকের কারনে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসমুহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ইতিমধ্যে ছেলে ধরা সন্দেহে কমলগঞ্জের দেওরাছড়া চা বাগানে অঞ্জাতনামা ১ বৃদ্ধকে গণ পিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার জন্য প্রচারনা চালানো হয়েছে। প্রচারনার পর উপজেলার পৃথক ২টি স্থান থেকে ২ যুবককে ছেলে ধরা সন্দেহে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেছে এলাকাবাসী।
ছেলে ধরা আতংক ছড়িয়ে পড়ার কারনে কমলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসমুহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আশংকাজনক হারে কমে গেছে। যে সব শিক্ষার্থীরা স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজে যাচ্ছেন তাদের সাথে পরিবারের বয়োজেষ্ট্য কেউ না কেউ সাথে থাকছেন। এদিকে বেশী বিপাকে পড়েছে দিন-মজুর ফেরী ওয়ালারা, যারা নাকি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ফেরী করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে থাকেন এবং যারা ভ্রাম্যমান ভাবে বাড়ীর বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। তারা এখন প্রায় বেকার সময় অতিবাহিত করছেন। যাদের বিশেষ কোন পরিচিতি নাই তারা তাদের বাসস্থান থেকে এলাকার বাহির হচ্ছেন না।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, থানা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলাব্যাপী আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার জন্য মাইকিং করে প্রচারনা করে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণপিটুনী একটি ফৌজদারী অপরাধ।
|