আমি সৌভাগ্যবান, বাদশা ভাইয়ের মতো এতো বড় একজন মানুষের সাহচর্য লাভ করেছি। একাত্তরের রণাঙ্গনের বিজয়ী বীর, যার রয়েছে ষাট বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, তাও আবার রাজপথের রাজনীতি। সুবিধাবাদীতার রাজনীতি যাকে স্পর্শ করতে পারেনি। জেল- জুলুমসহ নানান চড়াই-উৎরাই ছিল, ছিল আবার ক্ষমতার হাতছানি। কিন্তু আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে কোন কালে অন্যায়- অবিচারের সাথে আপোষ করেননি।
বাদশা ভাইয়ের হৃদয়টা ছিল অনেক বড়। আমার মতো অনুজের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এই তো কিছু দিন আগেই ফোন দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয়নি। বাদশা ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে এ বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে! আজীবন সংগ্রামী বাদশা ভাইয়ের সাথে পরিচয় প্রায় এক দশক আগে। বাদশা ভাইয়ের বয়স তখনই সত্তর পেরিয়ে গেলেও মনের দিক থেকে তরুণই ছিলেন। হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আমরা ভিন্ন ভিন্ন পথ এবং মতের মানুষ এক হয়েছিলাম।
মরহুম এডভোকেট গজনফর আলী মামা, গোলাম মুহিত মধু এবং মাও. মতিউর রহমান ভাই কয়েক বছর আগেই চলে গেছেন আর এবার চলে গেলেন বাদশা ভাই। যে বয়সে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ঘরে বসে থাকে, ঠিক সে বয়সেই গজনফর আলী চৌধুরী এবং সিরাজ উদ্দিন বাদশা ভাই রাজপথের আন্দোলন – সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাউয়াদিঘী হাওরের কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় যখন হাওর পাড়ের হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর ভুগছিল। তখন গজনফর আলী এবং বাদশাহ ভাইরা রাজপথের আন্দোলনে আবারও গর্জে ওঠেছিলেন। হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করতে রায়পুর, জগৎপুর, অন্তেহরি, মীরপুর, পালপুর, চানপুর, কাশেমপুর পাম্প হাউজসহ বিভিন্ন জায়গায় চষে বেড়িয়ে মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।
মরহুম এডভোকেট গজনফর আলী এবং বাদশা ভাইয়ের হাতে সবসময় ছাতা থাকত। কী অদ্ভুত! তাঁদের হাতের ছাতার মতো আমাদের সকল কর্মসূচিতে এই দুজন মহান নেতা নিজেরাই আপাদমস্তক ছাতা হয়ে গিয়েছিলেন। ঝড়- তুফান যাই এসেছে মাথা উঁচু রেখেই তাঁরা তা মুকাবিলা করেছিলেন।
পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অগ্রসেনানী মরহুম গজনফর আলী চৌধুরী এবং সিরাজ উদ্দিন বাদশাহ ভাই সাথে মধু ভাই এবং মতিউর ভাইসহ আরো যারা অন্ধকার কবরে চলে গেছেন, তাঁদের সকলের তরে বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ যেন তাঁদেরকে ক্ষমা করেন… আমিন।
লেখক রাজন আহমদ, মৌলভীবাজার হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক
|