মুক্তকথা নিবন্ধ।। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের দৈনন্দিন বিভিন্নমুখী চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মৌলভীবাজারে উজাড় হচ্ছে হাওর ও বনাঞ্চল। মানুষের প্রয়োজনেই জেলার বিভিন্ন বনাঞ্চল, ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করে নিমার্ণ করা হচ্ছে রাস্তা-ঘাট, স্থাপনা, বাজারসহ লোকবসতি। আর এতে করেই ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। এ বিপন্ন অবস্থায় প্রকৃতি তার বৈচিত্র্য হারাচ্ছে। এমনকি টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে।
শুধু মৌলভীবাজারে নয় সারা দেশেই পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্নের তালিকায় রয়েছে শকুন। ইদানিং এ জেলার কোথায়ও দেখা মিলছে না শকুনদের। এক সময় শকুন ছিল গ্রামবাংলার চিরচেনা পাখিদের একটি। দেশের যেকোন এলাকায় কোন নমুনার পশু-পাখী মারা গেলেই আকাশে শকুনের দেখা ছিল খুবই সাধারণ একটি বিষয়। মৃত প্রাণীর দেহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ‘মড়ি’ বলেই সুপরিচিত। বাড়ীর পেছনের জমিতে সেই মড়ি ফেলে দেয়ার সাথে সাথেই কোথা থেকে যে উড়ে আসতে থাকতো শকুনের দল। বিশেষ করে জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই নদীতে এ সব মরা প্রাণীদের ফেলে দিলে এখানকার আকাশ ছেয়ে যেতো শকুনের উড়াউড়িতে। আকাশে শকুন দেখে মানুষ বুঝতে পারতো ওই এলাকায় কোনো প্রাণী মারা পড়েছে। নদীপাড়ের শিশুরাও খেলা করতো শকুনের সঙ্গে। নদীতে এ শকুনরা খাবার খেয়ে পাড়ের সবচেয়ে উঁচু তালগাছ ও শিমুল গাছে ডানা মেলে বসে থাকতো। শকুনই একমাত্র পাখি যারা গবাদিপশুর মৃতদেহ সতেজ থাকা অবস্থাতেই চামড়া ফুটো করে খেতে পারে। মৃত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে শকুন পরিবেশ পরিছন্ন রাখে। অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগ-জীবাণু হজম করার ক্ষমতা শকুনের আছে। এখন নদী পাড়ে শিমুল, তাল, বট, রেইনট্রি, কড়ই কিংবা উঁচু কোনো গাছ অথবা ঝোপ-ঝাড় নেই আগের মতো। ফলে শকুনও আর দেখা যায়না অন্ততঃ আগের মত।
পরিবেশবিদরা বলেছেন, উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে অধিক ফলনের আশায় কৃষক জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারে শকুনসহ অন্য প্রজাতির পাখিদের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কলকারখানার দূষিত বর্জ্যের কারণে পরিবেশসহ মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে শকুনসহ নানা প্রজাতির পাখি।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. জুবায়ের আহমদ বলেন, শকুনেরা মূলত আবর্জনাযুক্ত পচা খাবার খায়। এ খাবার না পাওয়ার কারণসহ পরিবেশগত কারণে এরা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও পশু মাটিতে পুঁতে রাখার কারণেও শকুনেরা তীব্র খাবার সংকটে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে।