মুক্তকথা : শুক্রবার, ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৬।।
একটি অনলাইনের খবর। খবরটি ব্যবসার। ব্যবসার ওই খবরটি পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে উপরের দিকে চোখ বুঁজে ছিলাম অনেক্ষন। মনে হয়েছে চারিদিকে কেমন এক নৈরাজ্যিক ভয়াল নিস্তব্দতা কাজ করছে। চোখের পর্দায় জনমানবহীন এক ভয়াল রূপের বিশাল প্রশস্থের সড়ক ভেসে চলছিল। আর আমি যেনো দৌড়চ্ছিলাম কঙ্কাল ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ভাবছিলাম মানুষ এমন হয় কি করে। এতো মানুষের এক ভয়াল ভয়ঙ্কর রূপ! যা আমি কোনদিন দেখিনি, শুনিনিও।
ভয়ঙ্কর ওই ব্যবসার সংবাদ দাতা অনলাইন “সুনামকণ্ঠ” লিখেছে- “চোরাই গাড়ির ব্যবসা নয়, মাদকদ্রব্যের ব্যবসাও নয়। এ ব্যবসা বিশ্বের নানান জায়গাতে চললেও সিলেটে একেবারেই নতুন। এমন ব্যবসার খবরে সিলেটের মানুষের মন আঁতকে ওঠবে। ভয়ঙ্কর কঙ্কাল ব্যবসা। তাও সেটি প্লাস্টিকের কঙ্কাল নয়, কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে রাসায়নিকের সাহায্যে দেহ থেকে মাংস ঝরিয়ে সেটিকে পরিণত করা হতো কঙ্কালে। দীর্ঘ ৫/৬ বছর ধরে এ অমানবিক ব্যবসাটি করে আসছে একটি চক্র।”
কোন পশুর কঙ্কালের ব্যবসা নয়। একেবারে খোদ মানুষের কঙ্কালের ব্যবসা। কবর থেকে লাশ তুলে মাংস ঝরিয়ে নিয়ে ব্যবসা। অনলাইনটি আরও লিখেছে- “মাজারের খাদেমের মাধ্যমে তারা সংগ্রহ করতো কঙ্কাল। খাদেমই কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে রাসায়নিকের সাহায্যে পরিণত করতো কঙ্কালে। তার পর বিক্রি। অবলিলায় বিগত ৫/৬ বছর যাবৎ কতিপয় মানুষরূপি জানোয়ারেরা এমন ব্যবসা করে আসছিল। র্যাবের খাচায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এই চক্রের দু’সদস্য ধরা পড়ে।”
এখন তাদের মূল হোতার সন্ধানে তদন্ত চালাচ্ছে রেব। এছাড়া ভয়ঙ্কর ব্যবসায় কঙ্কালের জোগানদাতা মাজারের খাদেমকেও আটকের চেষ্টা চলছে। অকুস্থলের আটককৃতরা হচ্ছে- মো. বেল্লাল হোসাইন (৪০) ও তার সহযোগী হীরা মিয়া (২১)। ভয়ঙ্কর হলো এরা দু’জনই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের হিস্ট্রোলজি বিভাগের কর্মচারী।
রেব-৯ জানায়, গোপন সংবাদের সূত্র ধরে হযরত শাহজালাল মাজারের দ্বিতীয় গেইট সংলগ্ন পূবালী ব্যাংকের সামনে থেকে একটি মানব কঙ্কালসহ বেল্লালকে আটক করা হয়। পরে তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হীরা মিয়াকে আটক করা হয়।
রেব আরও জানায়, এই দুরাচাররা প্রায় ৫/৬ বছর ধরে অবৈধভাবে মানুষের কঙ্কাল বিক্রি করে আসছিল। সিলেটের কালাগুলস্থ হযরত বিয়াবন শাহ পীরের মাজারের প্রধান খাদেম জনৈক পংকি মিয়া তাদের কঙ্কাল সরবরাহ করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে এই দুই মানুষ নামক প্রাণী।
বেল্লাল হোসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, পংকি মিয়া কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে কঙ্কাল বের করে এবং পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী তাদের সরবরাহ করতেন।
এদিকে, বেল্লালের দেওয়া তথ্য মতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের হিস্ট্রোলজি বিভাগ থেকে আরো দুটি মানব কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। কত ভয়ঙ্কর একবার ভাবুনতো!
নিয়ম মোতাবেক কঙ্কাল সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
উদ্ধারকৃত কঙ্কালসহ আসামিদেরকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
এছাড়া মানুষের কঙ্কাল ব্যবসার সাথে জড়িত এই চক্রের মূল হোতাদের ধরতে জোরালো অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে রেব-৯ এর গণমাধ্যম সূত্র জানিয়েছে।