মৌলভীবাজারে আজ রোববার ৫ নভেম্বর ২০২৩, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার জামাল উদ্দীন।
বিএনপি ঘোষিত অগণতান্ত্রিক অবরোধের সময় পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে হত্যা, সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাংগচুর ও গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তির দাবীতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
স্থানীয় শহীদমিনারের পাশ ঘেষে চলা আদালত সড়কে আয়োজিত উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা কমাণ্ডার জামাল উদ্দীন, রাজনগর উপজেলা কমান্ডার সজল চক্রবর্তী, সন্তান কমাণ্ডের বেলাল হোসেন, নোমান আহমদ, তুষার আহম, নয়ন ও বীরমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তকথা সম্পাদক, এডভোকেট হারুনূর রশীদ।
“পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি র্স্মাট বাংলাদেশ গড়ে তুলি”- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার(৪ নভেম্বর) মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২৩’ পালিত হয়েছে।
‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় এক শোভাযাত্রা মৌলভীবাজার শহরের প্রেসক্লাব মোড় থেকে শুরু হয়ে পৌর জনমিলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম(বার), জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, মৌলভীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এবং জেলার পুলিশের কর্মর্কতা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শেষে বেলা ৪টায় পৌর জনমিলন কেন্দ্র অডিটোরিয়ামে পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম(বার) মহোদয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ। অতরিক্তি পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) সুদর্শন কুমার রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে মৌলভীবাজার জেলার কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি এডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ বলেন, পুলিশ এবং সমাজে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে দুরত্ব ঘুচিয়ে পুলিশের সাথে যৌথভাবে কাজ করে সমাজ থেকে বিভিন্ন অপরাধ-অনাচার দূর করাই কমিউনিটি পুলিশিং এর লক্ষ্য।
এরপর উন্মুক্ত আলোচনায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জামাল উদ্দিন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের নেতা অবিনাশ বিশ্বাস, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত, মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট রাধাপদ দেব সজল, বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি সাইদুর রহমান রেনু প্রমুখ বক্তব্য রাখনে।
বক্তারা সমাজে কমিউনিটি পুলিশিং এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পুলিশ এবং সাধারণ জনগণ একসাথে কাজ করলে সমাজ থেকে দূর্ণীতির মত অপরাধগুলো নিযন্ত্রণ করা সম্ভব। একই সাথে তারা সমাজ থেকে অপরাধ ও সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানে পুলিশের পাশে থেকে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, “আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউিনিটি পুলিশিং চমৎকার একটি ব্যবস্থা। আমাদের বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা যেহেতু কম, তাই যেকোন সমস্যা প্রতিরোধ ও দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
প্রধান অতথি সংসদ সদস্য নেছার আহমদ বক্তব্যের শুরুতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করতে গিয়ে সরকারি দায়ীত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যের আত্নার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, “পুলিশিং ও জনগণের মধ্যে দুরত্ব কমিয়ে সাধারণ জনগণ পুলিশ একসাথে কাজ করে দেশ থেকে অপরাধ ও সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধের জন্যই এই কমউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা। অল্প সুযোগ-সুবিধা ও লোকবল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের যে কার্যক্রম তা তথাকথিত অনেক উন্নত দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তিনি যেকোন ন্যায়সংগত বিষয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে বলেন পুলিশের যেমন দায়ীত্ব আছে, সাধারণ জনগণেরও দায়িত্ব আছ। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়ীত্ব পালন করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পপিএিম(বার) বলনে, জনগণের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পুলিশিং ব্যবস্থাই হল কমিউনিটি পুলিশিং। পুলিশি ও জনগণের মধ্যে যে সেতুবন্ধন সেটা দৃঢ়করণে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, কিশোর অপরাধের মত সমস্যাগুলো আপনারা চাইলেই সমাধান করতে পারবেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার নির্বাচিত হন শ্রীমঙ্গল থানার এসআই(নিঃ) মোঃ রাকিবুল হাছান এবং শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য নির্বাচিত হন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং এ ভূমিকা রাখায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ানকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। অতিথিগণ তাদের হাতে সম্মাননা স্বারক এবং সনদপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ(ডিএসবি) মোহসিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) মোহাম্মদ সারোআর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজমল হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার(শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, সকল থানা ও ইউনিটের অফিসার ইন চার্জগণ এবং জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যবৃন্দ।