দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, প্রকৃতির নৈসর্গিক পাহাড়ি এলাকা আর তারই ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও চা বাগান বেষ্টিত জেলা মৌলভীবাজার। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার এ জেলায় ছোট-বড় প্রায় ৬/৭ টি নদ-নদী ও প্রায় ২৫/৩০টি ছড়া রয়েছে। মিনিস্ট্রি থেকে অনুমোদন না দেয়ার কারণে সিলিকা ও জেলা প্রশাসন থেকে সাধারণ বালু সংগ্রহের দরপত্র প্রক্রিয়া না হওয়াতে অবৈধ পথে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। চোরাই পথে এসব বালু উত্তোলনের ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু নিশি ও ভোর রাতে মানুষের অগোচরে বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন খবরে প্রশাসন অভিযান চালালেও কোন এক অদৃশ্য হাতের সহযোগীতায় আবারও নির্বিঘ্নে অবিরত বালু তোলা চলছে। | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, জেলাজুড়ে প্রায় সিংহভাগ জায়গায় সাধারণ বালু ও ৭টি উপজেলায় সিলিকা বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি এখনো। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী মৌজার ৪১নং জেএল-এর অধীনে মনু নদীর আংশিক-১০, একই উপজেলার বেখামুড়া মৌজার ৩২নং জেএল’র মনু নদীর আংশিক -১৪, একই উপজেলার গিয়াসনগর মৌজার ১৯০ জেএল’র গাবলু ছড়া, কুলাউড়া উপজেলার কুদালিছড়া, ইটাছড়া, ফানাই নদী, গোগলী ছড়া, বলিছড়া ও নাফ্তের ছড়া, বড়লেখা উপজেলার নিক্ড়িছড়া, ঘাটাইছড়া, মাধবছড়া, কুচিরখাল, কামড়িখাল, মাওয়াছড়া ও পাত্লিছড়া গুলোকে ইজারা’র আওতায় আনা যায়নি। | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এছাড়াও যেসব ছড়া থেকে সিলিকা বালু(বিশেষ দামী বালু) উত্তোলন করা হয়, ওই এলাকায় ইজারার আওতাভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা। ওই কার্যালয় আরো জানায়, জেলার ৭ উপজেলায় সিলিকা বালু ছড়া নিয়ে মামলা, পরিবেশের আপত্ত্বি থাকা ও মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না দেয়াতে প্রায় ২ কোটি টাকার রাজস্ব ও সাধারণ বালু ছড়া থেকে আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ইজারাবিহীন এসব নদ-নদী ও ছড়া’র বর্তমান অবস্থার খবর নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেকটি এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে অবৈধপথে বালু উত্তোলন করে আসছে। এখানকার স্থানীয়দের ইজারা এনেছেন এমন খবর জানান দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে আঙ্গুল ফোলে কলা গাছ হচ্ছে বালু খেকোরা। | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে বালু বহনকারী এখানকার স্থানীয় ট্রাক চালকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ২০ টাকা ফুট দরে সিলিকা বালু বিক্রি হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এক ট্রাক বালুর দাম পড়ে ৪ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ট্রাক বালু উত্তোলন হয়ে থাকে। স্থানীয়রা বালু ও অর্থের এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, এভাবে জেলার ২৫ থেকে ৩০টি ছড়া থেকে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয়ে থাকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার বালু। যার কোন রাজস্ব আয় পাচ্ছেনা সরকার। জেলার রাজনগর উপজেলার মারুয়াছড়া, কালামুয়াছড়া ও ধামাই ছড়ায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উজানের পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত থেকে ওই ছড়াগুলোতে পানির সাথে সিলিকা বালু বয়ে চলেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই ৩টি ছড়া থেকে রাতের আধারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উত্তরভাগ, ইন্দানগর চাবাগান ও করীমপুর চা বাগান দিয়ে বয়ে চলা এসব ছড়ায় বাগান ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হচ্ছে। মারুয়া ছড়া চা বাগান এলাকার পানিশাইল গ্রামের ফেরদৌস আলম চৌধুরী রিংকু জানান, রাতের আধারে প্রভাবশালীরা মিলে ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। সকাল ৮টার মধ্যে তারা অবৈধ উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তিনি বলেন, তাদের পরিচিত স্থানীয় ট্রাক চালকদের সাথে কথা বলে ক্রেতাদের এলাকায় পৌছে দেয়া হয়। তবে উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগান ব্যবস্থাপক মোঃ লোকমান চৌধুরী বলেন, তার বাগান এলাকা দিয়ে বয়ে চলা কালামুয়া ছড়া থেকে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করে আসছিল। তিনি প্রশাসনে খবর দিয়ে উত্তোলন বন্ধ করান। করীমপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক আবুল কালাম বলেন, চান্দভাগের সীমানার সাথে আমাদের রাবার আছে, ওই রাবারের পাশ দিয়ে ধামাইছড়া চলে গেছে। বালু উত্তোলন হচ্ছে কিনা জানিনা। বাগান ব্যবস্থাপক এর সাথে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মিথ্যা কথাটা অনেকেই বলে। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আব্দুল হক বলেন, জেলায় প্রতিনিয়ত অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আমরা যে যায়গায় খবর পাই, অভিযান চালাই। আপনার কাছে কোন তথ্য থাকলে দিয়ে সহযোগীতা করুন। আমরা যথাযত ব্যবস্থা নেবো। |