হারুনূর রশীদ।। ছবিটিতে যে মা’কে কাঁদতে দেখছি তার জীর্ণশরীর দেখে কি মনে হয় না যে এ শরীর কোন দিন ডাক্তার কি জিনিষ দেখেনি। পাশে বসা বৃদ্ধা মা। যার গলায় টিউমার। তারও হয়তো টিউমারের জন্য ডাক্তার দেখানোর সংগতি হয়নি কোনদিন। হয়তো এই টিউমার নিয়েই জীবনাবসান হবে। এমন একটি নিরীহ পরিবার সে হিন্দু হোক আর মুসলমানই হোক গরুচুরির অপরাধে তাদের পরিবারের উপার্যনকারী একমাত্র মানুষটিকে মেরে ফলতে হবে এমন বর্বর দেশ, সমাজ আর কোথায়ও আছে? গরু ব্যবসার সাথে কোটিপতি যারা জড়িত, গাড়ী বোঝাই গরু সীমান্ত দিয়ে আদান-প্রদান হয়, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশেরই সীমান্তরক্ষীদের পাহাড়ায়, কই তাদেরকে তো কেউ কিছুই বলে না। ওখানেতো বলার কারো সাহস নেই। কোন দিন হবে তেমন দেখিনা।
কেমন সে প্রশাসন! ৩ তিনটা মানুষকে খুন করে নিল প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি। পুলিশ নিজেদের চামড়া বাঁচানোর জন্য বলছে এরা গরুচুর।
হ্যাঁ খুব ভাল, মানলাম গরু চুর। কিন্তু তাদের খুন করে ফেলার দায়ীত্ব কে দিয়েছে? আর পুলিশ হয়ে এতোদিন তোমরা এই গরুচুরদের ধরে জেলে পাঠাও নাই কেনো? তা’হলে তোমরাও গরু চুরির হিস্যা পেয়েছো নিশ্চয়! তোমাদের শাস্তি দেবে কে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর, গত বৃহস্পতিবার রাত্রে ষাটোর্ধ আশিন আলি তার পুত্রকে হারান। উত্তর দিনাজপুরের দূর্গাপুরে আশিন আলির পুত্র ২৪ বছর বয়সের মোঃ নাসির উদ্দীনকে হত্যা করা হয়। নাসির উদ্দীন মূলতঃ একজন নির্মাণ শ্রমিক। কাজ না থাকলে দিনমজুরী করে সংসার চালাতো। এমন মানুষ, গরুর, কোন ধরনের তথা কথিত অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত হতেই পারে। রাষ্ট্র তাদের কি দেয়, যে জীবন বাঁচিয়ে চলতে পারবে! আমাদের এতদাঞ্চলের দেশগুলির রাষ্ট্র ব্যবস্থা এসব খেটে খাওয়া মানুষের জীবন চালানোর জন্য কিছুই দেয়না। এমন রাষ্ট্রের নৈতিক কোন অধিকারই নেই শাসনের!
ওই বৃহস্পতিবার দিনগত সন্ধ্যা অনুমান ৭টায় সে একটি ফোন কল পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর প্রান নিয়ে ফিরে আসেনি। তার মৃত্যুর খবর পান তার বাবা বৃদ্ধ আশিন আলি। শুধু নাসির উদ্দীন নয় তার সাথে খুন করা হয় আরো দু’জনকে। ২৮ বছরের নাসিরুল হক আর ৩২ বছরের মোহাম্মদ সমিরুদ্দীনকে চুপড়া থানাপুলিশের অধিনস্ত এলাকায়! ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ভাষায় বুঝা যায় গরু ব্যবসার কারণে হিন্দু নামধারী কিছু মানুষ এদের হ্ত্যা করে।
রে ধর্মের নামধারী দুষ্কৃতিকারীরা মানুষের চেয়ে গরু তোদের কাছে বড় হয়ে গেলো। এ তোদের কোন ধর্ম?
সেই এলাকার এসপি একজন অমিত কুমার ভরত রাথড বলেছেন এদের গরুচুরির রেকর্ড আছে। হাসি পায় এজন্য যে গরুচুরির রেকর্ড আছে বলে মানুষ তাদের মেরে ফেলবে এ কোন আইন আর একজন পদস্ত পুলিশ অফিসারের এ কোন মানসিকতা? আর এভাবে যে যা বলবে তাই যদি সত্য ধরে নিতে হয় তা’হলে নাসির উদ্দীনের বাবাও তো বলেছেন এ সমূহ মিথ্যা। গ্রামের মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন দেখুন কেউ বলে কি-না আমার ছেলে গরু চুরি করেছে বলে! এছাড়াও কোন কথা সত্য আর কোন কথা মিথ্যা তা বিচারের ভারতো পুলিশেরও নয়। তা’হলে কিভাবে অমিত নামের ওই আইনের মানুষ খুনের পক্ষে বলার সাহস দেখায়?
ওই এলাকায় এখন সম্প্রদায়গত একটি উত্তেজনা বিরাজ করছে!