আমেরিকা থেকে সুপ্রিয় সিদ্দীকুর রহমান ফটিক প্রায়ই সমৃদ্ধ জ্ঞানগর্ভ কিছু কথা, ভিডিও, গল্প ইত্যাদি পাঠিয়ে থাকে। তার পাঠানো এসব জ্ঞানসামগ্রীর সবক’টিই আমি পড়া থেকে বাদ রাখি না। খুব ভাল সময় কাটে। বহু বিনোদিত হই কারণ বহু হাসির খোরাক থাকে। হাস্যরসিক ফটিকের সাথে জীবন প্রত্যুষে বহু মঞ্চ নাটকে আমি অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। ফটিক সবসময়ই নায়ক-ভিলেন এসব চরিত্রের প্রতি উৎসাহী ছিল। আমি অবশ্য যে কোন একটা চরিত্রে সুযোগ পেয়েই তৃপ্ত থাকতাম। সুপ্রিয় সেই সিদ্দীকুর রহমান অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ছোট গল্প আকারের কথিকা পাঠিয়েছে। খুবই ছোট্ট হলেও কাহিনীটি সকল বয়স ও পেশার মানুষের জন্য উপভোগ্য, নীতিকথার উদাহরণ ও আনন্দদায়ী বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। সেসব পাঠ থেকে বেঁছে নিয়ে একটি এখানে আবার তুলে ধরলাম। সকল না হলেও সুধি পাঠক অনেকেই নিশ্চয় আনন্দের সাথে তৃপ্তবোধ করবেন।
ফটিক, “Sir Viqiz Mob” নামের একজনের ফেইচবুক থেকে নিচের লিখাটি পাঠিয়েছে গত 23 March তারিখে। কাহিনীটি এ রকম:-
একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের পাঠদান করছেন। সম্ভবতঃ পাঠদানের প্রতি ছাত্রদের একটু মনোযোগ আকর্ষনের জন্য ওই শিক্ষক একটি মজার গল্প বলতে শুরু করলেন।সেই গল্পের শুরু ছিল এই ভাবে-
একবার একটা লঞ্চ দূর্ঘটনায় পড়লো। লঞ্চের এক দম্পত্তি একটা লাইফবোট দেখতে পেল। কিন্তু স্বামী লোকটা বুঝে ফেললো, সে লাইফবোটে একজনের বেশি উঠতে পারবে না। লোকটা তার স্ত্রীকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজে লাফিয়ে উঠে পড়লো। ডুবন্ত লঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা স্বামীর উদ্দেশ্যে একটাই মাত্র বাক্য চিৎকার করে বলেছিলো।’
শিক্ষক এটুকু বলে থামলেন। চারদিকে তাকিয়ে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাইলেন, “তোমাদের কি মনে হয়? কি বলেছিলো মহিলা!”
-“তুমি একটা ইতর, আমি কি অন্ধই না ছিলাম!” অধিকাংশ ছাত্রই এ ধরনের জবাব দিলো।
শিক্ষক খেয়াল করলেন একটা ছেলে পুরোটা সময় ধরেই চুপ। তার মতামত জানতে চাইলে সে বললো, “স্যার, আমার বিশ্বাস, মহিলাটি বলেছিল, আমাদের বাচ্চাটার যত্ন নিও, ওকে দেখে রেখ।”
বিষ্ময়ে অভিভুত হয়ে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এই গল্প আগে শুনেছ, তাই না!”
ছেলেটি মাথা নেড়ে জবাব দিলো, “আমার মাও অসুখে মারা যাওয়ার পূর্বমূহূর্তে বাবাকে একথাই বলেছিলেন।”
শিক্ষক একমত হলেন, তুমিই ঠিক। লঞ্চটা ডুবে গেলো এবং বাড়ি ফিরে লোকটা একাকী মেয়েকে যত্ন করে বড় করলো।
লোকটি মারা যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে তাদের কন্যা বাবার একটি ডায়েরী পেল। সেখানে সে আবিষ্কার করলো, লঞ্চযাত্রায় যাওয়ার আগেই মায়ের দুরারোগ্য অসুখ ধরা পড়েছিলো। চরম মূহূর্তে তার বাবা তাই বাঁচার একমাত্র উপায়ের সদ্ব্যবহার করেছে। ডায়েরীতে তার বাবা লিখেছে, “আমারও তোমার সাথে সাগরের তলে ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, কিন্তু শুধু মেয়ের কথা ভেবে তোমাকে একাই সাগর তলে চিরদিনের জন্য ছেড়ে আসতে হলো।”
গল্প শেষ হলো। ক্লাস একদম চুপ। শিক্ষক বুঝলেন, ছাত্রেরা গল্পের শিক্ষাটা বুঝতে পেরেছে।
ভালো এবং মন্দ; পৃথিবীর সব কিছুর পেছনেই অনেক জটিলতা আছে, যা সব সময় বোঝা যায় না। আমাদের কখনোই শুধুমাত্র উপরেরটা দেখেই বিচার করা উচিত নয়। অন্যকে না বুঝেই বিচার করে নেয়াটা বেশ বোকামি।
যারা খাবারের বিলটা সবসময়ই নিজে দিতে চায়, তার মানে এই নয় যে তার টাকা উপচে পড়ছে। এর কারন সে টাকার চেয়ে বন্ধুত্বকে বড় করে দেখে।
যারা আগে ভাগেই কাজ করে ফেলে, এর মানে সে বোকা না। আসলে তার দায়িত্বজ্ঞান রয়েছে।
যারা ঝগড়া বা বাকবিতন্ডার পরে আগে মাফ চেয়ে নেয়, সেই ভুল ছিলো এমনটা নয়। বরঞ্চ বুঝতে হবে সে চারপাশের মানুষকে মূল্যায়ন করে।
তোমাকে যে সাহায্য করতে চায় সে তোমার কাছে কোন কিছু আশা করে না। বরং তোমাকে একজন প্রকৃত বন্ধু মনে করে।
কেউ আপনাকে প্রায়ই টেক্সট করে তার মানে এটা নয় যে তার কোন কাজ নেই। আসলে আপনাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।
একদিন আমরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। কিন্তু আমাদের আচরণ ও ভালোবাসাগুলো মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবে। কেউ না কেউ স্মরণ করবে, “এ হচ্ছে সেই মানুষ যার সাথে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময় কাটিয়েছি।”
– সিদ্দীকুর রহমান ফটিক কর্তৃক সংগৃহীত। হারুনূর রশীদ কর্তৃক ঈষৎ সংশোধিত।