মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ আজ ছিল আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের দিন।
শপথ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইদেন বলেছেন, আজ গণতন্ত্রের দিন, আজ ইতিহাস ও আশার দিন। আজ এক নতুন আমেরিকার উদয় হলো, নতুন এক বড়মোকাবেলার সন্মুখীন হলো আমেরিকা।
কালগোধূলীর রক্তরাঙ্গা আগুনেঢেউয়ের নিচে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌভাগ্য সূর্য। খুব চেষ্টা করেছেন হাসি-খুশী মনে বিদায় নিতে। কিন্তু সকল চেষ্টা কি আর কাজ করে! আর তাই তিনিও পারেননি। অনেকটা বিষাদময় চেহারায়ই বিদায় নিয়েছেন। অথচ আজ তার থাকার কথা ছিল বাইদেনের রাজ অভিষেকে।
কেপিটলের একদিকে যখন শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে ২৫ হাজার গার্ডবাহিনীসহ মানুষের সাজ সাজ রবে রামধুম তারই কাছাকাছি সময়েই তার পূর্বের ঘোষণা মত শহর ওয়াশিংটন থেকে বিদায় নিলেন একদিন আগেরও হুকুমবরদার ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য বলে গেছেন, তিনি আছেন তার সমর্থকদের সাথে এবং থাকবেন।
শনিগ্রহের বিদায়ে গুরুগ্রহে মাহেন্দ্রক্ষণ নিয়ে প্রবেশ করলেন জো বাইদেন। হয়ে গেছে তার অভিষেক। এখন তিনিই প্রেসিডেন্ট। তার অভিষেককে ঘিরে ওয়াশিংটনের কেপিটল’এর চারপাশ ছিল ছিদ্রহীন নিরাপত্তার টোপ দিয়ে ঘেরা। ট্রাম্প সমর্থকদের মারমুখো ঘটনায় ভয় পেয়েছেন গোটা আমেরিকার নিরাপত্তা বিভাগ। তারা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারেননি এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কেনো তারা বুঝতে পারেননি(?) এ প্রশ্নটা শুধু আমেরিকা নয় সারা বিশ্বের সকল সচেতন মানুষের মনেই থেকে গেলো নিরুত্তর হয়ে!
৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইদেন শপথ নিয়েছেন। তার সাথে সহ-সভাপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন কমলা হেরিস। বিশাল আয়োজনের সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, আরেক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনসহ আরো অনেকেই।
লেডি গাগা আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। প্রথমেই আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি শনিয়া শুতোমায়ার শপথ পড়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হেরিসকে। এরপর জনপ্রিয় গায়িকা জেনিফার লুপেজ ‘আমেরিকা দ বিউটিফুল’ গানটি গেয়ে শুনান। এর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইদেনকে শপথ পাঠ করান আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের আরেক বিচারপতি জন রবার্টস।
প্রেসিডেন্ট বাইদেন অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। এমনসব সুন্দর বয়ান এমন পদমর্যাদায় যারাই যান তারা সকলেই সুন্দর কথা দিয়ে শুরু করেন। কিন্তু নিকাশের দিকে অনেকেই কথা রাখতে পারেন না। আমেরিকার বিশ্ব নেতৃত্ব পাওয়ার পর আজ প্রায় ৮০ বছরের মত হয়ে গেছে, আজো ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হয়নি। সমাধান হয়নি কাশ্মীর সমস্যার। বরং আমেরিকার যুদ্ধংদেহী অহং ধ্বংস করে দিয়েছে বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার দেশ যুগোস্লোভাকিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া সহ আরো বহু জাতি গুষ্ঠীকে। আজো ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারেনি। বিশ্ব পরিবেশ দুষণমুক্তির কর্মকান্ড থেকে আমেরিকা সরে এসেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য রক্ষা কর্মকাণ্ড থেকে আমেরিকা সরে এসেছে। একসময়ের ব্রহ্মদেশ বর্তমানের মায়ানমার গণহত্যা চালিয়ে ১০ লাখ মানুষকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে যারা বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছে। আজও মায়ানমার তাদের ১০ লাখ মানুষকে ফেরৎ নেয়নি। এমনি কত ঘটনাই আছে বিশ্ব জুড়ে। বিশ্বের মোড়ল আমেরিকা কিছুই করেনি। এসবের জবাবে বাইদেনের গণতন্ত্র কি বলবে আমরা জানি না। সময়ই এর জবাব দেবে।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন, বুধবার ২০ জানুয়ারী ২০২১
|