ইংরেজদের “ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী”র কতিপয় ব্যবসায়ী ১৬০৮সালে ভারত, গুজরাটের সুরাটে ও গোয়ায় প্রথম অবতরণ করে। ১৪৯৮সালে জলপথে ভারত আবিষ্কার করেন ভাস্কো দি গামা। এ পথেই ইংরেজরা ভারতে আসে। তাদের সাথে এই প্রথম ভারতীয়দের পরিচয় ঘটে। ব্যবসার জমি খোঁজে বের করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের পাশাপাশি তারা ভারতেও তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তারা সেসময় ভারতকে “ইষ্ট ইণ্ডিজ” বলেই চিনতো এবং ডাকতো। ইংরেজদের সাথে ভারতীয়দের পরিচয় ভাববিনিময় এখানেই প্রথম ঘটে।
১৭৫৯সালে প্রথম ইংরেজভাষী খৃষ্ঠীয় ধর্মীয় প্রচার দল(মিসোনারিজ) ভারতে আসে। ১৭৮৭সালে রেভারেন্ড সোয়ার্জ নামের একজন খৃষ্টীয় ধর্ম প্রচারকের স্কুল নির্মাণের প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানানো হয়। এর দশ বছর পর ১৭৯৭সালে একজন জন মিলার “দি টিউটর” নামে ইংলিশ শিক্ষার একখানা পুস্তক প্রকাশ করেন। এ বইখানা তদানিন্তন বঙ্গের ছেরামপুরে প্রকাশিত হয়েছিল।
উদারবাদী রাজনীতিক ও ঐতিহাসিক লর্ড মেকাওলে{(১৮০০-১৮৫৯)(ইংল্যাণ্ডের সংসদ বা আইনসভার অধিকারের সমর্থক ও রাজবিরোধী দলের সদস্য। এ দলই বর্তমানের লিবারেল দল)} ভারতে ইংরেজী ভাষার ব্যবহার নিয়ে যে মত পোষণ করতেন তা তারই ভাষায়- advocated the teaching of English in India with his famous notion of creating “a class of persons, Indian in blood and color, but English in taste, in opinions, in morals, and in intellect”.(সূত্র: WOMEN OF POWER, Sunday October 6 2013, article by Ramya Raju)। লর্ড টি বি মেকাওলে ১৮৩৫সালে এ মত দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ইংরেজী শিক্ষার শুরু দক্ষিণ-এশিয়ার দেশে দেশে।
“ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী”র উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ধীরে ধীরে স্থানীয় ভারতীয় রাজনীতিতে তাদের যুক্ত বা অনুপ্রবেশ এবং খুব ধীরলয়ে খণ্ডে খণ্ডে তাদের শাসকে পরিণত হওয়ার কাহিনী ভারতীয় ইতিহাস খুব উল্লেখযোগ্যভাবে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছে। তাদের আগমনের পরের শতকে সারা ভারতের সকল সম্পদের উপর তাদের বেআইনী অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এবং লুণ্ঠনের ক্ষেত্র প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা করে, শিল্পকারখানার বিস্তার ঘটায়। একই সাথে তারা তৈরী করে একদল কেরাণি যারা তাদের এসব কাজের লিখিত বিবরণ বা হিসেব রাখবে।
মেকাওলে’র উপরোল্লিখিত সিদ্ধান্ত বা মত ইংরেজদের ক্ষমতারোহনের পরবর্তী ১৫০ বছর চলেছে নব নব উদ্যোমে। এই কেরাণীকূলকে ইংরেজরা দিয়েছিল সম্পদ, ক্ষমতা ও পদ। এই কেরাণী চাকরি পেতে একসময় নিয়ম ছিল “passing clerical exams in English”। ফলে মানুষ এমন ধারাকেই জীবন মনে করে নিয়েছিল। যা আজও রয়েছে। প্রায় দেড়শতাব্দি সময়কাল ধরে বড় একপক্ষ ভারতীয় এই আদলে রক্তে মাংসে গড়ে উঠে। এভাবে চলতে গিয়ে একসময় মানুষ মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে অন্যান্য চাকুরীর চেয়ে সরকারী চাকুরীকে দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানাতো। মেয়েরাও নিজ থেকে সরকারী চাকুরের নিকট বিয়েকে সৌভাগ্য মনে করতো।
|