লন্ডন: উচ্ছ্বাস আর আনন্দে একে অন্যকে ভিজিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রথম বারের মতো রাখাইনরা পালন করল তাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই। আর তাতেই বাসাবোর বৌদ্ধ বিহার পরিণত হলো এক টুকরো কক্সবাজার, বান্দরবন কিংবা পটুয়াখালিতে। এমন এক সময়ে ঢাকায় রাখাইনরা এই উৎসব উদযাপন করল, যখন নিজ আবাসে তাদের এই উৎসবের রং অনেকটাই মলিন।
ক্রমশ হুমকির মুখে এই জনগোষ্ঠী আর তার সংস্কৃতি। গত এক দশকে বাংলাদেশে রাখাইন গোষ্ঠীর জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে ৫০ হাজার থেকে নেমে গিয়েছে তিন হাজারে।
অথচ কে না জানে, বৈচিত্রেই একতা। শত ফুল মিলেই সৌন্দর্য। তাই এই ছোট ছোট জাতি গোষ্ঠী বেঁচে থাকলেই বেঁচে থাকবে বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ, এমন ভাবনা থেকেই ঢাকায় এই জাতিসত্তার উৎসবের পরিকল্পনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান “রি থিংক”-এর। বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘ। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে রি থিংক আহ্বান জানিয়েছে মানবিক সংস্কৃতি চর্চার। প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য পরিকল্পক লুলু আল মারজান বলছেন, “সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, শাসক কিংবা শোষিত, সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল, আস্তিক কিংবা নাস্তিক, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, রাখাইন, খ্রিস্টান— আমরা সবাই একই জাতীয় পরিচয় বহন করি, ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিসত্তায়, বৃহত্তর মানব সমাজের অংশ হয়ে। আমরা আর মানুষের প্রতি মানুষের ক্রোধ চাই না। জাত পাত ধর্ম বর্ণ নিবাস ভাষা প্রভৃতির উর্ধ্বে উঠে মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে ভাবতে চাই। লক্ষ্য বৈশ্বিক মানব চেতনার।”
তাদের ভাবনার সঙ্গে একমত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দিয়ে তিনি বলছেন, “বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এখানে সবার ধর্ম, উৎসব পালন করার অধিকার সমান। তার প্রমাণ আজ ঢাকায় রাখাইনদের এই উৎসব।” উৎসব উদ্বোধনের পর পরই জলের উৎসবে মেতে ওঠেন শত রাখাইন তরুণ-তরুণী। মূলত বর্ষবরণের উৎসব হলেও জল ছিটিয়ে এই তরুণ-তরুণীরা নিজের পছন্দেরও জানান দেন উচ্ছ্বাসের রঙে। তরুণ সেই তরুণীকেই বেশি করে ভেজায় যাকে সে পছন্দ করে। তবে শুধু জলের উৎসবই নয়, রাখাইন ঐতিহ্যের পিঠা পুলি আয়োজনকে আরও বর্ণিল করেছে। ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। কক্সবাজার, বান্দরবন আর পটুয়াখালির কুয়াকাটা থেকে আসা রঙিন বৈচিত্রময় পোশাকের নাচের দল পরিবেশন করে ঐতিহ্যের নাচ। উৎসবে প্রায় হাজার রাখাইন যোগ দেয়। -আনন্দবাজার