আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। “যেতে নাহি দিব, হায় তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়”। মানুষের মধ্যে কোন অতিথি এলে কদিন থাকার পর যেমন বিদায় জানাতে মন চায় না। পাখিদের বেলাও যেন ঠিক তাই। শীত যেতে আর কদিন বাকি। বাংলাদেশের শীতকে উপলক্ষ করে সুদুর দক্ষিনাঞ্চলের সাইবেরিয়া, অষ্ট্রিয়া ও নানা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখিরা পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারে ভর করেছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশী সময়ই পার করছে এখানে। অগ্রহায়ন মাস থেকে শুরু করে এখনও এসব পাখিদের জেলার হাকালুকি, হাইল হাওরে পাখির অভয় আশ্রম বাইক্কা বিল, কাউয়াদিঘি হাওরসহ অন্যান্য ছোট-বড় বিলে এখনও দেখা মিলছে। এদের দৌড়-ঝাপ ও কল-কাকলীতে জেলার সারা হাওর এলাকা এখনও মূখর রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের ১শ একর জলাভূমিতে বাইক্কা বিল নামে একটি স্থায়ী মাছের অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়। বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিলটি মাছের পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠে। এ বিলে অতিথি পাখিদের এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন পাখিপ্রেমীরা। এছাড়াও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘী হাওরের গুলাইয়া, মাজরবান্দ, হালখাটুয়া, আওয়া বিল, ফারেঙ্গা, উলাউলি ও উপরগুয়ালী বিলে পাখিদের দেখা পাওয়া যায়। এসব অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে পিয়ানং হাঁস, পাতি তিলা, বালি হাঁস, ভুতি হাঁস, পানকৌড়ি, কালোকুট, পাতি পান মুরগি, বেগুনি কালেমসহ হরেক রকমের পাখি।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএসের ক্রেল প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে হাকালুকি হাওরে দু’দিন ব্যাপী পাখি শুমারি অনুষ্ঠিত হবে এবারও। গেল বছর পাখি শুমারি শেষে তারা জানান, ৪৪ প্রজাতির ৪৫ হাজার ১শ পাখির মধ্যে হাকালুকি হাওরের হাওরখাল বিলে ১৫ হাজার ৭৩৫টি পাখি গণনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে পিয়ং হাঁস(গ্যাডওয়াল) ৫ হাজার ৬৭৫টি ছিল।
এদিকে ৫টি উপজেলার অন্তর্গত দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা গ্রামের “পাখি বাড়িতে” শীত মৌসুমে এসব অতিথি পাখিরা উড়ে এসে বাসা বাঁধে। খাবারের তাগিদে বিশাল এই হাওরের অর্ধ্ব শতাধিক বিলে তারা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, খায় মাছ শিকার করে। আবার রাত যাপনে ফিরে আসে ওই পাখি বাড়িতে। বসন্ত আসতে আর কদিন বাকি। শীতের তীব্রতা দিন দিন নিস্তেজ হয়ে আসছে। এখন দিন দুপুরের তাপ-মাত্রা শীতের হিম ও কুয়াশার আস্ফালনকে তাড়িয়ে দিতে শুরু করছে। সেই সাথে সময়ও এসেছে এ জেলা থেকে অতিথি পাখিদের বিদায় নেবার। এই সময়ে এসব অতিথিদের দেখে জটপট ক্যামেরা বন্দি করছেন দর্শনার্থীরাও। সেই সাথে ভাবছেন এসব অতিথিদের চলে যাবার কথাও। মনেহয় পাখিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে ডানা মেলে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দেবার। তবে পাখি শিকারীদের কবলে পড়ে আহত অতিথি কিংবা মৃত পাখিরা সাথীদের সাথে ডানা মেলে আর যেতে পারবেনা নিজ দেশে!